বিজেপির ‘স্টাইলেই’ খেলছিলেন দিলীপ, তাঁকে ‘মাইনাস’ করলে বাংলায় আদৌ কিছু থাকবে!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় হামেশাই অভিযোগ করেন দিলীপ ঘোষের জন্য মধ্যবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত বাঙালি হিন্দুদের সমর্থন পায়নি বিজেপি। সম্প্রতি বিজেপির মধ্যে সেই দিলীপ ঘোষ বেশ কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। এতে তথাগত রায় নিশ্চয়ই খুশি হবেন। কিন্তু তাতে ভোটের রনাঙ্গনে বিজেপির আদৌ লাভ হবে তো?

এটা ঠিক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি মারব ধরব কাটব বা উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি পছন্দ করে না। তারা অনেক বেশি সুশাসন, কর্মসংস্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে জোর দেয়। সেখানে দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় কথা বলেন তাতে এই শ্রেণীর মনপাওয়া বিজেপির পক্ষের বেশ দুষ্কর। কারণ জাতপাতে দীর্ণ উত্তর ভারতে এই ফর্মুলা কাজ করলেও বাংলায় তা অচল।

একুশের বিধানসভা ভোটে উচ্চশিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত বাঙালির বিজেপির দিকে না আসার এটাও একটা বড় কারণ। কিন্তু দিলীপ ঘোষের ওই কথা বলার স্টাইল গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষকে অনেকটাই আকর্ষণ করে। কারণ সেখানে হয় আক্রমণ কর না হলে নিজে আক্রান্ত হবে, এই রাজনীতি চলে। তাছাড়া উপরতলার বাঙালি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললেও নিচুতলায় বহুদিন বিদ্বেষের বীজ বোনা হয়ে গিয়েছে। সেখানে দিলীপ ঘোষ রাই মূল আকর্ষণ।

উত্তর-পূর্ব ভারতকে ঘাঁটি করে দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতি বদলে দেওয়ার পথে অভিষেক

কার্যত দিলীপ ঘোষের মতো একজন মেঠো বাঙালি বিজেপি নেতাকে দেখে বিজেপির রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন অনেকে। তবে অমিত শাহর সাম্প্রতিক বাংলা সফরের পর দিলীপ ঘোষকে যেভাবে সাইডলাইনে পাঠিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে ফোকাসে নিয়ে আসা হয়েছে তাতে নিচুতলার ভোটব্যাঙ্ক ভোট হারানোর আশঙ্কায় ভুগছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য বিজেপির এক নেতা ঘরোয়া আলোচনা বলেছেন, “এবার আম ও ছালা দুই যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি কখনোই আমাদের জাতপাতের বিভাজনের রাজনীতি পছন্দ করবে না। তাই সেখানে দিলীপ ঘোষ আসুন বা সুকান্ত মজুমদার ফলাফল একই থেকে যাবে।

কিন্তু যে নিচুতলার মানুষ দিলীপদাকে দেখে দেখে আমাদের সমর্থন করেছিল তারাও এবার মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিরোধী পরিসর আমরাই সিপিএমের হাতে তুলে দিচ্ছি। ওরা লড়াই করতে পারেনি বলেই মানুষ আমাদের পাশে এসেছিল। কিন্তু দিলীপদাকে সাইডলাইনে পাঠিয়ে দল যে বার্তা দিতে চাইছে তা বুমেরাং হতে পারে”।

শুভেন্দু অধিকারীকে কেন্দ্র করে অমিত শাহরা হয়তো আশায় বুক বাঁধছেন। কিন্তু গ্রাউন্ড রিয়েলিটি হচ্ছে বিজেপি সমর্থকদের একটা বড় অংশ এখনও শুভেন্দুকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি। দলের মধ্যে ভাঙন, ঝামেলার পিছনে অনেকেই শুভেন্দুকেই দায়ী মনে করেন। তাদের ধারণা শুভেন্দু আসলে বিজেপিকে শেষ করতেই এসেছেন,। কাজ মিটে গেলে তিনি আবার তৃণমূলে ফিরে যাবেন!

ঘটনা হল দিলীপ ঘোষের হাত ধরেই বাংলায় প্রথমবারের জন্য ১৮ জন সাংসদ হয়েছিল বিজেপির। তাঁর কথা হয়ে উঠেছিল সাধারন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মুখের কথা। সেই তাঁকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না রাখার মাশুল ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে দিয়ে হতে পারে।

বাংলা থেকে তারা ২-৩ টের বেশি আসন পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেখানে দিলীপ ঘোষের মেঠো রাজনীতি না করলে তৃণমূলের দাপুটে বাহিনীর সামনে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে যেতে পারে বিজেপি।

সম্পর্কিত পোস্ট