মোদি মেকিং থেকে চ্যাম্পিয়ন মমতা, মাস্টারমাইন্ড প্রশান্ত কিশোর

শুভজিত চক্রবর্তী

২০১৯ এর মোদি ক্যারিশমায় বাংলা থেকে ১৮ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। গলদঘর্ম অবস্থায় দলকে অক্সিজেন দিতে এবং ড্যামেজ কন্ট্রোলে নিযুক্ত করা হল নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাককে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ড্যামেজ কন্ট্রোল তো দুরে থাক, দলের মধ্যে বেশী করে ত্রুটি ধরা পড়তে লাগল।

যদিও রাজনীতির ভাষায় একে ত্রুটি বলা হলেও দলের মধ্যে বেশী করে ঘুন ধরতে শুরু করল। বহু বর্ষীয়ান নেতাই মনে করলেন এতদিন ধরে রাজনীতি করার পর এখন নতুন করে রাজনীতির পাঠ পড়াবে চ্যাংরা ছোখরাগুলো!

এই অজুহাতে একের পর এক নেতা ফুল বদল করতে শুরু করলেন। প্রথম সারীর যেসমস্ত নেতারা দল ছাড়লেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুকুল রায়ের পর তৃণমূলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছেন তিনিই।

তবে শুভেন্দুর মতো হেভিওয়েট নেতা একা দলবদল করলেন না। নিয়ে গেলেন বেশ কয়েকজন বিধায়ককেও। পরে পরে এই তালিকায় নাম এল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জটু লাহিড়ী, শীলভদ্র দত্ত থেকে শুরু করে একাধিক নেতারা। ২১ এর নির্বাচনে একা শুভেন্দু আর গোটা কয়েক ছাড়া আর কেউ জয়ের শিকে ছিঁড়তে পারলেন না।

অথচ নির্বাচনের আগে প্রচার করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুদ্ধির অবলুপ্তি ঘটায় ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে বুদ্ধি কিনছেন। ঘরের ঝামেলাকে উঠোনে এনে বাড়বাড়ন্ত করলেও অনেক তৃণমূল নেতার কথায় পিকে এসে গোটা দলের তুষ্টিকরণ হয়েছে। নাহলে বোঝা যেত না নৌকাতে বসেই ছেঁদা করছেন অনেকে।

এরই মধ্যে টিকিট প্রত্যাশী যারা ছিলেন তাঁরা আবার গোঁসা করে বসে রইলেন। বাসনের মধ্যে খুটখাট থাকলেও বিজেপির ঘরোয়া টোটকায় মাত ২১ নির্বাচনে মাত করলেন বিজেপিকেই। রাজনৈতিক মহলের ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে মমতার পাশাপাশি এই জয় প্রশান্ত কিশোরের। নিজের কাঁধ চাপড়ে এই ক্রেডিট নিজে নিচ্ছেন পিকে।

তৃণমূলের এই জয় জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য। কারণ পুর্ব ভারতে গেরুয়া হাওয়ার প্রবেশ এর আগে সেভাবে দেখা যায়নি। তবে ১৯ এর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাওয়া বইছিল তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

এরই মধ্যে কয়লা কান্ড, গরু পাচার, সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট থেকে শুরু একাধিক তাবড় নেতাদের নাম জড়াতে শুরু করল। কিন্তু বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য নিজেদের মতো প্রচারের রণনীতি সাজিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর।

আজ দুপুরে তৃণমূল ভবনে বিজয়ীদের নিয়ে বৈঠক করবেন মমতা, কভিড পরিস্থিতিতে বাতলে দিতে পারেন দলনেত্রী

কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক স্টাইলের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি ছিল আগে থেকেই। ২০১২ সালে গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হয়ে কাজ করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে জয়লাভের জন্য তাঁর অবদান বিরাট ছিল বলে মনে করা হয়।

২০১৫ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের হয়ে কাজ করেন এবং সফল হয়েছেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রধান্ত কিশোরের অবদান ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২০ সালে দিল্লিতে আপ সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও প্রশান্ত কিশোরকে ব্যবহার করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

২০২১ এ এনডিএকে পরাস্ত করা ডবল চ্যালেঞ্জ ছিল প্রশান্ত কিশোরের জন্য। ২০২১ তৃণমূলের পাশাপাশি তামিলনাড়ুতে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটকে ফেরানোর দায়িত্বভার ছিল তাঁর কাঁধে। রবিবার দুই রাজ্যের ফলাফল ঘোষণার পর স্থিত হল বিজেপি শিবিরে একাধিক চাণক্য থাকার পরেও প্রশান্ত কিশোরের কাছে টিকতে পারলেন না কেউই।

প্রশান্ত কিশোরের কথা অনুযায়ী, দুই রাজ্যের রাজনৈতিক পরিকাঠামো একেবারে আলাদা। তাই স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা সহজ ছিল না। তবে প্রশান্ত কিশোরের এই জয় একইসঙ্গে অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিকেও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের বিশেষ বার্তা দেয়।

সম্পর্কিত পোস্ট