বিধানসভার প্রচারে ফ্রন্টফুটে ব্যাট করলেন অমিত শাহ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক : লোকসভায় ২ থেকে ১৮ হয়েছে। শেষ সময়ে বেশ কিছু কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা না করায় হাতছাড়া হয়েছে অনেক আসন। তাই দেরি করলে হবে না।

লকডাউন এবং করোনা আবহের মাঝেই ২১ এর বিধানসভা প্রচারে নেমে পড়ল বিজেপি। ভার্চুয়াল র‍্যালির মাধ্যমে প্রচারের ঘন্টা বাজালেন অমিত শাহ। রীতিমতো ফ্রন্টফুটে ব্যাট করলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন সভাপতি।

নিশানা দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে বাংলার ক্ষতিপূরণের হিসেব নিকেশ নিয়ে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা দেশের মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু একমাত্র মমতা বন্দোপাধ্যায় কোনও তালিকা না পাঠানোর কারণে বাংলার মানুষ তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

একইসঙ্গে কৃষকদের জন্য যে ছয় হাজার টাকা কেন্দ্র সরকার বরাদ্দ করেছে, তা রাজ্য সরকারের গাফিলতির কারণে কৃষকরা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অভিযোগ অমুলক নয়। রাজ্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অমিত শাহ বলেন, রাজ্য সরকার কেন কৃষকদের জন্য তালিকা পাঠাচ্ছে না? করোনা এবং আমফান ঘুর্নিঝড়ের মত বিপর্যয়ের পর প্রত্যেক কৃষকের ছয় হাজার টাকা ভীষণ জরুরি।  আজ যদি রাজ্য সরকার তালিকা পাঠায়, তাহলে কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা অতিদ্রুত কৃষকদের একাউন্টে চলে যাবে।

পাশাপাশি তিনি এও বলেন, বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে সব সরকারের উচিত এক হয়ে কাজ করা। এখন রাজনীতি করার সময় নয়। কিন্তু বিপদের সময়েও মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজনীতি করছেন।

লকডাউনের শুরু থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর দাবীতে সরব হয় বিরোধীরা। লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবীতে একাধিকবার রাজ্যের কাছে আর্জি জানানোর পর রাজ্য গ্রীন সিগন্যাল দেয়।

মঙ্গলবার ভার্চুয়াল র‍্যালির মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথাও তুলে ধরলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।

তিনি বলেন বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে। এখনও অবধি সব থেকে কম ট্রেন বাংলায় এসেছে। কিন্তু সেই ট্রেনকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন করোনা এক্সপ্রেস। একদিন এই করোনা এক্সপ্রেস মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জন্য এক্সিট এক্সপ্রেস হয়ে দাঁড়াবে।

পুর্বভারতে শিল্প না থাকায় এখানকার বেশীরভাগ মানুষ ভিন রাজ্যে কাজের জন্য পাড়ি দেন। মন কি বাতে এই বক্তব্য অকপটে স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিনের ভার্চুয়াল র‍্যালিতে সেই কথার কোনও উল্লেখ করলেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বরং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলুন এখনও অবধি কতগুলি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে? কি কি বিকাশ হয়েছে বাংলায় তার হিসেব দিন। যদিও কতজন মানুষ বোমাবাজির কারণে প্রাণ হারিয়েছেন তার হিসেব দেওয়ার দরকার নেই।

সম্প্রতি এনআরসি, সিএএ ইস্যুতে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। একই ইস্যুতে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কার্যত একহাত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিএএ পাশ হওয়ার পরেই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কি অবস্থা হয়েছিল আমরা দেখেছি। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য কি করলেন? নমশুদ্র সম্প্রদায়ের জন্য কি করলেন?

এর আগে আমরা লোকসভা নির্বাচনেও মতুয়া ভোট নিয়ে দুপক্ষের লড়াই দেখেছি। দেখেছি মতুয়া পরিবারের দুই সদস্য শান্তনু ঠাকুর এবং মমতা বালা ঠাকুরের রাজনৈতিক লড়াই। বাংলা দখলের জন্য মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট দুই রাজনৈতিক দলের জন্যই যে গুরুত্বপূর্ণ তা পরিষ্কার।

তাই শুরু থেকেই মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের দিকে নজর দিয়েই সিটিজেনশিপ এমেডমেন্ট এক্ট এর প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন অমিত শাহ।

তিনি বলেন, এতদিন ধরে এই মানুষগুলোকে ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করেছে কমিউনিস্ট এবং তৃণমূল সরকার।  নতুন আইনে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের অধিকার বুঝিয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

এদিনের অমিত ভার্চুয়াল র‍্যালির ভাষণে উঠে এল মোদি টু পয়েন্ট ও সরকারের একাধিক কারনামার কথা।

তিন তালাক থেকে শুরু করে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, রামমন্দির নির্মাণ এবং সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনের কথাও। নির্বাচন র‍্যালির পরবর্তী পর্যায়ে এই ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে বিজেপি প্রচার করবে সেটা এখন থেকেই পরিষ্কার।

কিন্তু তাতে কি বিজেপির পালে হাওয়া লাগবে? কারণ তিন বিধানসভার উপনির্বাচনে এই ইস্যুতেই একটাও আসন মেলেনি গেরুয়া শিবিরের।

এমনকি হাতছাড়া হয়েছে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খড়গপুর কেন্দ্রও। তবে তৃণমূলকে নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে ঘুটি সাজিয়েছে গেরুয়া দল।

সম্পর্কিত পোস্ট