ক্রমশ হাসির খোরাক হয়ে উঠছে শুভেন্দু-ধনখড় জুটি!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত বর্তমানে এতটাই নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠেছে যে তাতে আমজনতা আর বিশেষ অবাক হয় না। সরকারের উদ্দেশ্যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ট্যুইট বোমা অব্যাহত। তবে নেতাইয়ে শুভেন্দুকে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে তাঁর পদক্ষেপ ফের একবার রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তিনি যেভাবে ডিজি ও মুখ্য সচিবকে তলব করেছেন তা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসের দিন শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিরোধী দলনেতা নেতাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু গ্রামে ঢোকার ঠিক আগে লালগড়ের ঝিটকা জঙ্গলের কাছে বিশাল পুলিশবাহিনী তাঁর পথ আটকায়। এই সময় পুলিশের সঙ্গে শুভেন্দুর বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে।
উল্লেখ্য শুভেন্দু অধিকারীর একটা দাবি এই বিষয়ে ঠিক। কলকাতা হাইকোর্টের তাঁর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন বিরোধী দলনেতার গতিবিধি কোথাও রুদ্ধ করবে না সরকার। উল্টে তিনি শুভেন্দুকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। সে দিক থেকে দেখতে গেলে নেতাইয়ে যাওয়ার পথে বিরোধী দলনেতার পথ আটকানো বিষয়টি সরাসরি আদালত অবমাননার ঘটনা হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু এখানেই একটা ট্যুইস্ট আছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পরে জানানো হয় গ্রামে তৃণমূলের পক্ষ থেকে নেতাই দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল, তাই বিরোধী দলনেতাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ নাকি তাঁকে অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু তা না শুনেই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান শুভেন্দু!
এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে পুলিশ কাউকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলতেই পারে। সেক্ষেত্রে আদালত অবমাননার প্রসঙ্গটি কতটা ধোপে টিকবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু সেখানে পুলিশ যদি প্রমাণ করে দিতে পারে যে তারা অপেক্ষা করতে বলা সত্ত্বেও বিরোধী দলনেতা স্বেচ্ছায় ঘটনাস্থল থেকে চলে যান, তবে কিন্তু শুভেন্দুরই মুখ পুড়বে।
এই পর্বেই রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হন জগদীপ ধনখড়। অবশ্য তার আগে গোটা ঘটনা জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে নালিশ করেন বিরোধী দলনেতা। তারপরই রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে লিখিত রিপোর্ট নিয়ে সোমবার সকাল ১১ টার মধ্যে রাজভবনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। রাজ্যপালের আচরণ দেখে মনে হতে পারে মুখ্যসচিব, ডিজি প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক নেন, তাঁরা স্কুলছাত্র!
শুভেন্দুকে নেতাইয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধাকে জরুরি অবস্থার থেকেও খারাপ পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি ট্যুইটে তিনি অভিযোগ করেন এই রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন আদালতকে মানতে চাইছে না। তাই বিরোধী দলনেতার পথ আটকানো হয়েছিল।
রাজ্যপালের বক্তব্যের একাংশ নিয়ে হয়তো খুব বেশি বিতর্ক নেই। কারণ আদৌ পুলিশ শুভেন্দুকে অপেক্ষা করতে বলেছিল কিনা সেটা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। প্রাথমিকভাবে বিরোধী দলনেতার যে পথ আটকানো হয়েছিল তা একেবারে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শুভেন্দু কিছু বললেই রাজ্যপাল এইরকম কড়া হেডমাস্টারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেন কেন!
সংবিধান বলছে রাজ্যপাল যখন খুশি প্রশাসনের যেকোনও কর্তাকে ডেকে পাঠাতে পারেন। কিন্তু সংবিধানের এই বক্তব্যের পাশাপাশি তাঁর মূল সুর অনুধাবন করা উচিত। সেখানে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকার ও প্রশাসনের কাজে কোনভাবেই রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। তাছাড়া শুভেন্দুকে নেতাইয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়ার চূড়ান্ত ফয়সালা সম্ভবত আদালতেই হবে।
কারণ প্রশাসন তাদের পদক্ষেপের পক্ষে একরকম যুক্তি দেবে, বিজেপি আবার আরেক দাবি নিয়ে হাজির হবে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে রাজ্যপালের বিশেষ ভূমিকা নেই। তবে কেন জগদীপ ধনখড় বারবার নিজেকে এইভাবে হাস্যকর করে তুলছেন!
এক্ষেত্রে অবশ্য প্রশ্নবানের বাইরে নেই শুভেন্দু অধিকারী। আদালতে যাওয়া নিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার বদলে তিনি কেন প্রথমেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন না তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। তাহলে কি সত্যিই তাঁকে পুলিশ অপেক্ষা করতে বলেছিল? তা ছাড়া রাজ্যপালকে নালিশ জানিয়ে কী আদৌ রাজনৈতিকভাবে কোনও লাভ হয়? নাকি রাজ্যপাল প্রশাসনের কর্তাদের ডেকে পাঠাবেন, তাতে সরকার কিছুটা বিব্রত হবে, এইটাতেই মজা পান বিরোধী দলনেতা?
আশা করা যায় আগামী দিনে শুভেন্দু অধিকারী আরও পরিণত রাজনীতি করবেন। তিনি লড়াই-আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। কিন্তু ছোট্ট ‘স্কুল ছাত্রদের’ মতো করে বারবার ‘হেডমাস্টার’ রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন না। কারণ তাতে কিছু হাসির খোরাক পাওয়া যায়, কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয় না!
পরিশেষে একটাই কথা বলার, জগদীপ ধনখড়ের আমলে রাজভবন বোধহয় তার শেষ গরিমাটুকুও হারিয়ে বসেছে। লোকে এখন বাংলার রাজ্যপালকে নিয়ে হাসি মশকরা ছাড়া আর কিছুই করে না!
আমজনতার এই মনোভাবের পিছনে শুভেন্দুর মতো বিরোধী কিছু নেতারা নিজেদের দায় অস্বীকার করতে পারেন না! তাঁদেরও বোঝার সময় এসেছে লেবু অতিরিক্ত কচলালে তা তিতো হয়ে যায়!