EXCLUSIVE: গোটা দেশজুড়ে যা চলছে তা একেবারে কাম্য নয়ঃ ইউসুফ তারিগামি
অগাস্ট মাসে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা তুলে নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়োলেও নির্বাচনী প্রচারে কাশ্মীরের দাওয়াই মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। ৮ মাস হতে চলল, কেমন রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি। কি বলছেন কুলগাওয়ের সিপি(আই)এম বিধায়ক ইউসুফ তারিগামি…
৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হল, সেদিন থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ সহ একাধিক রাজনৈতিক নেতারা বন্দি রয়েছেন। অনেকের ওপর পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট লাগু করা হয়েছে। এই মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি কি রয়েছে?
ইউসুফ তারিগামিঃ দেখুন জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে, মুলত কাশ্মীরের পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে যে কথাটা বলতে হবে তা হল কাশ্মীরের পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন এখনও অবধি হয়নি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের পুনরায় ইন্টারনেট চালুর সিদ্ধান্তে মনে করা হয়েছিল পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করেছে।
আপনি এখন যে পাবলিক সেফটি অ্যাক্টের কথা বললেন, তা এখন জম্মু-কাশ্মীরে মামুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন খুশি, যে কোনও ব্যক্তির ওপর এই আইন লাগু করা হচ্ছে। এবিষয়ে আপনাকে একটা কথা বলে রাখি, সেই শেখ সাহেবের আমলে যখন থেকে এই পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট চালু হয়, সেদিন থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে সিপি(আই)এম। এই আইন নিজেই অসাংবিধানিক।
আরও পড়ুনঃ ৫৪ দিনের পার্ক সার্কাস
বিষয় হল, যখন আপনি কাউকে গ্রেফতার করছেন তখন আপনার কাছে উপযুক্ত প্রমাণ থাকা দরকার। সেখানে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাঁকেও মামলা লড়াইয়ের জন্য সুযোগ দেওয়া দরকার। কিন্তু পিএসএ বিষয়টিকে অনেকটা একতরফা করে দিয়েছে। সরকার এই আইন ব্যবহার করে যখন খুশি যাকে খুশি মনগড়া মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিতে পারে।
যারা বন্দি রয়েছেন, তাঁদের ওপরেই পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট লাগানো হয়েছে, কিভাবে এটা করা যেতে পারে এবিষয়ে ইলতিজা মুফতিকে প্রশ্ন তুলেছেন। এভাবে কি পিএসএ লাগু করা যেতে পারে? আপনার কি মনে হয়?
ইউসুফ তারিগামিঃ আমি একটা কথা বলি, এই যে জম্মু-কাশ্মীরকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হল, এই বিষয়টিকে সিপি(আই) এম কোনদিন সমর্থন করে না। ভারত সরকারের সঙ্গে যে আইন অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর যুক্ত হয়েছিল, ৩৭০ ধারা এবং ধারা ৩৫(এ) তুলে নেওয়ার পর সেই আইনকেই লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে একপ্রকার লাঞ্ছনা করা হয়েছে।
আপনি অবাক হবেন একস্ময় এই মেহবুবা মুফতির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপি সরকার গঠন করে, তখন তাঁদের কোনও অসুবিধা ছিল না। এমনকি মেহবুবা মুফতির পিতার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। তখন কোনও অসুবিধা হয়নি।
পিডিপির সঙ্গে আসলে দ্বিচারিতা করেছে বিজেপি।
একইভাবে ওমর আবদুল্লাহের কথা যদি বলা হয়, কেন্দ্রে বাজপেয়ী সরকার থাকাকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপদে ছিলেন তিনি। তখন কোনও অসুবিধা ছিল না। একদিকে উনি যাদের সঙ্গে সরকার গঠন করছেন, সময় পালটে গেলে তাঁদেরকেই দেশদ্রোহী বলছেন।দেখে মনে হচ্ছে মোদিজী বেশ সুন্দর ব্যবসা খুলে বসেছেন। দরকার পড়লে ন্যাশনাল আর না দরকার পড়লে অ্যান্টি ন্যাশনাল। কে ন্যাশনাল আর কে অ্যান্টি ন্যাশনাল সেখানেও মনোপলি শুরু করেছে বিজেপি।
যা পুরিস্থিতি গোটা দেশজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সেখান থেকে বের হতে গেলে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কিন্তু যারা আওয়াজ তুলছেন, তাঁদের আওয়াজকেও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আপনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলুন, জামিয়া ইসলামিয়ার কথা বলুন, আমি উত্তরপ্রদেশের কথা বলুন যেখানে মানুষ বিরোধিতা করছে সেখানে তাঁদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সিএএ-আইএলপি ইস্যুতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে শিলঙে হত এক, জারি অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ, বাতিল ইন্টারনেট
সম্প্রতি দিল্লি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেটাকে আগে থেকে রুখে দেওয়া যেত কিন্তু বিজেপির এক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, নেতারা এমন কিছু মন্তব্য করে বসল যাতে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। যে কারণেই আজ দেশের অবস্থা খুব খারাপ।
কাশ্মীরের যা পরিস্থিতি সেখানকার মানুষ বলছেন, বাইরে বেরিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ দেখাবেন না। কারণ তাঁরা পরিবারের আর কাউকে হারাতে চান না। সিপি(আই) এম সবসময় মানুষের পাশে থেকে এসেছে। এখন যা পরিস্থিতি সেখানে সিপি(আই)এম এর অবস্থান কি রয়েছে?
ইউসুফ তারিগামিঃ আমায় একটা কথা বলুন,যখন এত বড় বড় নেতারা যারা একসময় বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠন করেছে তাঁদেরকে গ্রেফতার করতে বিজেপি পিছু হটেনি, তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কি হতে পারে সেটা সাধারণভাবে আপনি ভালোই আন্দাজ করতে পারছেন। শুধুমাত্র কয়েকজনের ওপর পিএসএ লাগু করা হয়েছে। বাকি বহুজন জেলে বন্দি রয়েছেন।
কেউ আবার জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে বন্দি রয়েছেন। আমার মনে হয় সরকারের তরফে যে স্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে মিথ্যা। সত্যিটা হল এখনও কাশ্মীরের মানুষকে চাপে রাখা হয়েছে। যা জম্মু-কাশ্মীর এবং গোটা দেশের জন্য ঠিক নয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভজিৎ চক্রবর্তী , দ্য কোয়ারি
এই মতামত বক্তার একান্ত ব্যক্তিগত।