মার খাচ্ছেন কর্মীরা, নিরাপত্তা বাড়ছে সাংসদদের – ক্ষোভে ফুঁসছে বিজেপির ‘সম্পদ’
সহেলী চক্রবর্তী
সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী এবং তার সেজ ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারীকে। আপাতত তারা ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এ ঘটনা সামনে আসতেই ফের নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
কারণ প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে তৃণমূলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন দিব্যেন্দু অধিকারি। তাহলে তিনি কি এবার অফিশিয়ালি বিজেপি নেতা হতে চলেছেন? যদিও অনেকেই এই জল্পনায় মন দিতে নারাজ। তাদের কথায়, এই বাজারে বিজেপি করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই জেলায় জেলায় রক্তক্ষরণ অব্যাহত। শাসক বনাম বিরোধী তরজায় বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর পরিদর্শন করেছেন নন্দীগ্রাম, শীতলকুচি সহ সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকা গুলি।
এখনো পর্যন্ত বহু বিজেপি কর্মী ঘর ছাড়া। তালিকায় রয়েছেন মহিলাকর্মীরাও। অথচ তাদের ঘরে ফেরানোর ব্যাপারে কার্যত নীরব থেকে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির অনেক নেতাই ঘরমুখী। এতদিন যারা কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ মুকুটমণিপুর থেকে মালদা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, পাত পেড়ে খেয়েছেন কোন নিম্নবিত্ত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে, আজ তারা কোথায়? এই প্রশ্ন তুলছেন স্বয়ং বিজেপি কর্মীরা।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’। এক্ষেত্রে বিষয়টা খানিকটা একই রকম। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লড়াই হয়েছে মমতা বনাম মোদির। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা বাছাই করে উঠতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব।ফলে এই ম্যাচে ভারতীয় জনতা পার্টিকে বলে বলে গোল দিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখোমুখি মমতা বনাম শুভেন্দু, বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন অর্জুনের প্রবেশ
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বিজেপির অন্দরের দূর্বলতা প্রকাশ হয়ে এসেছিল। জেলায় জেলায় বিরোধিতা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল থেকে বেনোজলেরা বিজেপিতে নাম লেখানোর ফলে,অনেক আদি কর্মী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও টিকিট পাননি। তাতেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন জেলার নেতৃত্বরা। আর তার প্রতিফলন ঘটেছে ভোটবাক্সে।
ফলাফল প্রকাশের পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। তবে ঘরছাড়া নেতাদের ঘরে ফেরাতে সেভাবে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি নেতৃত্বদের। তৃণমূল থেকে এসে যারা সদ্য বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন, হাইভোল্টেজ তকমা দিয়ে তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষা।
অথচ প্রাণপাত করে জেলায় জেলায় যে সমস্ত কর্মীরা ভারতীয় জনতা পার্টির বীজ বপন করেছেন তারাই থেকে গিয়েছেন ব্রাত্য। এই প্রশ্ন তুলেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তার কথায় তিনি মুখ দেখাতে পারছেন না কর্মীদের কাছে। প্রশ্ন এখানেই, কিন্তু কেন এরকম হবে? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তার তাঁর মন্ত্রীরা কাজ করে চলেছেন তা নিঃসন্দেহে জনমানসে প্রভাব তৈরি করবে। শুধু তাই নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাজনীতির রং ভুলে অনেক বিজেপি কর্মীদের কোভিড পরিস্থিতিতে সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন তৃণমূল কর্মীরা।
সেই সঙ্গে গোটা রাজ্যে অক্সিজেন নেই। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে টিকার অপ্রতুলতা। তৃণমূল-বিজেপি নয়, এই সমস্যায় প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছেন আমজনতা। সেখানে কোনো দিশাই দেখাতে পারছেন না কেন্দ্রীয় সরকার।
আর কেন্দ্রীয় সরকারের এই ব্যর্থতাই এ রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের টেনে নিয়ে যাবে তৃণমূলের দিকে। অচিরেই ভাঙ্গন ধরবে বিজেপির সংগঠনে। স্বাভাবিকভাবেই নিচুতলার কর্মীরা প্রশ্ন তুলবেন, “আর কতদিন এভাবে পড়ে পড়ে মার খাব?”
পোস্টমর্টেম সিঙ্গুরঃ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে জনগণের দাবি শিল্প চাই, চাই কর্মসংস্থান
এমনিতেই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেভাবে সিবিআই নারদ কান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, তাতে রয়েছে নিরপেক্ষতার অভাব। একথা বলছেন বিজেপির রাজ্য স্তরের অনেক শীর্ষ নেতাই। প্রশ্ন উঠছে, মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। ফলে পুরসভার নির্বাচনে বিজেপি আদৌ কোনো ছাপ ফেলতে পারে কিনা সে বিষয়ে বড়োসড়ো প্রশ্নচিহ্ন থেকেই গেল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, ভোট-পরবর্তী কভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ছিল রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করা। তারা তো তা করলেনই না, উল্টে দুই সাংসদের নিরাপত্তা আরো বাড়িয়ে দিলেন। তাহলে কেন উপেক্ষিত থাকবে কর্মীরা?
ভারতীয় জনতা পার্টির অনেক নেতাই বারবার দাবী করে এসেছেন কর্মীরাই তাদের সম্পদ। তাহলে সেই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সেই দলকেই নিতে হবে। একথা বোধহয় ভুলে গিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্বরা। যার মাশুল হারে হারে তাদের গুনতে হবে।