বয়স পেরিয়েছে ৮০, রাজনৈতিক চক্রবুহ্যে আজও অস্থির তুষারকান্তি ভট্টাচার্য

সহেলী চক্রবর্তী

বয়স পেরিয়ে গেছে ৮০। তাও রাজনীতিতে এখন অবধি দিশাহীন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার কান্তি ভট্টাচার্য। যদি প্রশ্ন করা হয় এই মুহূর্তে তিনি কোন রাজনৈতিক দলে রয়েছেন? বিজেপি নাকি তৃণমূল? এ প্রশ্নের উত্তর বেশ কঠিন।

তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা সভাপতির হাত ধরে শুক্রবার(২৮ আগস্ট) ফের যোগ দিলেন তৃণমূলে। কিন্তু কতদিনের জন্য? এটা আমাদের প্রশ্ন নয়। জানতে চাইছেন বিষ্ণুপুরের আমজনতা, যাদের ভোটে তিনি আজ বিধায়ক পদে আসীন।

তুষার কান্তি ভট্টাচার্যকে নিয়ে ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুরে ক্রমশ পুঞ্জীভূত হয়েছে ক্ষোভ। তিনি কোন দলের এই মুহূর্তে বড় কথা নয়। বড় কথা এটাই করোনা এবং আম্ফান পরিস্থিতিতে তাঁর নীরব ভূমিকা হতবাক করে দিয়েছে মানুষকে।

একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষ তাঁকে নির্বাচিত করার পরেও তারা অবাঞ্ছিত রয়ে গেলেন। যা বড়ই বেদনার। তাঁর রাজনৈতিক সত্ত্বা রীতিমতো প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। যেখানে এই পক্বকেশ রাজনীতিবিদ আগামী দিনে যুব সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকার কথা সেখানে তাঁর রাজনৈতিক অস্থিরতায় জেরবার জেলার মানুষ।

২০১৬ সালে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী হিসাবে বিষ্ণুপুরের মাটি থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে বিধায়ক হন তুষার কান্তি ভট্টাচার্য। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মত পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগদান করেন। কারণ হিসেবে অবশ্য সেসময় তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি, আদর্শ এবং উন্নয়নকে।

২০১৭ এবং ২০১৮ এই দুই বছর তৃণমূলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই ফের পালটি খেয়ে যান তিনি। সকলকে চমকে দিয়ে সোজা দিল্লি গিয়ে মুকুল রায় ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে যোগদান করেন বিজেপিতে। তখন আবার তাঁর গলায় শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের স্তুতি।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে দলবদলের যে হিড়িক দেখা গিয়েছিল, তা এর আগে বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে ঘটেছে বলে মনে পড়ছে না। যদিও কথায় বলে politics is a possible industry.. । সেই দলবদলের জোয়ারে একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের এহেন আচরণ অবাক করেছিল গোটা রাজ্যের মানুষকে।

লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় পদ্ম ফোটার অন্যতম কারণ ছিল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। যদি বিষ্ণুপুরের কথাতেই আসি তাহলে খুব স্পষ্ট ভাষায় বললে বর্তমান বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রশাসক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখার্জির সঙ্গে তুষার কান্তি ভট্টাচার্যের বিবাদ সর্বজন বিদিত।

২০১৯ সালে তৃণমূলে যোগদানের পর থেকে একসঙ্গে কাজ করা তো দূরের কথা, তৃণমূলের কোন সভাতে শ্যাম মুখার্জী এবং তুষার কান্তি ভট্টাচার্যকে একসঙ্গে দেখা গেছে কিনা তাতে সংশয় প্রকাশ করেছেন দলেরই একাংশ।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৪২ এ ৪২ এর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ১৮ টি সিট পেয়ে বাংলায় পদ্ম চাষের জমি বাড়াতে নেমে পড়ে গেরুয়া বাহিনী।

সেই সুযোগে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারকে আরো প্রসারিত করার উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ছেড়ে সোজা দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে একঝাঁক বিজেপি নেতার উপস্থিতিতে পদ্ম হাতে তুলে নেন তুষার বাবু।

রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের বিপর্যয়ের পর একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসাবে তুষার বাবুর উচিৎ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা। তবে সেসব তোয়াক্কা না করে তিনি ব্যস্ত হলেন নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার সম্প্রসারণে। যা সত্যিই হতাশ করেছিল শাসকদলকেও।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/lakhimpur-kheri-accused-in-up-3-year-olds-rape-murder-arrested-after-encounter/

দলবদলের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে একাধিকবার নিরাপত্তা চেয়েও পাননি তিনি। চিঠি দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। তবে সুরাহা হয়নি। তাতেই অধৈর্য্য হয়ে পড়েন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’র মত বেশ কয়েক মাস বসে থাকার পর টনক নড়ে তুষার বাবুর। সমস্ত লজ্জা পরিত্যাগ করে পুনরায় তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

টেলিফোনে কথাও বলেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তুষার কান্তি ভট্টাচার্যের দলবদল মুখ্যমন্ত্রী যে মানতে পারেনি সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তুষার বাবুকে। তারপর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও কোনো সদর্থক উত্তর না পেয়ে তিনি অগত্যা শরণাপন্ন হন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ দাপুটে রাজনীতিবিদ ও রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

দলে ফেরার আর্জি জানিয়ে রাজীব বাবুর হাতে একটি চিঠি তুলে দেন তিনি। এসবের মাঝেই তলে তলে ফের জেলার বিজেপি নেতৃত্বদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন তিনি। কোন ঝান্ডা ধরবেন তা নিয়ে রীতিমত চিন্তায় পড়ে যান বর্ষীয়ান এই বিধায়ক।

ফের সুযোগ বুঝে দল বদলের জোয়ারে গা ভাসিয়ে ঘর ওয়াপসি হলেন তিনি। তবে দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কতটা হবে? বিষ্ণুপুরের আমজনতা কতটাই বা সমর্থন করবেন তাঁকে? তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।

সাধারণ মানুষের কথায় বিধায়ক তুষার কান্তি ভট্টাচার্য তাদের জন্য কিছুই করেননি। অভিযোগ তাঁর বাড়ির গোডাউন খুললে চক্ষু চড়কগাছ হবার জোগার। সেখানে পচছে ত্রিপল থেকে শুরু করে জামা কাপড় , আরও কত কী! অভিযোগ গোডাউনে থাকা জিনিসের একটিও কোনদিন সাধারণ মানুষকে দেননি তিনি।

বিষ্ণুপুরের সাধারণ মানুষদের আরও অভিযোগ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘদিন একটানা লকডাউনে একবারের জন্যও তাঁকে দেখা যায়নি। অভিযোগ আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের পর সহায় সম্বলহীন হয়েছিলেন অনেকেই। কাউকে একটা ত্রিপল দিয়ে মাথাটুকু ঢাকবার ব্যবস্থা পর্যন্ত করেননি তুষার বাবু।

এটাই কি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের ভূমিকা? বিষ্ণুপুরের মানুষের প্রশ্ন, সত্যিই কী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য সৈনিক তিনি?

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/left-to-use-social-media-to-strengthen-booth-based-organizations-and-reach-out-to-the-masses/

বিষ্ণুপুরের মাটি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। মল্ল রাজাদের ভূমি বিষ্ণুপুর, ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে বেশ উল্লেখযোগ্য। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বিষ্ণুপুরের ইতিহাসের হাতছানি গর্বান্বিত করে গোটা জেলার মানুষকে। সেই ঐতিহাসিক শহরে এমন রাজনৈতিক ডামাডোল কখনোই কাম্য নয়। তাঁকে দেখে কী শিক্ষা নেবে যুবসমাজ?

একুশের বিধানসভা নির্বাচন আর মাত্র কয়েক মাসের অপেক্ষা। তুষার কান্তি ভট্টাচার্য আদৌ টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক। যদিও বা টিকিট পান, তাহলে যে দলেরই হয়ে দাঁড়ান না কেন পরাজয় অনিবার্য। এর প্রথম কারণ গিরগিটির রংবদলের মত তুষার বাবুর দলবদল। আর দ্বিতীয় কারণ, তিনি শুধুই প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করেছেন যেখানে গৌণ থেকেছে আমজনতার কথা।

 

সম্পর্কিত পোস্ট