সেলিমই কী অনুঘটক? পালাবদলের পরই যেন বদলে গেছে সিপিএম
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কমিউনিস্ট পার্টি, কিন্তু আন্দোলন নেই। মামুলি কিছু পোস্টার মারা, প্রেস কনফারেন্স করা আর রাজ্য পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমের কাছে গতে বাঁধা বিবৃতি পাঠিয়ে দেওয়া। মাস খানেক আগেও বঙ্গ সিপিএম মানে এটাই ছিল পরিচিত ছবি। যা নিয়ে নিচু তলার কর্মী সমর্থকরা তো বটেই, মাঝারি স্তরের নেতারাও আলিমুদ্দিনের উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন।
বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছিল না দিল্লির একেজি ভবনও। তারা বারবার সতর্ক করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। কিন্তু হঠাৎই যেন বদলে গিয়েছে সিপিএম। শীতঘুম ভেঙে সে যেন গা ঝারা দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আর তাতেই উজ্জীবিত দলীয় কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকরা। এই ভোলবদলের নেপথ্য কারণ কী?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা রাজ্য সিপিএমের প্রধান কাণ্ডারী হিসেবে মহম্মদ সেলিমের দায়িত্ব নেওয়াটাই ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। প্রাজ্ঞ, সুবক্তা এবং লড়াকু মেজাজের সেলিমের সঙ্গে প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহু তফাৎ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী সেলিম শুধু বিবৃতি দেওয়া নয়, সরাসরি ময়দানে নেমে কাজ করতে পছন্দ করেন। তিনি রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে আলিমুদ্দিনের অফিসে থাকছেন কম, অনেক বেশি আক্রান্ত কর্মীর সমর্থকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। সম্প্রতি রাজ্যের যে ক’টি বড় ঘটনা ঘটেছে সবকটিতেই ঘটনাস্থলে তিনি নিজে গিয়ে হাজির হয়েছেন।
পৃথার চুল মুঠো করে ধরে পুলিশ! ছবি দেখে ব্যাপক উত্তেজিত বাম শিবির
বগটুই গণহত্যার পর সেলিম বুঝেছিলেন ভালোভাবে তাঁকে এলাকায় ঢুকতে দেবে না পুলিশ। তাই কার্যাত গেরিলা কায়দায় সাতসকালে ঘুর পথে ধান জমির উপর দিয়ে কখনও হেঁটে, কখন বাইকে চড়ে বগটুইয়ের প্রাণ কেন্দ্রে পৌঁছে যান। যা দেখে কার্যত থ হয়ে গিয়েছিল রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন।
বুধবার বর্ধমান শহরে জেলাশাসকের কার্যালয় অভিযান কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএম। তবে এ কর্মসূচি অতীতের আর পাঁচটার নামকেওয়াস্তে মিছিল ছিল না। গোড়া থেকেই শাসকদলের দুর্নীতি ও পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অগ্রাসী মেজাজে ছিলেন দলীয় কর্মী সমর্থকরা। বর্ধমান শহরেরই বড়নীলপুরে মিছিল শুরুর আগে বক্তব্য রাখার সময় এই অগ্রাসী মেজাজের টিউনিং করে দিয়েছিলেন খোদ মহম্মদ সেলিমই।
সেদিন কার্জন গেটের কাছে পুলিশ যখন নির্বিচারে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করছে, তখনও সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেলিমকে অটলভাবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই উৎসাহ পেয়েছিলেন কর্মী সমর্থকরা। যারা কেউ ময়দান ছেড়ে চলে যাননি। তাই একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে সফল হয়েছিল সিপিএম।
ইতিমধ্যেই সেলিমের এই দাপুটে নেতৃত্ব দেখে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলতে শুরু করেছে তৃণমূলের একাংশ। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সম্পাদকের এই ভূমিকায় খুশি বাম কর্মী সমর্থকরা। সিপিএমের রাজ্য স্তরের বেশিরভাগ নেতারাই চাইছেন আরও আক্রমণাত্মক হন সেলিম।
তিনি রাজ্য কমিটি ও সম্পাদক মণ্ডলীর বাকি নেতাদেরও একই রকমভাবে রাস্তায় নামতে বাধ্য করুন। এবার আর আবেদন নিবেদন নয়, চোখে চোখ রেখে পাল্টা দেওয়ার রাস্তায় হাঁটতে হবে, এটাই সিপিএমের মনোভাব। আর এই উজ্জীবিত মনোভাব তৈরীর কাণ্ডারী নিঃসন্দেহে সেলিম।