Uttar Pradesh Election 2022: মোদীর কৌশল ব্যর্থ ! উত্তরপ্রদেশে নয়া চাল যোগীর

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  প্রায় এক বছর ধরে চলা কৃষক বিক্ষোভের ফলে পাঞ্জাবে বিজেপির প্রায় কোনও অস্তিত্ব নেই। এরপরই তারা সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। হরিয়ানার মতো সেখানেও অসংখ্য নিচুতলার বিজেপি নেতা-কর্মী গ্রামছাড়া। ক্ষুব্ধ কৃষকদের ভয়ে আজ‌ও তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেননি।

লখিমপুর খেরির ঘটনা সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় মাসখানেক আগে গুরু নানকের জন্ম তিথিতে তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলাম মোদি।

পাঞ্জাবের কথা মাথায় রেখে ক্ষুব্ধ শিখ কৃষকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। পাশাপাশি ভেবেছিলেন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ- এর জাঠরা তাঁর এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট হবেন। তারা আবার আগের মতোই বিজেপির পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু এবার মোদি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।

বাস্তব পরিস্থিতি বলছে মোদির কৌশল একটুও কাজ করেনি। পাঞ্জাবে অমরিন্দর সিংয়ের ‘হাত’ ধরলেও তারা যে বিশেষ সাফল্য পাবে না তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সেইসঙ্গে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ- এর অবস্থারও বিশেষ উন্নতি ঘটেনি। যার জেরে যোগী সরকারের বিদায় নিশ্চিত বলে‌ই মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত দেখা যায় পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে আগে বুঝতে পারেন ভোট পাখিরা। গো-বলয়ের রাজনীতি মেনে উত্তরপ্রদেশ -এ ভোট পাখির সংখ্যা কম নয়। তাঁদের বেশিরভাগই পাঁচ বছর আগে সমাজবাদী পার্টি ও বহু জন সমাজবাদী পার্টি ছেড়ে বিজেপিতে ভিড়েছিলেন।

কিন্তু পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে গেরুয়া শিবিরের ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত পেতেই এক এক করে দল ছাড়তে শুরু করেছেন‌। এমনকি পুরনো বিজেপি নেতারাও একে একে দল ছাড়ছেন। এমনিতেই যোগী আমলে গত পাঁচ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশ এর সংখ্যালঘু ও দলিতরা প্রবল কষ্ট সহ্য করেছেন। তাঁরা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন আর যাই হোক বিজেপিকে ভোট দেবেন না।

এক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টির দিকেই পাল্লা সবচেয়ে বেশি ভাড়ি ছিল। এতদিন সপা সেভাবে দলিতদের ভোট পেত না। কিন্তু মায়াবতীর নিষ্ক্রিয়তার জেরে দলিত ভোটব্যাঙ্ক‌ও এবার অখিলেশের সপার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যদিও বছর দেড়েক আগেও উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কের জেরে বিজেপির ক্ষমতায় থেকে যাওয়া এক প্রকার নিশ্চিত ছিল।

Uttar Pradesh Elections 2022: অখিলেশকে সমর্থন মমতার , ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লখনউতে ভার্চুয়াল সফর তৃণমূল সুপ্রিমোর

উত্তরপ্রদেশ -এ নয়া চাল যোগীর

কিন্তু কেন্দ্রের তিন বিতর্কিত কৃষি আইন গোটা অবস্থাটাই বদলে দেয়। জাঠরা এমনিতে কট্টর হিন্দু হলেও বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের জেরে তারা বিজেপির ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ। এই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেই জাঠ কৃষকদের দল বলে পরিচিত রাষ্ট্রীয় লোক দল এবার সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তাছাড়া দেশের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ রাকেশ টিকায়েত এই কদিন আগেও স্পষ্ট জানিয়েছেন বিজেপিকে এবার একটিও ভোট নয়।

সবচেয়ে বড় কথা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সেভাবে প্রচার‌ও শুরু করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। কদিন আগেই এখানে অমিত শাহের জনসভা ফাঁকা মাঠে হয়েছে। ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও মানুষ আসেনি। এমনকি যোগী আদিত্যনাথ নিজে গিয়েও পরিস্থিতি বিশেষ‌ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় লোকদল-সমাজবাদী পার্টির জোট দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনের বিজেপি নেতাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

গ্রাউন্ড রিয়েলিটি সম্বন্ধে সচেতন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন এবারে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের প্রায় সব আসন আরএলডি-সপা জোটের দখলে চলে যাবে। এমনকি কংগ্রেস‌ও সেখানে কিছু আসনে জিততে পারে। বেশিরভাগ হেভিওয়েট বিজেপি নেতা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে পরাজিত হবেন বলেই আশঙ্কা।

তুলনায় পূর্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ফল ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে আসন সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনই পূর্ব উত্তরপ্রদেশ‌র ওবিসি নেতারা একে একে বিজেপি ছাড়তে শুরু করেছেন। যোগী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন হেভিওয়েট মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য ও দারা সিং চৌহান। তাঁরা দুজনেই পূর্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ওবিসি মুখ বলে পরিচিত ছিলেন।

এই দুই হেভিওয়েট নেতা দল ছেড়েই জানিয়েছেন ওবিসিরা বিজেপির মনোভাবে প্রবল ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় ওই দুই নেতাই সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপিতে বড়সড় ধস নামতে পারে এবং গোটাটাই নাকি অখিলেশ যাদব পরিকল্পনা করেই করছেন। কারণ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ইতিমধ্যেই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশে‌ও যাতে বিজেপি বিশেষ কিছু করতে না পারে তাই তাদের ভাঙার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যটিতে বিজেপি যদি ক্ষমতা হারায় তবে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের যে বিশেষ কিছু করার থাকবে না তা একরকম পরিষ্কার। পরিস্থিতি বলছে নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করার যে কৌশল নিয়েছিলেন তা মাঠে মারা গিয়েছে। বিজেপির কোনও লাভ হয়নি।

শোনা যাচ্ছে এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে হিন্দু ধর্মের পবিত্র তীর্থস্থান মথুরা থেকে ভোটে দাঁড়াতে পারেন যোগী আদিত্যনাথ। বিধান পরিষদের সদস্য যোগীকে সরাসরি বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করা হবে না বলেই আগে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৌশল বদল করার চিন্তাভাবনা করছে বিজেপি।

তবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সর্বত্র কৃষকরা যেভাবে বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ তাতে যোগীকে মথুরা থেকে প্রার্থী করে আদৌ লাভ হবে কিনা সেটাও বিজেপিকে ভাবাচ্ছে। অর্থাৎ মোদির ব্যর্থতার পর এখন যোগী‌ই একমাত্র ভরসা বিজেপির! দেখা যাক তিনি শেষ পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরকে বাঁচাতে পারেন কিনা।

সম্পর্কিত পোস্ট