সমাধানের রাস্তা কি?

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।

এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে, সেগুলো আমরা ক্ষমতায় এলেই সমাধান হয়ে যাবে। এই বুলি আউড়ে ভোটের প্রচার চলছে তুঙ্গে। কিন্তু সমস্যাটা কীসের? একজন বলছে ভয় হয় যদি পশ্চিম বাংলাদেশ হয়ে যায়। একজন বলেন, ভয় হয় যদিও ধুতি পরে হরিনাম না করতে পারি। আবার কেউ বলছেন, ‘গুটখার’ সঙ্গে যাদের মিত্রতা, তাঁদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা। কিন্তু আদতে যেটা দরকার সেটার মুশকিল আসান হল না। গল্প শুনিয়ে কোনও দুর্যোগকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব?

প্রশ্নটা হল এখানেই। সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য রাস্তাটা অনেক দুর। তাই ছেলে ভোলানো গল্প দিয়ে যতটা ভুলিয়ে রাখা যায়। মোদ্দা কথা হল, মারণরোগের সঙ্গে লড়াই করতে যেসমস্ত আনুষাঙ্গিকের প্রয়োজন ছিল তা দ্বিগুন করার কথা কেউই ভাবেনি। বরং ভোটের বাজারে ‘দুর্নীতি’, ‘তোলাবাজ’, ‘গদ্দার’, ‘বহিরাগত’ এবং সুরেলা কতগুলি মন্তব্যের দিকে নজর ছিল আমাদের। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয়বারের ঢেউ মানুষকে সুনামির থেকেও বেশী আতঙ্কিত করে তুলেছে। আর এরই মধ্যে কেউ তুড়ি মেরে বলে দিচ্ছেন ১০ জন ডাক্তার দাঁড় করাতে পারি। আপনারাই পারেন কঠিন সময়ে চাটার্ড ফ্লাইটে চড়ে দলবদল করতে। কিন্তু ডাক্তাররা ইস্তফা দিলে যাবেন কোথায়? পরে যুক্তি দিচ্ছেন মেজাজ হারিয়ে তিনি ওই কথা বলেছেন।

পর্যাপ্ত চিকিৎসা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পর্যাপ্ত বেড না থাকার কারণে নিত্যদিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। কে কতটা এগিয়ে এবং কে কতটা পিছিয়ে। উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতের মতো জলন্ত চুল্লির খবর মিলেছে কলকাতাতেও। এই মধ্যেই প্রচারে ফুল, মালা দিয়ে গণদেবতার পুজো জারি রাখা হয়েছে। এখনও দুই প্রহরের ভোট উৎসব বাকি রয়েছে। কিন্তু রোগীর বেডের পাশে উপস্থিত নেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের। গত বছর ধরে যে পরিমাণ অক্সিজেন রপ্তানি করা হয়েছে, তার খতিয়ান দিতে হচ্ছে শুধুমাত্র স্যালাইন নিয়ে পড়ে থাকা রোগীকে। গণদেবতার পুজোতে ব্যস্ত পুজারিরা এখনও অবধি পৌঁছাতে পারেননি তাঁর পাশে। বরং হাসপাতাল থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে ঘন্টা দু’য়েকের বেশী এভাবে চলা সম্ভব নয়। এমনকি, রাজ্যের তরফে হার স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে।

এই কঠিন সময়েও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব বাঁধ টপকাতে শুরু করেছে। এখনও নিজেদের পকেট থেকে মাস্ক কুড়োচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবুও মুখের মধ্যে এবং নাকের ওপর তাঁর দেখা মিলছে না। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যে শিক্ষা নিতে পারিনি এটা আমাদের সবথেকে বড় ভুল। সংকটকালে সীমিত সম্পদের ব্যবহার যদি করতেই হয় তাহলে নিজেদের সচেতন হওয়া সবথেকে বেশী জরুরী। কিন্তু যে পরিমাণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে তা খুবই কম। এই সময়েই প্রাথমিক বিষয়গুলিকে বেশী করে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ বাতাসের সঙ্গে এই ভাইরাস মিশে যেতে পারে সহজেই। এমনকি বাতাসে এর অবস্থান দীর্ঘক্ষণ। তবে বন্ধ জায়গায় মূলত এসি ঘরে বেশী লোক জড়ো হলে বিপদ রয়েছে।

কোভিড আমাদের জন্য বিপদ। বিপদের ঢাল কি টিকাকরণ? যদি তাই-ই হয় সরকারের উচিত রাজ্যগুলির জন্য আলাদা এবং কেন্দ্রের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ না করে, গণদেবতার জন্য ভ্যাকসিনের “এক দেশ, এক দাম” নির্ধারিত করা। গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসবে যারা প্রাণ হারাচ্ছেন তাঁদেরকে নিয়ে বিচলিত হওয়া স্বাভাবিক। তেমনই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে যারা জীবন দিচ্ছেন তাঁদের কথাও মাথায় রাখা। শুধুমাত্র সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে লড়াই করে কোনও লাভ হবে না যতক্ষণ না এর কোনও রাস্তা বের হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট