৭ নতুন মন্ত্রীর আগমনের মাঝেই নিভল ৪ প্রদীপ, সরকারে জোর ঝাঁকুনি মমতার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বুধবার বিকেল ৪ টেয় রাজভবনে নতুন মন্ত্রী পদে শপথ নিলেন ৭ জন, পাশাপাশি আরও একজন প্রতিমন্ত্রী স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পদেও নতুন করে শপথ নেন। রাজ্যপাল লা গণেশন তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
নতুন যাঁরা মন্ত্রী হলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম নিঃসন্দেহে বাবুল সুপ্রিয় ওরফে সুপ্রিয় বড়াল। কিন্তু এরই মাঝে নিঃশব্দে চারজনকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে আছেন মেখলিগঞ্জের বিতর্কিত পরেশ অধিকারী।
এসএসসি দুর্নীতির জেরে পরেশের যে মন্ত্রীত্ব যাচ্ছে তা আমরা আগেই জানিয়েছিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রেওয়াত করেননি, তখন ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে আসা পরেশ কোন ছাড়। তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর জায়গায় এলেন নতুন মন্ত্রী হওয়া সত্যজিৎ বর্মন।
বাদ পড়লেন আরেক প্রতিমন্ত্রী তথা প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবির। ডেবরার বিধায়ক ২১ এর বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে পুলিশের চাকরি ছেড়ে তৃণমূলের প্রার্থী হন। প্রথমবার ভোটে জিতেই হয়েছিলেন কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী।
আবার প্লেয়িং ইলেভেনে দেখা যাবে বাবুল সুপ্রিয়কে
কিন্তু সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে এক যুবতীকে কারিগরি শিক্ষা দফতরে চাকরি করে দেওয়ার বদলে তাঁকে দিয়ে টিকে ঝির কাজ করাতেন কলকাতার বাড়িতে! যদিও হুমায়ুন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই অভিযোগের জেরেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দেওয়া হল রত্না দে নাগকে। এর পাশাপাশি সেচ ও জলপথ পরিবহন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকেও মন্ত্রীসভা থেকে সরানো হয়েছে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না।
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমায় দলকে গুছিয়ে নিতে সৌমেনের উপর ভরসা রাখছেন মমতা ও অভিষেক। তাঁকে জেলা সভাপতি রাখা হয়েছে। সেই কাজে সৌমেন মহাপাত্র যাতে পুরো সময় দিতে পারেন, তাই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় সেচ ও জলপথ পরিবহন মন্ত্রী হলেন নতুন মন্ত্রী হওয়া নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক।
এদিকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দফতরগুলি তিন মন্ত্রীর মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রী হয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই সঙ্গে তাঁকে পর্যটন দফতরও দেওয়া হয়েছে।পার্থর হাতে থাকা পরিষদীয় দফতর পেয়েছেন অভিজ্ঞ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। গুরুত্বপূর্ণ শিল্প দফতর দেওয়া হয়েছে শশী পাঁজাকে।
দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার প্রথম মন্ত্রী হয়েই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। একসময় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাতে থাকা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তার আগে বড় দায়িত্ব দেওয়া হল তাঁকে। পাশাপাশি প্রথম মন্ত্রী হয়েই গুরুত্বপূর্ণ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর পেয়েছেন দিনহাটার উদয়ন গুহ।
এদিকে মন্ত্রিসভায় প্রমোশন হল ঝাড়গ্রামের বীরবাহা হাঁসদার। ছিলেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী। এবার হলেন বন ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। নতুন সাত মন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও এদিন নতুন করে শপথ নেন।
এদিকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব কমল কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। তাঁর হাত থেকে আবাসন দফতর নিয়ে দেওয়া হয়েছে অরূপ বিশ্বাসকে। পরিবহন দফতরও হারিয়েছেন ফিরহাদ। তা দেওয়া হয়েছে নতুন মন্ত্রী হওয়া জাঙ্গিপাড়ার স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে। বর্তমানে রাজ্য মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পরই সবচেয়ে বেশি দফতর আছে অরূপ বিশ্বাসের হাতে।
এদিনের রদবদলের পর রাজ্য মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৪ জন। ১০ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। আর ৯ জন হলেন প্রতিমন্ত্রী। ফলে মোট মন্ত্রীর সংখ্যা ৪৩। নিয়ম অনুযায়ী ৪৪ জন মন্ত্রী হতে পারেন। ফলে চাইলে পরবর্তীতে আরও একজনকে মন্ত্রী করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।