ভোট বড় বালাই, জ্বলে-পুড়ে খাক হোক সব …..
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দিন দশেকের মধ্যে গোটা দেশ পরপর দুটো ঘটনার সাক্ষী থাকল। আর তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল সরকারি সম্পত্তির। বেসরকারি বাস, গাড়ি বা দোকানপাটের ততটাও ক্ষতি হয়নি। যেন সব আক্রোশ রাষ্ট্রের প্রতি। কিন্তু সত্যি কি তাই?
প্রথম ঘটনায় ধর্মীয় বিভাজনের ছবি স্পষ্ট ছিল। ভারতের মতো স্পর্শকাতর দেশে প্রকাশ্যে নবী হজরত মহম্মদের উদ্দেশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করে ঘটনার সূত্রপাত ঘটান বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। প্রথমে বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে তারা তড়িঘড়ি নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করে। যদিও তাতে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
সরকার যদি আইন মেনে নূপুর শর্মাকে গ্রেফতার করত বা সেই উদ্যোগ নিত তবে হয়ত পরিস্থিতি এতটাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না। তবে নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে অনেক জায়গাতেই তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। এই বাংলাতেই পরিস্থিতির সবচেয়ে ঘোরালো হয়ে ওঠে। পরপর তিনদিন দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ হয়ে থাকে জাতীয় সড়ক।
আশ্চর্যজনকভাবে প্রশাসন এই পরিস্থিতি সামলানোর কোনও চেষ্টা করেনি। সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি রাজ্যের বিষয়। কিন্তু প্রথমদিন দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকলেও পুলিশ ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। কেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু সময় পর জাতীয় সড়ক অবরোধ মুক্ত করার চেষ্টা হয়নি তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
অগ্নিপথে বিপদ কোথায়? দেশ উত্তালের কারণ জানুন
এবার কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় সারা দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতেও সেই একই ধরনের প্রশ্ন উঠছে। বাংলায় বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ, পথ অবরোধ হলেও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেখা যায়নি। বরং সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি বিহারের। রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাতেও বিক্ষোভকারীরা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
বিহারে বহু বাস-গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছে প্রতিবাদীরা। সেখানেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা না করার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ বিহার সরকারের শরিক দল বিজেপির পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জেডি(ইউ)-এর প্রত্যক্ষ মদত আছে এই হিংসাত্মক বিক্ষোভের পিছনে।
এখানেই প্রশ্ন তবে কী ভোটের স্বার্থে এভাবেই বিভিন্ন রাজ্যের শাসক দল জাতীয় সম্পত্তি নষ্ট মুখ বুজে মেনে নেবে, আর তাদের পরিচালিত সরকার শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলবে?
সেইসঙ্গে আরেকটা প্রশ্ন উঠছে, বিক্ষোভকারীরা কেন বারবার জাতীয় সম্পত্তি মানে ট্রেন, সরকারি বাস, অফিস-আদালতকে টার্গেট করছে? আসলে নূপুর শর্মার ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রের শাসকদলের সদস্য হওয়ায় ক্ষোভ কেন্দ্র বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু ভারতীয় সেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মানে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতার বিষয়টি গোড়া থেকেই সরকারবিরোধী। ঘটনাচক্রে দুটি ক্ষেত্রেই সেভাবে কোনও নেতৃত্ব ছিল না।
যদি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আন্দোলন হত তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত না। কারণ নেতৃত্ববিহীন আন্দোলন সবসময়ই বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। ইতিহাস এর সাক্ষী। ঠিক যেমনটা কৃষি আইনের প্রতিবাদে দেখা গিয়েছিল।
প্রথম পর্যায়ে সেভাবে সংঘটিত নেতৃত্ব না থাকায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে। তারপরই সংযুক্ত কিষান মোর্চা গোটা আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ায় অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সেই আন্দোলন চলছে।
যে সমস্ত রাজনৈতিক দল বা পক্ষ যুবসমাজকে রাজনীতি মুক্ত করতে চায় তাদের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।