দলের নাম ছাড়া বাজপেয়ি-আদবানির সব চিহ্ন বিজেপি থেকে মুছে দিতে চলেছেন মোদি-শাহ?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ লালকৃষ্ণ আদবানি বেঁচে থেকেই জীবন্ত ফসিলে পরিণত হয়েছেন। লৌহপুরুষের এই পরিণতি যে বিজেপির হাত ধরে হবে তা সত্যি একসময় অকল্পনীয় ছিল। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন অটলবিহারি বাজপেয়ি ও লালকৃষ্ণ আদবানি হাত ধরে বিজেপিতে যে রাজনৈতিক ঘরানা ছিল সেটাও সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

দলের নামটুকুই ভারতীয় জনতা পার্টি, বাদবাকি পুরনো সবকিছু বদলে ফেলছেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। এমনকি বাজপেয়ি-আদবানি জামানার মানুষগুলোকেও তাঁরা এবার ছেঁটে ফেলবেন বলে ঠিক করেছেন।

বিজেপির রাজনীতির সঙ্গে যাদের নিত্য ওঠাবসা, সেইরকম মানুষজন মনে করছেন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ি বা লালকৃষ্ণ আদবানির কোন‌ও চিহ্ন‌ই রাখতে রাজি নয় মোদি-শাহ জুটি।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দলের সংসদীয় বোর্ড থেকে নীতিন গডকরি ও শিবরাজ সিং চৌহানকে ছেঁটে ফেলেছে তারা। এবার এবার শুধু রাজনাথ সিংকে মন্ত্রিত্ব ও সংসদীয় বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা।

২০২৪ শেও বিজেপি যদি দেশের ক্ষমতা দখল করতে পারে, তবে সেই সরকারে বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের যে আর জায়গা হবে না সেটা একরকম পরিষ্কার। তারপর উত্তরপ্রদেশের এই ঠাকুর নেতাকে দলের সমস্ত রকম পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে বাণপ্রস্থে পাঠানো মোদি-শাহদের কাছে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

সেই পরিবারতন্ত্র! হেঁশেল থেকে বেরিয়ে এই রাজ্যের হাল ধরতে পারেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী

অটলবিহারি বাজপেয়ি এবং লালকৃষ্ণ আদবানি বিজেপিতে প্রাক্তন দলীয় সভাপতিদের সম্মান জানানোর এক অনন্যধারা প্রচলন করেছিলেন। বিজেপিতে বরাবরই নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংসদীয় কমিটিতে কর্মক্ষম সব প্রাক্তন সভাপতিদেরই এতদিন জায়গা দেওয়া হতো।

মহারাষ্ট্রের নীতিন গডকড়ি তেমনি দলের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি এমনিতেই মোদি মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের থেকে অনেক বেশি দক্ষ ও বিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেন। সেই তাঁকেই এবার দলের সংসদীয় বোর্ড থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

তিনি যেহেতু নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর মানুষ, তাই সামান্যতম বিরোধিতার সুযোগ মুছতেই এবং বাজপেয়ি-আদবানি জামানার থেকে নিজেদের উপরে তুলে ধরতে বিজেপির বর্তমান কর্ণধাররা এটা করেছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

একই কথা খাটে শিবরাজ সিং চৌহানের ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এক সময় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদির প্রবল প্রতিদ্বন্দী ছিলেন। তিনিও মোদি-শাহের ঘনিষ্ঠ নন। ফলে তাঁকে সংসদীয় কমিটি থেকে সরিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিল, বিদায় আসন্ন।

আগামী বছরের শেষের দিকে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। বিজেপি সে রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রাখলেও ‘মামা’ বলে পরিচিত শিবরাজের আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার নেই বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের মতে, বিজেপিতে বাজপেয়ি-আদবানি ঘনিষ্ঠদের আর কোন‌ও ভবিষ্যৎ নেই। হয় তাদের গোটা পরিস্থিতি চুপচাপ মুখ বুজে মেনে নিতে হবে, আর না হলে দল বদলাতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট