রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেতে মরিয়া সবপক্ষ, প্রদীপের নীচে অন্ধকারেই থেকে যান আমজনতা
সহেলী চক্রবর্তী
যখনই কোনো রাজ্য বা দেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসে তখনই সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগীতা। যেন তেন প্রকারেণ তারা এটাই প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন যে বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের উন্নতিসাধনে ব্যর্থ।
তারা কোনো জনগণের মঙ্গলজনক কাজ করেননি। উল্টে ক্ষতি করেছে। তবে এগুলি ক্রমাগত আমজনতাকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারর পাশাপাশি নিজেদেরকে জনগণের সমস্ত মঙ্গল করার কাজে সঁপে দেওয়ার মত অঙ্গীকারও তারা করে যান।
ভোট আসে। ভোট যায়। কালের নিয়মে হয়ত বদলে যায় সরকার। বা পুরোনো সরকারই ফের ক্ষমতাসীন থাকে। তারপর কী জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তারা রাখেন? প্রশ্নটা শাসকের চেয়ারে থাকা সরকার সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছেই।
৩৪ বছরের বাম সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড় তুলেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সু্প্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লাল আবিরের বদলে সেবার বাংলার মসনদ রাঙিয়ে ছিল সবুজ আবিরে। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বাংলার মানুষ ভেবেছিলেন নতুন করে বামেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে নতুন করে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বা চাহিদা পূরণ করবে নতুন সরকার।
প্রথম ৫ বছরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিরোধীরা। ২০১৬ সালে পরিবর্তনের বাংলার ডাক এল। বিজেপির ঘাঁটি ততদিনে বাংলার ৫ বছরে শক্ত না হলেও বাম-কংগ্রেস জোট করে ফের ক্ষমতায় আসার দুর্নিবার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। ভেঙে যায় জোট। পুনরায় জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতাসীন হল তৃণমূল।
তৃণমূল ভবনে সেলেবদের পাঠশালা, রাজনীতির পাঠ নিলেন রাজ-শ্রীতমারা
কেটে গেল আরও ৫ বছর। রাস্তাঘাট-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পরিবহন-কর্মসংস্থান-শিল্প সবক্ষেত্রেই সরকারের ভূমিকা দূরবীন দিয়ে খুঁজতে চেষ্টা শুরু করলেন বাংলার মানুষ। উঠে এল ত্রুটি-বিচ্যুতি। দিকে দিকে দুর্নীতি। কাটমানি থেকে শুরু করে জনগণের প্রাপ্য থেকেও ক্ষমতায় থাকা সরকারের কিছু মুষ্টিমেয় নেতা চুরি ধরা পড়ল।বালি পাচার, কয়লা পাচার, চিটফান্ড কেলেঙ্কারীর মত ঘটনারও সাক্ষী থেকেছে বাংলার মানুষ।
১০ বছর পর রাজ্যের কোনো সাধারণ মানুষ যদি সরকারকে প্রশ্ন করে আমি কে পেলাম? সেটা কী খুব অন্যায় হবে? বোধহয় না। আসলে সরকার পরিবর্তন হলেও মধ্যবিত্ত সারাজীবনেও মধ্যবিত্তের তকমা সরাতে পারে না। একইভাবে উচ্চবিত্তদের কপাল খোলে। আর নিম্নবিত্তদের কথা বাদই দিলাম।
২০২১ সালে রাজ্যজুড়ে পরিবর্তনের ঝড় উঠেছে। ফের পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটাতে চাইছেন বিরোধীরা। দিকে দিকে স্লোগান খেলা হবে। প্রশ্ন এখানেই। কিসের খেলা? কিসের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা? আসলে নতুন সরকার এলে এরাজ্যের মানুষ কী আগের থেকে ভাল থাকবেন?
কথায় আছে, ‘নদীর এপার বলে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস’। হয়ত পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটি মানুষের মধ্যে এই প্রবাদটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরমুহুর্তেই মনে পড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম গগনচুম্বী। জ্বালানী তেলের দামে গনগনে আঁচ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।
ঘাস দোষ দিচ্ছে পদ্মকে। পদ্ম আবার ঘাসকে। ওদিকে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা-হাতে পিষছে ঘাস, পদ্ম দুটোকেই। কোথায় যাবে রাজ্যের মানুষ? কার কাছে গিয়ে পাবে নিজেদের অধিকারের ন্যায্য মর্যাদা। আজ গণতন্ত্র করে যেসব রাজনৈতিক দল গলা ফাটাচ্ছেন ক্ষমতায় এলেই তারাই পিঠ দেখিয়ে দেন। অন্তত ইতিহাস তার সাক্ষী আছে।
West Bengal Assembly Election 2021ঃ ব্রিগেডে মোদি, উত্তরবঙ্গে মমতা, ক্রমশ বাড়ছে নির্বাচনী পারদ
তাহলে কীসের ভোট? কেন ভোট দেবেন আমজনতা? রাজনৈতিক দলের ফায়দা করে দিতে নাকি আজ যে রাজনীতি বিদ লাখ টাকার মালিক পরবর্তী পাঁচ বছরের কোটি টাকার মালিক হতে পারে?
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন মানেই রক্তক্ষরণ। রাজায় রাজায় যুদ্ধ করবে আর উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে। বছরের পর বছর এক জিনিস। নীতি আদর্শ ত্যাগ করে বাঁদরের মত একবার এই দল তো একবার ওই দল চলছেই। মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের বদলে এখন ধর্মকে বোড়ে বানিয়ে রাজনীতি হয়। আসলে কী এই বাংলার স্বপ্নই আমরা দেখেছিলাম?
কথায় কথায় রাজনীতিবিদরা টেনে আনছেন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-বঙ্কিমচন্দ্র-বিদ্যাসাগর-বিবেকানন্দকে। তাদের দেখানো পথে কতটা চলতে পেরেছেন তাঁরা? রাজ্যের মানুষকে আদর্শ বোঝনোর আগে এই প্রশ্ন তাঁরা করুন নিজেদের বিবেকের কাছে। মানুষের সবথেকে বড় বিচারক তাঁর বিবেক। হয়ত সেই বিবেকই উপরিউক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে সম্মত হবে।