কোন দেশের গোপন ডেরায় জীবন সিংহ ? নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা

৫টি দেশের সরকার জানে ভয়ঙ্ককর লোকটার নাম

দ্য কোয়ারি ডেস্ক: বারবার হুমকি, পৃথক কামতাপুর রাজ্য তৈরির জন্য রক্তাক্ত পথ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএলও (KLO) প্রধান জীবন সিংহের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলা চালাবে রাজ্য সরকার। কিন্তু কোথায় মোস্ট ওয়ান্টেড বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা? সঠিক কোনও খবর নেই।

ভারত, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশের কোনও না কোনও স্থানে আত্মগোপন করে আছে এই জঙ্গি নেতা। অন্তত গোয়েন্দা বিভাগ তেমনই আন্দাজ করছে। তবে যেভাবে ভিডিও দিয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে জীবন সিংহ তা চমকপ্রদ। মুখ ঢেকে নয়, খোলা মুখে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরির হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা।

বিধানসভা ফলাফল ঘোষণার পরেই গোপন ডেরা থেকে মুখ না ঢেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে আলোড়ন ফেলে দেয় জীবন সিংহ। পরপর কয়েকটি বার্তায় উদ্বিগ্ন বোধ করে স্বরাষ্ট্র দফতর। নবান্নে বসে বিশেষ বৈঠক।

নব্বই দশক থেকে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র পথ নিয়েছে কেএলও। তখন ভরা বাম জমানা। এখনও পর্যন্ত কেএলও সর্ববৃহৎ হামলা চালিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে ২০০২ সালের ১৭ আগস্ট। সেদিন সিপিআইএম কার্যালয়ে ঢুকে ৫ জনকে গুলি করে খুন করা হয়। সবটাই হয়েছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন সুপ্রিমো জীবন সিংহের নির্দেশে।আরও কয়েকটি ছোটখাটো হামলা ঘটালেও কেএলও নাশকতার খতিয়ানে ধূপগুড়ি হামলা সর্বাধিক আলোচিত।

পরবর্তী সময়টি ছিল ভারত বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ভুটান সরকারের অপরাশেন অলক্লিয়ার অভিযান। ২০০৩ সালে এই সামরিক অভিযানে কেএলও সহ সাতটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভুটান সরকার। আত্মগোপনে চলে যায় জীবন সিংহ।

আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের বাসিন্দা তামির দাস ওরফে জীবন সিংহ সেই থেকে অধরা। যদিও ধূপগুড়ি হামলায় কেএলও শীর্ষস্থানীয় নেতা টম অধিকারী সহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, ষড়যন্ত্র সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়। বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারে আমলেই ধূপগুড়ি গণহত্যা মামলায় টম অধিকারী ও বাকিরা বেকসুর খালাস পায়।

কেএলও কেন হঠাৎ সক্রিয়?এখনও মনে করা হচ্ছে, বিজেপির ছোট রাজ্য গঠনের তত্ত্বকে সামনে রেখে ফের চাঙ্গা হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতা বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের দাবিতে মন্তব্য করেন। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও পূর্বতন বাম সরকারের প্রধান শরিক সিপিআইএমের অভিযোগ, বিজেপি রাজ্য ভাগের পরিকল্পনা করছে। এই বিতর্কের মাঝে কেএলও কে সমঝে দিতে সরাসরি পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বিরুদ্ধে ইউএপিএ (UAPA) আইনে মামলা রুজু করা হলো।

কিন্তু জীবন সিংহ অধরা। ২০১৭ সালে নেপাল থেকে শিলিগুড়িতে আচমকা এসেছিল জীবন সিংহের স্ত্রী ভারতী দাসের অচৈতন্য দেহ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স। চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে জানান। সেই ঘটনায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়েছিল আলোড়ন। প্রশ্ন ছড়ায়, আসে পাশে কোথাও ছায়ার মতো অদৃশ্য হয়ে রয়েছে জীবন সিংহ? ভিডিও বার্তা বিশ্লেষণ করে সূত্র খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

সম্পর্কিত পোস্ট