ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে প্রাক্তন সোভিয়েত সদস্যদের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন বিশ্বের কমিউনিস্ট দলগুলোর কাছে এক বড় ধাক্কা ছিল। যদিও এখনের রাশিয়া সোভিয়েত ঐতিহ্যের অনেক কিছুই বহন করে চলেছে। তবে সে এখন মোটেও কমিউনিস্ট দেশ নয়।

কিন্তু পুতিনের রাশিয়াকে আবার আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো উদারনৈতিক ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গেও এক আসনে বসানো মুশকিল। বলা যেতে পারে সোভিয়েত পরবর্তী পর্যায়ে মস্কো নিজের মতো করে স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তুলেছে।

তবে রাশিয়া নিজের স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়েই যে থেমে গিয়েছে তা নয়। বরং আজও সোভিয়েতের স্মৃতি বহন করে নিজের এক বিকল্প প্রভাবশালী বলয় গড়ে তুলতে সচেষ্ট। চিনের যতই উত্থান ঘটুক আজও সামরিক দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশ হিসেবে রাশিয়াকেই মনে করা হয়। সেই রাশিয়ার সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতকে ভেঙেই থেমে থাকেনি। বরং সুপরিকল্পিতভাবে সোভিয়েতের অংশ থাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে ন্যাটোর ছাতার তলায় নিয়ে এসে রাশিয়ার উপর ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে চলেছে। আগেই এস্তোনিয়া, লাটাভিয়া, বুলগেরিয়ার মতো প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলি ন্যাটোর সদস্য হয়েছে।

প্রবল সঙ্কটে থাকা সিপিএমের মাথায় বসবেন মহিলা নেত্রী? জল্পনা তুঙ্গে

পরের ধাপে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার দিকে আমেরিকায় এগোতেই রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। পুতিন পাল্টা আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, কাজাখাস্তানের মতো প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলিকে নিয়ে এক সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে এই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির সামরিক সাহায্যের কোন‌ও প্রয়োজন নেই রাশিয়ার।

ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে প্রাক্তন সোভিয়েত সদস্যদের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন

কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর প্রসারণ আটকাতে এবং কখনও যুদ্ধ বাঁধলে প্রয়োজনে যাতে ওই দেশগুলির জমি ব্যবহার করা যায় সেই কারণেই এই জোট গড়ে তুলেছে রাশিয়া।

ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমী দেশগুলির একাংশ মনে করছে যে কোনও মুহূর্তে রাশিয়ান সেনা ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। এই অনুমান একেবারে অমূলক নয়। এর পিছনে হাত আছে রাশিয়ার‌ই। তারা হঠাৎ করেই মাসখানেকের মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে কয়েক লক্ষ সৈন্যর সমাবেশ ঘটিয়েছে।

বছরখানেক আগের এক পুরানো স্মৃতি এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছে। ২০১৪ সালে মস্কো ঘনিষ্ঠ সরকার ইউক্রেনে ক্ষমতায় হারায়। তার পর থেকেই কিয়েভের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।

পরবর্তীকালে ইউক্রেনের অন্তর্গত ক্রিমিয়া দ্বীপ দখল করে নেয় মস্কো। এছাড়াও ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তের একাধিক জায়গায় গিয়ে বিরোধী বিদ্রোহীদের প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে চলেছে রাশিয়া।

এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্রালিদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়েছেন ইউক্রেনকে যদি ন্যাটোর সদস্য করা না হয় তবেই তিনি চুপ থাকবেন। কিন্তু রাশিয়ার এই দাবি মেনে নিতে রাজি নয় আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলো।

এই অবস্থায় রাশিয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলি। ফলে আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহে পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনার পারদ আরও চড়বে বলেই মনে হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট