EXCLUSIVE: উপত্যকার আত্মকথা, বলছেন চৌধুরী মহম্মদ আক্রম

৫ ই অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকে কেমন রয়েছে উপত্যকা? দ্য কোয়ারিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কি বললেন সুরানকোটের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ আক্রম।

৫ ই অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকে কেমন রয়েছে উপত্যকা? দ্য কোয়ারিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কি বললেন সুরানকোটের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ আক্রম

প্রায় ৫ মাস হয়ে গেল জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন বছরের শুরুতে জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন রয়েছে?

চৌধুরী মহম্মদ আক্রমঃ কিছু দিন আগেই আমার পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ জনের মৃত্যু হয়। সেকারণেই আমাকে কিছু দিন আগেই সুরানকোট থেকে শ্রীনগর যেতে হয়েছিল। যা দেখে বুঝলাম এখনও অবধি পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। দোকানপাট, বাজার, স্কুল-কলেজ সমস্ত কিছু বন্ধ রয়েছে। লোকজন একপ্রকার চুপ হয়ে গিয়েছে। এখন পরিবারের কাউকেই হারাতে চাইছে না কাশ্মীরের মানুষ। তাই এবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে রাজি নয় কেউই। কিন্তু ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ায় মানুষের মনে যে পরিমাণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল, আজও সেই পরিমাণে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা তাঁদের কল্পনার বাইরে। তার ওপর সিএএ নামক নতুন আইন এনে, নতুন করে দেশজুড়ে এনআরসির জিগির তুলে আরও বেশী মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করতে চাইছে সরকার।

৩৭০ ধারা তুলে নিয়ে শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে এবার সিএএ এনে গোটা দেশের সঙ্গে সেই ব্যবহার করতে চাইছে মোদি সরকার। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে। গোটা দেশজুড়ে সেই ছবি দেখতে পাচ্ছি আমরা।

এমনিতেই কাশ্মীরে বিজেপির কোনও ছাপ ছিল না। তাই জম্মুতে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ভোট করিয়েছে। সেই নির্বাচনেও যারা দলীয় সদস্য তাঁদেরকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গোটা বিশ্বের কাছে অন্য বার্তা দিতে চাইছে সরকার।

মোটের ওপর বলা যেতে পারে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি যেমন ছিল, আজও একই রয়েছে। বরং সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসির মতো ইস্যু মানুষের মধ্যে জমে থাকা আগুনে আরও বেশী করে ঘি দিচ্ছে।

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলছেন কোনও দাঙ্গা হয়নি, সব শান্তিতে রয়েছে, স্কুল কলেজ সমস্ত খোলা।

চৌধুরী মহম্মদ আক্রমঃ শান্তি থাকবে না কেন! কাশ্মীরের মানুষ তো ঠিক করে নিয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমে কোনও প্রতিবাদ করবে না। যাতে নিজেদের কোনও মানুষের প্রাণহানি হয় সেকারণেই এখন শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। যদিও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ কোনভাবেই কমেনি। ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়াকেও কাশ্মীরের মানুষের ভালোভাবে নেয়নি।

কিছুদিন আগেই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ টি পদের চাকরীর জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছিল। সেখানে ১৭ হাজার মানুষের আবেদন পত্র জমা পড়েছিল। ফর্ম জমা করতে গিয়ে ৪ কোটি টাকা জমা করতে হয়েছে কাশ্মীরের মানুষকে। ভাবতে পারছেন কি পরমাণে বেকারত্ব রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে! বরং বেকারত্বের ইস্যু, আর্থিক মন্দার ইস্যু থেকে মুখ ফেরাতে এখন এই সমস্ত পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে সরকারকে। সরকারের প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানুষ রাস্তায় নামুক। কিন্তু মানুষ এবার মত বদলে ফেলেছে। তাঁরা এবার রাস্তায় নেমে নয়, বরং শান্তিপুর্ণভাবেই নিজেদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রথমে ৩৭০ ধারা তুলে নিল সরকার। তারপর সিএএ নিয়ে আসা হয়েছে। যা মানুষ একেবারে মেনে নেবে না। এভাবে রাতারাতি একের পর এক সরকার যেধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না। এর ফলে দেশের কোনও উন্নতি হয়নি। আগামী দিনেও কোনও উন্নতি হবে না।

সংসদে বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই সিএএ এর বিরোধিতায় মানুষ রাস্তায় নেমেছে, সরকারের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম দলগুলি। অন্যদিকে বিজেপি বলছে মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?

চৌধুরী মহম্মদ আক্রমঃ বিজেপি এধরনের বিল এনে  গোটা দেশুজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাঁর বিরোধিতা করতে আমরা সব সময় প্রস্তুত।  এধরনের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের একজোট হয়ে লড়তে হবে। ভারতবর্ষ অনেকটা পুষ্পস্তবকের মত, যেখানে গোলাপ সহ অনেক ফুল মিলেমিশে থাকে। আমাদের সেই সমস্ত ফুলগুলির যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আমি সকল দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ করব। বিজেপির জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের একজোট হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরেও প্রত্যেকদিন পাক সেনার গুলিতে কাশ্মীরের মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ক্রমশ মুষড়ে পড়েছে। সেদিকে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং সিএএ এবং এনআরসির মত ইস্যুতে মোড় ঘোরাতে চাইছে সরকার।

চৌধুরী মহম্মদ আক্রমঃ বিজেপি যেভাবে চালচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ কিছু নেই। আমরা দেশের নাগরিক আমাদেরকেই ভবিষ্যৎ ঠিক করতে হবে।

(সাক্ষাৎকারে শুভজিৎ চক্রবর্তী)

এই প্রতিবেদনে বক্তব্য চৌধুরী মহম্মদ আক্রমের ব্যক্তিগত। এর জন্য কোনোভাবেই #Thequiry দায়ী নয়। 

সম্পর্কিত পোস্ট