আপনি এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী….
নয়ন রায়
আপনার মন এখন রাজনৈতিক ভাবে বিষাদময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনি নিজের লড়াইকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। আপনাকে একসময় বাংলার মানুষ সর্বভারতীয় নেত্রী হিসাবেই দেখতে শুরু করেছিলো। জনগণ বলে আপনি নাকি শক্তিধারী নেত্রী।
মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি জাতীয় নেত্রী ছিলেন না কোনদিন। কারণ প্রথমে বিরোধী নেত্রী। তারপর শাসকযন্ত্রের ঘর ও ঘরনীতে আপনি আটকে গেলেন। আপনি তো অনেক কিছু করলেন। শিল্প টা বাদ দিয়ে। শিল্পের কি পরিস্থিতি আপনি হাড়ে হাড়ে জানেন। আপনার রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। কারণ শিল্প সেরকম হলে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হত না। হিসাব তাই তো বলে।তারজন্য আবার অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার আছে কি?
তিনটি টার্ম হলো। আপনি বৃহৎশিল্প বা মাঝারি শিল্প কী করলেন? বেকার সমস্যা মেটালেন কি?। উত্তর নেই। আপনি আনঅর্গানাইজড সেক্টরে চাকরি দিলেন, তাতে সংখ্যাটা কত? উত্তর নীরববতা ছাড়া আর কিছু নেই।
আপনি ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর রোতন্ডায় মহাকরণে যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন, তাতে বলেছিলেন কৃষির নির্ভরশীলতার সঙ্গে বৃহৎ শিল্প সহায়ক হবে। কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি? মুখমন্ত্রী আপনার কথা তো মিলছে না। তাহলে আপনাকে কি সুশাসক বা জাতীয় নেত্রী কি বলা যায়?
আপনার দলের কর্মীরা তা দাবি করতে পারেন। কারণ জাতীয় কোনো বড় ইস্যুতে আপনার মতামত কয়েক দশকে কি সত্যি গুরুত্ব পেয়েছে? এই খোলা পত্র আমার ভাবনা। আবার ভাববেন না আমি বিজেপি বা বাম হয়ে কথা বলছি।আমার যা দেখা তাই লিখছি।
একবার ভাবুন তো সিঙ্গুর ইস্যুতে আদালত আপনার পক্ষে রায় দিল। টাটারা চলে গেল।আপনি সেই টাটাদের নির্মাণ ভাঙতে যে টাকা খরচ করলেন,সেই পরিমানটা তো অনেক। জমি কিছু মানুষ পেল ঠিকই। আপনি সর্ষের বীজ ছড়ালেন। তাতে কি লাভ হলো? জমি তো এখন ভুতের আড্ডায় পরিণত হয়েছে।
আপনি সিঙ্গুর দিয়ে বার বার যান। আপনার বুক কাঁপে না? মনে হয় না, ইশ যদি আমি শিল্প টা করতে দিতাম তাহলে আজ সিঙ্গুরের পরিস্থিতি পাল্টে যেতে। অর্থনীতি রূপরেখার নতুন সমীকরণ হতো। তা তো হলই না ম্যাডাম। তাহলে আপনি কি করে সুশাসক হলেন?
আপনি এখন সরকারকে দুয়ারে নিয়ে এলেন। টেট ও প্যারা টিচার ও এসএসসি, গ্রুপ ডি নিয়োগ নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছিলেন। অনেকের কপালেই আজ দুর্দশার কাঁটা। এর দায় তো আপনার ওপর বর্তাবে।
আপনি রোজ বলেন কেন্দ্র নাকি সুদ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। একটা কথা বলুন তো, জিএসটি থেকে আপনার তো আয় হয়েছে। সব সময় দোষ চাপলেই হয় নাকি। কলকাতাকে লন্ডন আর দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড বানাবেন বলেছিলেন। এই সব নিয়ে লোক হাসাহাসি করে এখন। সবাই কি ভালো আছে?
না ম্যাডাম কেউ ভালো নেই। আপনার দলের লোকজন ভালো আছে। আপনি নাকি পাল্টে গেছেন। কি করে বুঝব? যাইহোক এবারের লড়াই বেশ জমজমাট। আপনি নতুন কি বলবেন মানুষ তো শোনার জন্য বসে আছে।
কেন দল আর সরকার এক করে দিলেন? সরকার চালাতে গিয়ে দলের ওপর নজর কম দিয়ে বাকিদের ওপর ছাড়ার ফল তো পেলেন। যারা চলে গিয়েছিল তারা হাতে-পায়ে ধরে দলে ফিরছেন।
সব শেষে বলি আলাপন বাবুকে নিয়ে রাজ্য বনাম কেন্দ্র তরজা বেশ জমজমাট। জানি না এই রাজ্যের আগামী ভবিষ্যৎ কি হবে। তাই আপনার প্রতি বাংলার মানুষের আশা আছে। গঠনমূলক কিছু করুন। বেকাররা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। চাকরি জুটছে না।
সমালোচনা করা মানে আপনার বিরোধিতা না। বাস্তবটা বড়ই কঠিন। লড়াই করুন কেন্দ্রের সঙ্গে। তার আগে রাজ্যের কর্ম পরিস্থতি তৈরি করুন। নাহলে বিপদ বাড়বে। আপনি ভালো থাকবেন। আশা করব, আপনার সুশাসনে এরাজ্যের আমজনতা আগামী ৫ বছরে অনেক প্রত্যাশা পূরণে এগোতে পারবে।