শিয়রে করোনার অশনি সঙ্কেত, দুর্গাপূজোর আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি- মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি চিকিৎসকদের
আসন্ন শারদোৎসব উপলক্ষ্যে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে আমাদের কিছু বিনম্র দাবী রয়েছে। সেই জন্যেই আপনাকে এই খোলা চিঠি।
একথা সকলেই জানি যে দুর্গা পূজা বাঙ্গালীর সব চেয়ে বড় উৎসব। বাংলার বুকে দুর্গাপূজা এক সুবৃহৎ আনন্দযজ্ঞ, বাঙ্গালীর ভেতর ও বাইরে রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ আলাদা, সেই বিষয়ে আপনি আমাদের থেকে অনেক বেশি অবগত।
কোভিড-১৯ সারা পৃথিবীতে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, আমাদের রাজ্যও তার থেকে মুক্ত নয়। রাজ্য প্রশাসন এবং ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এবং মৃত মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনসংখ্যার একটা বৃহৎ অংশ কোনো শারীরিক দূরত্ব বা মাস্ক সংক্রান্ত বিধিনিষেধ না মেনেই আগাম উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধিনিষেধহীন উৎসব উদযাপিত হয়, তাহলে পূজোর অব্যবহিত পরেই করোনা রোগীর সংখ্যার প্রবল বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেই হাসপাতাল গুলি প্রায় ভর্তি এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রানের ঝুঁকি নিয়ে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করছেন।
এরপর যদি ব্যাপক হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হয়, তাহলে স্বাস্হ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের ৫০ জনের উপর ডাক্তার মারা গেছেন, এবং সারা দেশে এই সংখ্যাটা পাঁচ শতাধিক।
প্রত্যেকদিন অসংখ্য সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।আমরা চাইনা, আমাদের এবং আমাদের সহনাগরিকদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হোক।
আমাদের হাতের সামনেই উদাহরণ আছে, কেরালার। সেখানে ওনাম’ উদযাপনের পর করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি আমাদের রাজ্যেও মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পুজোর পর করোনা আক্রান্ত মানুষের উল্লেখযোগ্য সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল।
তাই আপনার কাছে এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে, আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে সনির্বন্ধ অনুরোধ, পূজো হোক, কিন্তু অন্যান্য বারের মত অপরিমিত উৎসব উদযাপন যেন না হয়। আমরা চাই, প্রশাসন সতর্ক করুক জনসাধারণকে, গণমাধ্যম গুলির মাধ্যমে। আমরা চাই, পূজা কমিটি এবং সাধারণ মানুষদের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা। আমরা চাই-
১) পূজা প্যান্ডেলগুলিতে যাতে জন সমাগম নিয়ন্ত্রিত এবং শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে হয়, তা নিশ্চিত করুন।
২) সবাই যাতে মাস্ক পরে তার দিকে নজর দেওয়া হোক, সরকারী বরাদ্দের টাকার এক অংশ পূজাকমিটিগুলি মাস্ক কেনার জন্য খরচ করুক। যাঁরা মাস্ক না পরে প্যান্ডেলে আসছেন, তাঁদের মাস্ক দেওয়া হোক।
৩) পূজা মন্ডপের প্রবেশ পথে হাত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকুক।
৪) পূজা উপলক্ষ্যে যেসব জলসা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, সেগুলি এবার বন্ধ থাকুক।
৫) পূজার সময় সব ব্যানার-ফেস্টুনে মাস্ক-এর ছবি থাকুক।
৬) যে পূজাগুলিতে পুরোহিত-সংগঠক-দর্শনার্থী সহ সবাই মাস্ক পরবেন, হাত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকবে, শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হবে, সেগুলিকে বিশেষ শারদ সম্মানে ভূষিত করা হোক।
৭) ই-পূজা, ই- রিচুয়াল, ভার্চু়্য়াল দর্শন করা যায় কিনা, প্রশাসন বিবেচনা করুক।
আপনার দিক থেকে সদর্থক ও ইতিবাচক পদক্ষেপের অপেক্ষায় রইলাম।
বিনীত