সাংসদ-বিধায়ক সব বিজেপির, আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা ডাক পাবেন তো?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বামেদের সরিয়ে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসন পরিচালনায় একেবারে এক নতুন পদ্ধতি আমদানি করে। মহাকরণ বা নবান্ন থেকে নয়, নিয়মিত সময় অন্তর প্রতিটি জেলায় গিয়ে যাবতীয় কাজকর্ম, প্রকল্প, সুবিধা-অসুবিধার হিসেব নেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই প্রশাসনিক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট জেলার মন্ত্রীদের পাশাপাশি সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সচিবরা হাজির থাকেন।
সেই সঙ্গে ওই জেলার সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকেন। যখন যে জেলায় বৈঠক হয় সেই জেলার যারা বিভিন্ন সরকারি কমিশন বা বোর্ডের সদস্য থাকেন তাঁরাও এই প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থেকে নিজেদের মত তুলে ধরেন। এই অভিনব পথে বেশ কিছু ক্ষেত্রে জেলাস্তরে উন্নয়নমূলক কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে অভিযোগও কম নয়।
বামেরা যখন প্রধান বিরোধী দল ছিল, মানে ২০১১-২০১৬ পর্যন্ত তারা বারবার অভিযোগ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রশাসনিক বৈঠকেই সেই জেলায় থাকা তাদের সাংসদ ও বিধায়কদের ডাকা হচ্ছে না। এই দাবি মোটেও ভুল নয়। পরবর্তীকালে কংগ্রেস যখন প্রধান বিরোধী দল হল বা গত এক বছরে বিজেপি কারোরই সাংসদ-বিধায়কদের এই প্রশাসনিক বৈঠকে দেখা যায়নি।
যে সমস্ত বিধায়ক বা সাংসদ দল পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কেবলমাত্র তাঁদেরকেই দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, জেলা প্রশাসন আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও বিরোধী দলের সাংসদ-বিধায়করা কী ইচ্ছাকৃতভাবে বৈঠকে আসেন না? নাকি তাঁদের আমন্ত্রণই জানানো হয় না!
আমজনতার স্বার্থে এই তথ্য প্রশাসনের প্রকাশ্যে আনা উচিৎ। তবে বারবার বিজেপি অভিযোগ করছে তাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বৈঠকে হাজির হওয়ার কোনও চিঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসে পৌঁছয় না।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ মালদহ বাদে উত্তরবঙ্গের সবকটি আসনে জিতে যায় বিজেপি। এমনকি দক্ষিণ মালদহ আসনটিও জিতেছে কংগ্রেস। ফলে উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে এযাবতকালে লোকসভার কোনও সাংসদকে দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু এবার এক বড়সড় বিপত্তি ঘটতে চলেছে আলিপুরদুয়ার জেলায়। সোমবার তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছেন। এই পর্যায়ে তিনি আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন।
কিন্তু আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ জন বার্লা বিজেপির। ওই জেলার পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের সবকটিই বিজেপির দখলে। তাঁদের মধ্যে কেউ এখনও পর্যন্ত দল পরিবর্তন করেননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কী আলিপুরদুয়ারে সাংসদ-বিধায়কদের ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক হবে? বিজেপির পক্ষ থেকে কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে তাদের আলিপুরদুয়ারের কোনও জনপ্রতিনিধিকেই আমন্ত্রণ জানায়নি জেলা প্রশাসন।
এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। প্রশাসন আদপে কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। তাছাড়া উন্নয়নের কাজ করতে হলে বিরোধীদের নিয়ে পথ চলা উচিৎ সরকারের। বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারের মতো জেলায় যেখানে বিরোধীরা প্রবল শক্তিশালী সেখানে তাদের জনপ্রতিনিধিদের যদি মতামত না নেওয়া হয় তবে উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হতে বাধ্য।
এছাড়াও আরেকটি বিষয় নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলছেন বিজেপি সাংসদ-বিধায়করা। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নকে তাঁরা যেমন হাতিয়ার করছেন, তেমনই তাঁদেরকে প্রান্তিক করে দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির এই জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিয়ে মূলস্রোতে কাজ করতে দেওয়াটা এক জরুরি পদক্ষেপ হতে পারত।
পুরনো তে অনাস্থা ? বিপুল সাফল্য সত্বেও তৃণমূলের দল ভাঙানো নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন
কারণ ক্রমাগত প্রশাসনিক বৈঠকে ডাক না পাওয়া, এলাকার উন্নয়নের কাজে তাদের ভাবনাচিন্তাকে বাস্তবায়িত করতে না দেওয়া, নিজেদের সাংসদ এবং বিধায়ক তহবিলের অর্থ প্রশাসনিক বাধায় পর্যাপ্ত খরচ করতে না পারায় বিজেপির এই সাংসদ-বিধায়করা আরও বেশি করে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। যা তাঁদের বিচ্ছিন্নতার ভাবনাকে জল-বাতাসা দিয়ে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই তাঁরা আরও বেশী করে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের এগিয়ে এসে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ, আরও সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই। এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রীর এবারের উত্তরবঙ্গ সফরে শেষ পর্যন্ত কী হয়।