তিন ফসলি জমি-ন্যানো কারখানা হয়ে সন্তোষী মায়ের মন্দির, সিঙ্গুরের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ হুগলি জেলা বরাবরই কৃষি অধ্যুসিত। এখানের তারকেশ্বর, ধনেখালি, সিঙ্গুরকে রাজ্যের আলু ভাণ্ডার বলা হয়ে থাকে। এই এলাকায় কৃষি কাজের পাশাপাশি কোল্ডস্টোরেজ ও চাষের উপকরণ বিক্রয়ের ব্যবসা বেশ ভালো চলে। কিন্তু দেড় দশক আগে গাড়ি কারখানার হাত ধরে এখানকারই সিঙ্গুরের ভাগ্যটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে।

সিঙ্গুরের জমি ছিল তিন ফসলি। তবু টাটাদের চাহিদা মেনে সেখানেই কিছু কম হাজার একর জমি নিয়ে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময় বাম সরকার নিজেই জমি অধিগ্রহণ করে টাটাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তবে জমিদাতাদের একাংশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে।

সেই সময় হিসেব করে দেখা গিয়েছিল ২০০ একরের মতো জমির মালিক অনিচ্ছুক। তাদের সেই জমি ফিরিয়ে দিয়ে কারখানা গড়ার চেষ্টা করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত টাটাদের ন্যানো গাড়ি সিঙ্গুর ছেড়ে পাড়ি জমায় গুজরাটের সানন্দে।

সিবিআই কোথায়? তদন্তে নেমে কী ঘুমিয়ে পড়লেন গোয়েন্দারা!

যদিও সে ন্যানো গাড়ি তৈরি করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে টাটারা। সে অন্য বিষয়। তবে গাড়ি তৈরি বন্ধ হয়ে গেলেও সানন্দের ওই কারখানায় নিজেদেরই অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে টাটা মোটরস। ফলে এলাকার আর্থসামাজিক ছবিটাই বদলে গিয়েছে। এদিকে শেষ পর্যন্ত আর কোন‌ও শিল্প হয়নি সিঙ্গুরে। আদালতের নির্দেশে সমস্ত জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সিঙ্গুর আন্দোলনের হাত ধরেই রাজ্যে ঘটে গিয়েছে রাজনৈতিক পালাবদল।

কিন্তু এত কিছুর মাঝে সিঙ্গুর কী করছে? সেখানে ন্যানো গাড়ি কারখানার কাজ শুরু হতেই বিভিন্ন অনুসারী শিল্প ও ছোটখাটো খাবার, পোশাকের ব্যবসার হাত ধরে বছর কয়েকেই সিঙ্গুরের অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জমি ফিরে ফিরে পেলেও আর চাষ হয়নি সেখানে।

কারণ গাড়ি কারখানা তৈরীর জন্য রাবিশ, ঢালাই ফেলা হয়েছিল। তাতেই এই তিন ফসলি জমির উর্বরতা যা নষ্ট হ‌ওয়ার হয়ে গিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই জমিতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করা প্রায় অসম্ভব। তবুও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের গিয়ে সর্ষে দানা ছড়িয়ে বলেছিলেন এখানে সর্ষে চাষ হবে!

তবে সর্ষে চাষ আর হয়নি। বদলে সিঙ্গুরের ওই পরিতক্ত জমি এখন হোগলা কাশফুলের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। মাস কয়েক আগে সিঙ্গুরের এই জমিতে মাছের ভেড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেখানকার কয়েকজন সম্পন্ন কৃষক ইতিমধ্যেই ওই পরিতক্ত এলাকার মধ্যে থাকা নিজেদের জমিতে মাছ চাষ শুরু করে দুটো পয়সা উপার্জন করছে। টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যা‌ওয়ার পর উপার্জন বলতে যদি কিছু থাকে তবে এটাই।

কিন্তু শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরে গিয়ে সন্তোষী মায়ের মন্দিরের শুভ উদ্বোধন করেন। ঘোষণা করেন সিঙ্গুর আন্দোলনে এই দেবীর নাকি বিপুল আশীর্বাদ ছিল! প্রশ্ন হচ্ছে তিন ফসলী জমিতে গড়ে ওঠার কথা হয়েছিল গাড়ি কারখানা। তা না হয় গড়ে উঠল কয়েকটা মাছের ভেড়ি। এবার হল দেবতার মন্দির। কিন্তু তাতে কী সিঙ্গুরের বেকারদের হাতে কাজ, পেটে ভাত জুটবে!

দেবী কী রাজনীতির আবর্তে ছেড়ে সিঙ্গুরকে আবার পথ দেখাবেন? আসলে তুলনায় কলকাতার নিকটবর্তী এই জনপদের বেকারদের দুরবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না। আগে যারা এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পেয়েছিল তারাই এখন গভীর হতাশায় ডুবে আছে। রাজনীতির লাভ-ক্ষতির বাইরে বেরিয়ে কেউ একটু ভাবুক সিঙ্গুরের জন্য।

সম্পর্কিত পোস্ট