প্রেস্টিজ ফাইট নন্দীগ্রাম, গুরু-শিষ্য লড়াইয়ে জয়ী হবেন কে?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গের দেড় মাসের যুদ্ধ শেষের ফলাফল। ভোটগণনা কেন্দ্রের চারদিকে দিকে কড়া নিরাপত্তায় আচ্ছাদন। এবারের নির্বাচনে এপিসেন্টার নন্দীগ্রাম। একদা গুরু-শিষ্য সম্মুখ সমরে। জয়ী হবেন কে? তা নিয়ে ক্রমশ উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।
শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের পরে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন হয়ত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে তৃণমূল। কারন একটা বিপুল সংখ্যক দলীয় কর্মীদের সমর্থন এবং বিধায়কদের নিয়ে দল ত্যাগ করেছিলেন শুভেন্দু।
তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে প্রথম জনসভাতে যোগ দিয়েই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাল্টা মাননীয়াকে হাফ লাখ ভোটে হারিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেন শুভেন্দু অধিকারী। এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে তাতে পাল্লা ভারী হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিকেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নমিনেশন জমা দিন বিপুল পরিমাণ জনসমাগম আমরা সরাসরি তুলে ধরেছিলাম। সরগরম হয়ে ওঠে বঙ্গ রাজনীতি। একাধিক নতুন নতুন বিশেষণে ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে ওঠে নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক চরিত্র। কারণ রেয়াপাড়া থেকে সেদিনই আহত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরে আসেন কলকাতা। সে ইতিহাস সকলেরই জানা।
শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগ মেনে নিতে পারেননি মেদিনীপুরের বৃহৎ অংশের আমজনতা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একদা অবিভক্ত মেদিনীপুরে রাজত্ব চালিয়ে গেছে অধিকারী পরিবার। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারে পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব। সংগঠনের ক্ষেত্রেও বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা শাসক শিবিরের বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ছেলের বিরোধিতা না করতে পেরে এবং দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারীও।
২০২০ সালের শেষ থেকে শুরু করে পয়লা মে ২০২১ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনে আপাতত দাঁড়ি পড়বে আগামীকাল ১৭ রাউন্ড গণনার পর।
ভোট-পরবর্তী কোনরকম অশান্তি যাতে না হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আগে থেকেই ১৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে। থাকছে রাজ্য পুলিশ। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম এলাকাতেই থাকছে ১ কোম্পানি বাহিনী।
আংশিক লকডাউন মানাতে তৎপর পুলিশ, সকাল থেকে বিভিন্ন বাজারে চলল কড়া নজরদারি
জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে জেলার পুলিশ সুপার বিভিন্ন থানার আইসি এবং ওসিদের ফল প্রকাশের পর হিংসা শক্ত হাতে মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। নজরে থাকছে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি খেঁজুরি এগরা, কাঁথি।
এবারের নির্বাচনে নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, এর আগে কোন বিধানসভা নির্বাচনে তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা। রেয়াপাড়া, ভাঙাবেড়া, বেড়াবেড়ি, সমস্ত এলাকায় চাপা উত্তেজনা। রাজনীতির আঙিনায় স্বজন হারানোর যন্ত্রনা নিয়ে সামিল করা হয়েছে শহীদ পরিবারগুলিকেও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলেকশন এজেন্ট শেখ সুফিয়ান জানিয়েছেন, মানুষ মীরজাফরের পাশে নেই। কত বেশি ভোটের শুভেন্দু অধিকারী হারবেন সেটা নিয়ে আপাতত ভাবনা চিন্তা করছি আমরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে নন্দীগ্রাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী দুজনের কাছেই প্রেস্টিজ ফাইট। কারণ এই নন্দীগ্রামই ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের অন্যতম কারণ ছিল। সেই নন্দীগ্রাম থেকেই এবারের নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে ফিরে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা নির্বাচন হুইলচেয়ারে বসেই প্রচার থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ সেরেছেন তিনি।
বিগত ছয় মাস ধরে চলা বেনজির রাজনৈতিক লড়াইয়ের শেষ অধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। শুভেন্দু অধিকারী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না কেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, বজায় থাক শান্তি। কোনভাবেই যেন সম্প্রীতির বাতাবরণে প্রবেশ করতে না পারে হিংসা।
তাহলে এবারেও যে পরিবর্তনের ডাক উঠেছে তাতেও কি কান্ডারী হয়ে উঠবে নন্দীগ্রাম? প্রশ্ন থেকেই গেল।