মাস তিনেকের মধ্যে দুইবার বন্যা পরিস্থিতি, কাতড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ
শুভজিৎ চক্রবর্তী
সময় এসে গেছে আবার। মাস দুয়েক আগের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের বন্যার সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগ, উদয়নারায়নপুর এলাকার মানুষের৷
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিলাবতী, রূপনারায়ন, দ্বারকেশ্বর, কেলেঘাই এবং দামোদরের জলে কবলিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম৷ গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কুপকাত হয়েছে চাষের জমি। এরপরেই বন্যার ধাক্কা দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে৷
যে সমস্ত এলাকাগুলি বন্যা কবলিত হয়েছে বা হবে তার মধ্যে অনেক গ্রামেই নেই সঠিক চিকিৎসার পরিষেবা৷ দুর্যোগের এই সময়ে চলাচলের একমাত্র পথগুলো ডুবে গেলে বাড়ে বিপদের আশঙ্কা।
গত ১০ বছরের বেশী সময় ধরে একের পর এক বন্যার সম্মুখীন হয়েছে এই সমস্ত এলাকার মানুষরা। এত সহজে “ম্যানমেড বন্যা” বলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷ ভোটের অঙ্কে চিড়ে, গুড় আর ত্রিপলের হিসেব তো বাদ দেওয়া গেল। কিন্তু এই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় তৎপরতা তখনই দেখা যায় যখন বিপদ সীমার ওপর দিয়ে জল বইছে৷
ভিটে মাটি টুকু বাঁচাতে সারা রাত বাঁধের ওপর অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে রয়েছে কিছু মানুষ। যে কোনও মুহুর্তে দানবের মতো ঘুরপাক গুলোকে বুজিয়ে না ফেলতে পারলে মহাবিপদ। এক সেকেন্ডে জলের তোড়ে ভেসে যেতে পারে সমস্ত কিছু৷ ভিটেহারা মানুষগুলোর সেই গোঙানি শহরের এলিট ক্লাসের কানে পৌঁছাতে পারে না৷
দিনের বেলা জলের স্রোতের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব হলেও রাতের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। থমথমে চারপাশে যতদুর শোনা যায় জলের গর্জন৷ পেটে মোচড় দিলেও নেই কোনও খাবারের সন্ধান। অতএব সকালে খাবার মজুতের কাজ। রাতে চলে লাল সতর্কতা৷ জল নেমে গেলেও আরও এক সমস্যা। দীর্ঘ সময় পানীয় জল মেলা দায়৷
সদ্য এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরও এক বন্যার ধাক্কা সামলাতে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ৷ সমস্ত তোরজোড় সারা থাকলেও চাষের জমির যা ক্ষতি হবে তা পুরণ করতে অনেকটা সময় লেগে যাবে।
সেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়ে ‘আমফান’ এর মতো হেনস্থার শিকার হতে হবে সাধারণ মানুষকে৷ নতুন তালিকায় ঠাঁই মিলতে গেলে কাঠখড় পোড়াতে গিয়ে আবার এক বন্যা পরিস্থিতি৷ এ যেন জল যন্ত্রণা৷