অনুমোদন ছাড়াই মাটি কেটে পাচার করছিলেন TMC নেতা ! ডাম্পারে পদপিষ্ট গ্রামবাসী

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বালি, কয়লা থেকে শুরু করে মাটি কেটে পাচার।  বর্তমানে শাসক দলের (TMC) নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলি যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। দলের সুপ্রিমো (Mamata Banerjee) কড়া ভাষায় নেতৃত্বদের হুঁশিয়ারি, সাবধানবাণী শোনালেও আদতে তার বাস্তবায়ন যে কিছুই হয়নি তা প্রত্যেকটি পদে পদে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

পূর্ব বর্ধমানের (Purba Burdawan ) জামালপুরের জৌগ্রাম। পুকুরের মাটি কেটে পাচারের কাজ চলছিল। গুঞ্জন তৃণমূলের নেতারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। মাটি কেটে একটি ডাম্পারে ওভারলোড করে সেই মাটি পাচারের এর কাজ হচ্ছিল বলে অভিযোগ। আর সেই ডাম্পারের ধাক্কায় এক প্রৌঢ় এর মৃত্যু হয়। মৃতের নাম বরুণ রক্ষিত।

শনিবার সকালে এ ঘটনা জানাজানি হতেই জৌগ্রামের শীতলাতলা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ জৌগ্রামের জলেশ্বরতলা এলাকায় রয়েছে একটি প্রাচীন শিব মন্দির। শিব মন্দিরের কাছেই একটি বড় দেবত্তর পুকুর রয়েছে। বিগত কয়েকদিন যাবত জেসিবি মেশিন দিয়ে ওই পুকুরের মাটি তুলে ডাম্পারে লোড করে পাচার করা হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন তারা।

Bagtui Massacre : বগটুইয়ে তদন্ত চললেও প্রমাণ লোপাটের জেরে সমস্যায় CBI

তাদের আরও অভিযোগ, অজস্র মাটি বোঝাই ডাম্পার সারাদিন ধরে জৌগ্রামের বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত অরবিন্দ ভট্টাচার্য্য তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাও বটে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ অরবিন্দ ভট্টাচার্য্য, গ্রামের পঞ্চায়েত তৃণমূলের সদস্য মৃদুল কান্তি মন্ডল এবং এলাকার অপর এক তৃণমূল কর্মী আফজাল মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরের মাটি তুলে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এমনকি দু নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজের জন্য যে মাটি কেনা হচ্ছে তা, এই জলেশ্বরের মাটি বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।

এখানে উঠছে প্রশ্ন কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এই ধরনের কাজ করার সাহস পাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা?

অরবিন্দ বাবু অবশ্য জানিয়েছেন তিনি ছাড়াও তার পরিবারের আরও তিনজন জলেশ্বর শিব মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত। জৌগ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মৃদুল কান্তি মন্ডল এবং আফজল মোল্লার সঙ্গে সকল সেবায়েতের একটি রফা চুক্তি হয়েছিল। তাতে তিনি অবশ্যও সই করেছিলেন।

কিসের চুক্তি ছিল সেটি?

চুক্তি অনুযায়ী স্থির করা হয়েছিল, পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে দিয়ে বাকি পুকুরের মাটি ওরা বিক্রি করবে। কত টাকায় রফা চুক্তি হয়েছিল সেটি সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনভাবেই প্রকাশ করেননি অরিন্দম বাবু। কিন্তু মাটি বিক্রি করতে গেলে ভূমি দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। সেই অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি তৃণমূলের বাকি দুই সদস্যের দেখে নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভূমি দপ্তরের অনুমোদন ছিল কিনা সে বিষয়ে কার্যত অন্ধকারেই রয়েছেন অরবিন্দ ভট্টাচার্য।

অন্যদিকে পঞ্চায়েত সদস্য মৃদুল কান্তি মন্ডল গোটা ঘটনাটি স্বীকার করে নিয়েছেন। একইসঙ্গে জানিয়েছেন এই মাটি বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমি দপ্তরের কোনো অনুমোদন তারা নেননি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই ধরনের অনৈতিক কাজ করার সাহস পেলেন তারা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা।

বিরোধীদরে দাবি, বালি, কয়লা থেকে শুরু করে মাটি ও পাথর পাচার কোনটাই বাদ যাচ্ছেনা শাসকদলের আমলে। সেই তালিকা ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে প্রকাশ্য দিবালোকে ওভারলোড করে ডাম্পারের পাচার করা হচ্ছে বালি-কয়লা-পাথর-মাটি। অথচ এই ধরনের ঘটনা গুলির সঙ্গে ওয়াকিবহাল থাকেন স্থানীয় প্রশাসনও। সব জেনেও নীরবে থেকে যান তারা। যার মাশুল দিতে হয় নিরীহ আমজনতাকে।

মুখ্যমন্ত্রীর হম্বিতম্বিই সার। সতর্কবার্তা কার্যত ধুলোয় গড়াগড়ি। প্রকাশ্য দিবালোকে একের পর এক অন্যায় করে চলেছেন শাসকদলের নিচু স্তরের নেতারা। আদৌ কি মুখ্যমন্ত্রী এর কোনো সুরাহা করতে পারবেন? নাকি শেষ পর্যন্ত বীতশ্রদ্ধ জনগণ গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সরকারকে সমূলে উৎখাত করবে? আপাতত এই দুই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে দুর্নীতির আনাচে-কানাচে।

সম্পর্কিত পোস্ট