শক্তি যাচাই না করেই দলবদলুতে ভরসা গেরুয়া শিবিরের হারের প্রধান কারণ: আরএসএসের মুখপত্র

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’, একুশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিজেপিকে তীব্র ভাষায়সমালোচনা করেছে। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের শক্তি বিচার না করে পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল গেরুয়া শিবিরের “ভুল পদক্ষেপ”। এর ফল ভুগতে হচ্ছে বিজেপিকে।

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবির পিছনে এটাই অন্যতম প্রধান কারণ। ১৩ ই মে প্রকাশিত ‘অর্গানাইজার’ যে বিশ্লেষণ প্রকাশ্যে এসেছে তাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। সাধারণত বিজেপির আইটি-সেল, নিয়মিত অর্গানাইজারের বিশ্লেষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলেও এবার বিজেপির অস্বস্তি ঢাকতে এই লেখাটি এড়িয়ে গিয়েছে।

এই নিবন্ধটিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে বিজেপি মমতা সরকারের চালু করা প্রকল্পগুলির প্রভাব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানে আরও বলা হয়েছে দেশজুড়ে চলা করোনা পরিস্থিতি প্রভাব রাজ্যের মানুষের উপর কি প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে তা বুঝতেও ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। মূলত সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে জনমত বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে।

এখানে আরো বলা হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাস্তবের মাটিতে জলের শক্তি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর ফল তাদের ভুগতে হচ্ছে। এখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ফলাফলের ২৪ ঘন্টা আগেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা যেভাবে ২০০ আসন জয়ের কথা বলেছেন তার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। এক্ষেত্রে তারা দলের কর্মী-সমর্থকদের সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখালেও যা বাস্তবে ছিল ‘খোকলা’ অর্থাৎ অন্তঃসারশূন্য।

লকডাউনের মধ্যেও যথারীতি চলবে টিকাকরণ

মজার বিষয় হল, যে ৭৫ জন বিধায়ক বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন তার মধ্যে সিংহভাগই দলবদলু। তথ্য বলছে এদের ৩৫ জন এসেছেন তৃণমূল থেকে। ২৫ জন কংগ্রেস থেকে এবং ১২ জন এসেছেন বামফ্রন্ট থেকে। বাস্তবে বিজেপির থেকে জয়ী হয়েছেন মাত্র তিনজন।

দেখা গিয়েছে, বিজেপি চাটার্ড বিমানে করে যে দলবদলুদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মধ্যে একজন ছাড়া সকলেই পরাজিত হয়েছেন। এখানেই শেষ নয় এই নির্বাচনে বিজেপি থেকে জয়ী দুই সাংসদ বড় ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হেরেছেন।

এর মধ্যে বাবুল সুপ্রিয় হেরেছেন টালিগঞ্জে অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ব্যবধানে। বিজেপির অপর সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রায় ১৮ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। দলের অপর দুই সাংসদ নিশীথ প্রামানিক ও জগন্নাথ সরকার জিতলেও সেখানে দলের আহামরি ফল হয়নি। যার কারণে শেষ পর্যন্ত দল দুই সাংসদকেই বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

দলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীই জয়ী হয়েছেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া ও সব্যসাচী দত্তের মতো তারকা প্রার্থীরা গো-হারান হেরেছেন।

‘অর্গানাইজার’ তার নিবন্ধতে ঝাড়গ্রাম (৪ টি আসন), দক্ষিণ চব্বিশ-পরগনা (৩১ টি আসন), পূর্ব বর্ধমান (১৬ টি আসন) এবং কলকাতায় (১১ টি আসন) একটি আসনও না পাওয়ার জন্য বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছে। লোকসভা ভোটে ভালো ফল করলেও বিধানসভায় জঙ্গলমহলের ৫১ টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে মাত্র ১৭ টি আসনে।

ইজরায়েলি এয়ারস্ট্রাইকে গুঁড়িয়ে গেল সংবাদমাধ্যমের অফিস

এমনকি মতুয়াদের মন পেতেও দল ব্যর্থ। শুধুমাত্র দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারের দলের ফলাফল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আরএসএস মুখপত্র মনে করছে এর মাধ্যমে আর যাই হোক রাজ্যের ক্ষমতা দখল করা যায় না।

এই নিবন্ধতে বলা হয়েছে, দলবদলু নেতাদের জেতানোর জন্য আরএসএস সংগঠকরা সেভাবে সক্রিয় হয়নি। দলের তথ্য বলছে, বিধান নগরের মতো তারকা কেন্দ্রেও আরএসএস এর সমর্থন না পাওয়ার জন্য বিজেপিকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভোটে হারতে হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট