দুর্নীতির অভিযোগকে আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য? রাজনীতির অঙ্কে কিছুই যায় আসে না তৃণমূলের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় তৃণমূলের শাসন ১১ বছর হয়ে গিয়েছে। যত সময় গিয়েছে ততই তাদের দাপট বেড়েছে রাজ্যে। কিন্তু শাসনকাজ নিয়ে তাদের পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নয়। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে তৃণমূল।
সাম্প্রতিককালের এসএসসি ও টেট দুর্নীতির ক্ষেত্রে শাসকদলের পাশাপাশি তাদের পরিচালিত সরকারের দিকেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। কিন্তু বারবার একই অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না এটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমজনতার কাছে।
এযাবতকালে তৃণমূল শাসনে শাসক দল ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে সব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে একমাত্র সারদা কেলেঙ্কারি সহ সামগ্রিক চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ।
দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর জীবনে এই দুর্নীতি চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। কিন্তু ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়ে দ্রুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ তহবিল ঘোষণা করে মোটামুটি দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
কিন্তু নারদা কাণ্ড, চাকরি দুর্নীতি, ত্রাণের টাকা নয়ছয় বা এসএসসি টেট কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের যারা ভোট ব্যাঙ্ক তাদের সরাসরি কিছু যায় আসে না। অন্তত এমনই ছবি উঠে আসে জনমানস থেকে।
ত্রাণ দুর্নীতিতে নিঃসন্দেহে সাধারন মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু অল্প কিছু ত্রাণ দিয়ে ও নানান প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টি বরাবরই শাসকদলগুলো সহজে সামলে নেয়, সেটা ভোটবাক্সে খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
তবে হালের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যেভাবে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্যে তার সঙ্গে দিন আনি দিন খাওয়া মানুষগুলোর সম্পর্ক নেই, সন্তর্পনে এই ন্যারেটিভ তৃণমূল তৈরি করেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাদের দাবি, যারা কোনোরকমে জীবন কাটায় তাদের কাছে তৃণমূল বুঝিয়েছে এগুলো সবূ বড়লোক, পয়সাওলাদের ব্যাপার।
এক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ হেলায় উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। কারণ চারিপাশে কান পাতলে, তাকালেই শোনা যাবে, “ওসব শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কী হয়েছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের কথা তো আর কেউ ভাববে না। পয়সা আছে তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছিল, এখন বোঝ ঠেলা! আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের এই ভাবেই দিন কাটবে।”
এই ধরনের কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয় দিন আনি দিন খাওয়া মানুষগুলোর রাগ শাসকদলের উপর গিয়ে পড়ে না, বরং শাসক দলের ভূমিকা তাদের নেতাদের বিতর্কে জড়িয়ে পড়া কোথাও যেন জাস্টিফাই হয়ে যায় এই মানুষগুলোর কাছে। তাদের তেমনটাই বোঝানো হয়।
আসলে এই খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতি করে এসেছে বামপন্থীরা। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তারা যাদের জন্য রাজনীতি করে তাদের সঙ্গেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে বর্তমান শাসক দলের নিচুতলার কর্মীরা। তাতে হাতে গরম ডিভিডেন্ডও পেয়েছে তারা। তাই যতই দূর্নীতির অভিযোগ উঠুক, বিতর্ক দেখা দিক সাধারণ মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরে গিয়েছে এটা বলা যাবে না।
সৌগত রায়ের বিবেকের ভূমিকা পছন্দ করছেনা দল, মদন কী সেটাই বুঝিয়ে দিলেন?
কিন্তু এ তো গেল ভোটের রাজনীতির কথা। দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। খবরের কাগজ, আজকের ডিজিটাল পোর্টালগুলো, খবরের চ্যানেল সর্বত্র দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা, পাতার পর পাতা নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়ে গিয়েছে, ঘন্টার পর ঘন্টা সাংবাদিকরা লিখে চলেছেন, বলে চলেছেন।
কিন্তু সরকার যে বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না তাদের পদক্ষেপ থেকেই পরিষ্কার। না হলে বেশ কয়েকবার অভিযোগ ওঠার পর আদালতের অপেক্ষায় না থেকে সরকার নিজেই তার বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করত!
বিরোধীদের অভিযোগ এই বিষয়টাই প্রমাণ করে দিচ্ছে গোটাটাই ভোটের অঙ্কে দেখতে চাইছে শাসক দল। তাই এই বাংলায় একের পর এক দুর্নীতি হয়ে যাবে কিন্তু হাল ফিরবে না। সিপিএমের দাবি, সাধারণ মানুষ যতক্ষণ না বিষয়টি নিয়ে সজাগ হচ্ছে ততক্ষণ খুব কিছু আশা করা বৃথা।
কিন্তু এ বিষয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে, তাদেরকে গোটাটা বোঝাতে বিরোধীরাও কী যথেষ্ট সক্রিয়? নাকি তাদের সঙ্গেও এই বিষয়ে শাসকদলের ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ আছে!