ফিলাপ করেছেন ‘বেসুরো স্বীকারোক্তি’ ফর্ম, নির্বাসন নাকি প্রত্যাবর্তন?

সহেলী চক্রবর্তী

রাজনীতি সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে জনস্বার্থের থেকেও বেশি পরিমাণে নিজ স্বার্থে প্রাধান্য দেন রাজনীতিবিদরা। নীতি-আদর্শ-কৃতজ্ঞতা বা সমাজের কাছে ‘আইকন’ থেকে যাওয়া এখন অতীত। স্পষ্ট কথায় বললে, ‘যখন যেমন তখন তেমন’ এই প্রবাদবাক্যকে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে পরিণত করে সেই ধারা প্রবাহমান বঙ্গরাজনীতির স্রোতে।

দলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি নেত্রীর ছায়াসঙ্গী। শোনা যেত কালীঘাটের অন্দরমহলের চারবেলার খাবারে কী কী পদ থাকছে সেটাও নাকি তিনি জানতেন। নেত্রী যেমন রণংদেহী মূর্তি ধারণ করতেন , তিনিও তেমনি করেছেন একাধিকবার। যেমন ধরুন নেত্রী যদি বলে বাঁদিক যেতে হবে, তিনিও সাত-পাঁচ না ভেবেই বলে দিতেই বাঁদিকেই যেতে হবে।

এহেন দোসর হঠাৎ অভিমান করে উথালপাতাল কান্নাকাটি শুরু করলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। নেপথ্যে কারণ- সাতগাছিয়া থেকে এবারে তাঁকে প্রার্থী করেননি নেত্রী। একরাত ফোন খোলা রেখেছিলেন, যদি নেত্রী ফোন করে বলেন কিছু। সেগুড়ে বালি। সকাল হতেই অভিমানি দোসর ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

প্রার্থী না হতে পেরে শোকে দুঃখে চিরশত্রু শিবিরে নাম লিখিয়ে পতাকা হাতে তুলে নিলেন। ১০ দিন আগে পর্যন্ত যাকে আপাদমস্তক কু-কথায় ভরিয়ে দিতেন তাঁর হাত থেকে পতাকা নিয়ে তাঁর পা-ও ছুঁয়ে ফেললেন। যা দেখে আপামর রাজ্যবাসীর মনে সমস্বরে উচ্চারিত হয়েছিল, “বাপরে! কী শ্রদ্ধা!” না জানি আরও কী কী.. সেসব নাহয় উহ্য থাক।

আশাকরি উপরিউক্ত চিত্রনাট্যে লিড রোলে কে রয়েছেন তা বুঝেগিয়েছেন সকলেই। মার্চ মাসে অভিমান। মে মাসে মোহভঙ্গ। প্রথমে টুইট করলেন। নিন্দুকের অবশ্য বলছেন, ডিজিটাল পার্টিতে গিয়ে হাওয়া লেগে গেছে। তাই ডিজিটালি ক্ষমা চেয়ে ভার্চুয়ালি লুটিয়ে পড়লেন দিদির পায়ে।

বলি চিঁড়ে ভেজা কী এতই সহজ ? বিপদে পড়লে যেমন মানুষ চেনা যায়, তেমনি দলের দুর্দিনে পড়ে কারা নেত্রী ও দলের পাশে ছিলেন সেকথা তামাম রাজ্যবাসী জেনে গিয়েছে। আর সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে অন্যের ঘর ভেঙে বেশীদিন নিজের ঘরে সুখ-শান্তি টেকানো যায় না।

এখন নাকি একটা ফর্ম ঘুরছে ইন্টারনেটে। তার নাম ‘বেসুরো স্বীকারোক্তি’। সৌজন্যে যার কথা না বললেই নয়, তিনি দেবাংশু ভট্টাচার্য।  ফর্মে নিজের নাম, বিধানসভা, লোকসভা কেন্দ্র লিখতে হবে। জানান, কী কারণে বেসুরো হয়েছিলেন। আবার কী কারণেই বা সুরে ফিরতে চাইছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন অপশন রয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা নিজেদেরকে ধান্দাবাজ মনে করেন কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত দুজন এই ফর্মের আওতাভুক্ত হয়েছেন। একজন সোনালী গুহ, অন্যজন সরলা মুর্মু। দূর্দান্ত ইনিংস খেলার পরেও পরাজিত হয়েছেন তারা। এটাকে ‘বেটিং’ বলা ঠিক হবে নাকি জানা নেই। যদিও সেটা কোনদলে থেকে কার জন্য করলেন বোঝাই গেল না। তবে তারা যে এতদিন বাড়তি বোঝা ছিলেন বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজেরাই। যাইহোক ফর্ম তো ফিলাপ করলেন। তাহলে নির্বাসন নাকি প্রত্যাবর্তন?

সম্পর্কিত পোস্ট