মুখে বলেন “…নাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব”, ছাড়েন আর কই !
|| নয়ন রায় ||
“পলিটিকাল সিস্টেম মে কুছ ভি হো সাকতে হে…।” এই শব্দব্রহ্ম নতুন আবিষ্কার ভাববার কোন কারণ নেই। রাজনীতি ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে সব রাজনেতারা ঘোলা জলে পাঁকাল মাছ ধরতে চায়। এরই নাম তো রাজনীতি। বা সংসদীয় সার্কাস বললে খুব কি ভুল বলা হবে?
গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত ও স্বাধীনতা আছে। আসুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় বাংলার রাজনেতারা জয় পরাজয় নিয়ে কি বলেছিলেন? অনুব্রত মণ্ডল কি বলছিলেন? একটু স্মৃতি রোমন্থনের সময় এসে পড়েছে।
অনুব্রত মণ্ডল কোট আন কোট যা বলেছিলেন, তা হল লোকসভায় ৪২-৪২ আসন পাব। নাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো। অনুব্রত মণ্ডল রাজনীতি ছেড়ে সন্ন্যাস কিন্তু নেননি। বহাল তবিয়তে আছেন। আবার বিধানসভা নির্বাচনে কমিশন তাঁকে নজরবন্দি করেছিল। সকাল থেকেই নাকের ডগায় নাচিয়ে ছেড়ে দিলেন কমিশনের আধিকারিকদের।
আসলে রাজনীতি হলো বাংলা ছায়াছবি ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-র মত বা উত্তম-সুচিত্রার ‘সপ্তপদী’ ছবির মত। “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হবে তুমি বলতো…”। এই গানটা এই মুহূর্তে রাজনীতির ঘোলাটে আকাশে বেশ মানানসই।
আচ্ছা অনুব্রত বাবুর কথা এবার বাদ দিলাম। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে নিজের গাড়িতে বসে এই প্রতিবেদককেই প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছিলেন, “আমি জিতছি”। তারপর বলেছিলেন “ভগবান যব দেতা হে ছাপ্পড় ফারকে দেতা হে …” ।
আশা করি কথাটা নিশ্চই মনে আছে রবীন্দ্রনাথ বাবুর। না না ভুলে গেছেন হয়ত। দল জিতেছেন। তবে তিনি হেরেছেন। রাজনীতি ছাড়েননি। ওই যে আগেই বললাম কুচভি হো সাকতা হে…। রবি বাবুর মত বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ টেবিল চাপড়ে বলেছিলেন “ইসবার 200 পার”।
বঙ্গ রাজনীতিতে লুপ্তপ্রায় কংগ্রেস, আদৌ কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?
রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। তিনিও রাজনীতি ছাড়েননি। কিন্তু উপরন্ত কোভিড বাজারে নারদ মামলার ঝাঁঝ অনুভব করছেন। অথচ তাঁর দলেও নারদ মামলায় দুজন কান্ডারী আছেন। তারা শুভেন্দু অধিকারী ও মুকুল রায়।
ওই যে বললাম রাজনীতি হলো ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছায়া ছবির মত। একদা যারা বলেছিলেন রাজনীতি ছেড়ে দেবেন, তারা খোশমেজাজেই আছেন। আরে বাবা রাজনীতি এত সহজে ছাড়া যায় না।
পাঁচ বছরের গ্যারান্টি টিকা। তার ওপর ওভারডোজেই ভিটামিন খাওয়া দাওয়া, চাপরাশি পেয়াদা আর ভালো বাংলো-এইসব ছাড়া যায় নাকি! এরাই আবার জনগণের পিঠ পিছে বলেন, আরে মশাই ছাড়ুন তো বলতে হয় বলছি। ডিস্টার্ব করবেন না তো। কোনো কোনো রাজ নেতা বাড়ির বাইরের গেটো তালা লাগিয়ে পেয়াদা দের বলে কেউ ডাকলে বলবে মন্ত্রী বাড়িতে নেই।
এটাই তো রাজনেতাদের ভাবমূর্তি। তাই নারদা আর কোভিড বাজারে নেতাদের রাজনৈতিক কাহিনীর আনকাট কিছু কথা প্রতিবেদনে উঠে এলো। যা রুঢ় বাস্তবে কঠিন লাগলেও ভেবে দেখবেন.. রাজনীতি মে কুছ ভি বোলা যাতা হে….