এটা গণতন্ত্রের কোন বলয়?
শুভজিৎ চক্রবর্তী
হাথরাস কান্ডের শুরু থেকে শেষ অবধি ঘটনাক্রম একটি বলয় তৈরি করেছে৷ যে বলয়ের কেন্দ্রস্থল হাথরাস হলেও উত্তরপ্রদেশ থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। নিউক্লিয়াসে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নগুলিকে ঘিরে রাখা হয়েছে পুলিশি বেড়াজাল দিয়ে।
খোলা আকাশের নীচে আটকে দেওয়া হয়েছিল প্রশ্ন সূচক চিহ্নধারী সংবাদমাধ্যম এবং পরিবারের পাশে দাঁড়ানো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে।
পুলিশি বলয় যার নির্দেশে তৈরি হয়েছিল সেই নির্দেশকের খোঁজে দিন রাত এক করেছেন সাংবাদিকরা। যে পুলিশি বলয়ের মধ্যে রাতের অন্ধকারে নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যে পুলিশি বলয়ের মধ্যে নয়ডা থেকে হাথরাস অবধি বিরোধীদের আটকে দেওয়া হয়।
যার মধ্যে গোটা গ্রামকে ঘিরে ফেলা হয়। নির্যাতিতার পরিবারকে ধমক দেওয়া হয়। নির্যাতিতার মরদেহ আটকাতে তার মার বুকফাটা কান্নার শব্দ শোনা যায়। পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে পুলিশকে জোরপুর্বক সরিয়ে দিতে দেখা যায়। আর পুলিশ বলয় থেকে নিজদের বাঁচিয়ে রাখতে রাতের কালো অন্ধকারে নিজেদের বন্দি করে রাখে পরিবার।
আর সেই পুলিশ বলয়ের লাঠির ঘায়ে আহত হন প্রাক্তন সাংসদ জয়ন্ত চৌধূরী। আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের গায়ে কালি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যে পুলিশি বলয়ের দ্বারা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর গায়ে হাত দেওয়া হয়।
যে পুলিশি বলয়ের সঙ্গে টানাহ্যাঁচড়ায় দিল্লি মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অমৃতা ধাওয়ানের কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়। আবার সেই পুলিশ বলয়ের আস্থায় যখন চন্দ্রশেখর আজাদ নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। সেই পুলিশ বলয়ের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই অভিযুক্তদের সমর্থনে আবার পঞ্চায়েত বসে।
এখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার নয়। কারণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ আধিকারিকদের বলতে শোনা গিয়েছে ওপর তলা থেকে অর্ডার রয়েছে। রাতের অন্ধকারে পেট্রোল ঢেলে নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া থেকে রাহুল গান্ধী এবং ডেরেক ও ব্রায়েন সহ তৃণমূল সাংসদদের প্রশ্নের জবাবে একটাই উত্তর দিতে দেখা গিয়েছে আধিকারিকদের৷ ওই বলয়ের বাইরে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।
হাথরাস ঘটনায় বিরোধীদের চলাচলে কতগুলি প্রশ্ন ওই বলয়কে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। বাংলায় যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তাহলে তার প্রতিবাদ হচ্ছে না কেন? রাজস্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাস্থলে রাহুল গান্ধী গেলেন না কেন? টেনিস বলের মতো নেটের এপার থেকে প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্ন চলে আসে ওপাড় থেকে।
ধর্ষণের কোন ঘটনা কতটা মর্মান্তিক তা যে কোনও তুলাপাত্রে তোলা খুব কঠিন। ২০০৪ সালে একটি ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল “রেপ ইজ এ ক্রাইম, ইট ইজ নট এ মেডিক্যাল কনডিশন”। ২০১৪ সালে ধর্ষণ মামলাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংশোধনী আইনে পরিবর্তন এনে তাকে আরও মজবুত করা হয়।
দলিত আইনে পরিবর্তন এনে তাঁদের সুরক্ষাকে আরও সুনিশ্চিত করা হয়। দলিত-আদিবাসী-হিন্দু এগুলো কিছু জটিলতার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা কিছু প্রতিশব্দ। এগুলিকে মুলত ভোটব্যাঙ্ক হিসাবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বাংলদেশের নোয়াখালীতে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে সরকারের বিরধীতায় সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সোশ্যাল মাধ্যমে নিজের ছবির পরিবর্তে কালো ছবি ব্যবহার করেছেন মহিলারা।
হাথরাস ঘটনার গোটা দেশে আন্দোলনের পিছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব হাজির করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। জাতপাতের লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি করে উত্তরপ্রদেশের সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ আধিকারিক প্রশান্ত কুমার জানিয়েছিলেন হাথরাসে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হবে।
সরকার মুলত সংবিধানের একজন প্রতিনিধি হন। কোনও দুর্বল কোনও মানুষ যে কোনও সহায়তার জন্য সরকারের কাছে উপস্থিত হন। গত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে দলিত পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একের পর এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা প্রসঙ্গে বিরোধীদের সরব হওয়া স্বাভাবিক।
আজমগড়, বলরামপুর এবং বুন্দেলশহরে একই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রশ্ন তুলে ধরেন বিরোধী পক্ষ। একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের মাঝেও বিরোধীতার সুর দেখা গিয়েছে বিজেপি শিবিরের মধ্যেও।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/in-addition-to-rejoicing-extend-a-hand-of-cooperation-to-the-helpless-people-surjit-mukherjee/
বিজেপি সাংসদ হংসরাজ হংস, বিনোদ শোনকার, কুশল কিশোরের মতো সাংসদরা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া কথা বলেছেন।
একের পর এক ধর্ষণের খবর সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এনকাউন্টারের স্লোগান ওঠে। গত বছরের নভেম্বর মাসে হায়দ্রাবাদে ২৬ বছর বয়সী এক মহিলাকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত চার জনকে পুলিশ এনকাউন্টার করে দেয়।
চলতি বছরেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি এনকাউন্টারের কথা আমাদের সকলের জানা। কানপুর দেহাটের সবথেকে বড় ডন বিকাশ দুবে এবং গ্যাং আটজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে৷ পরিবর্তে পুলিশ বিকাশকে উজ্জ্বয়নী থেকে আনতে আনতে পথে এনকাউন্টার করে দেয়।
ঠিক হাথরাস ঘটনাতেও যদি পুলিশকে এনকাউন্টার করতে হয় তাহলে হয়তো ঘটনায় অভিযুক্ত পঞ্চম ব্যাক্তি ছাড় পেয়ে যাবে। শাস্তির ক্ষেত্রে এনকাউন্টার আইনের সঠিক পথ নয়। দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর ওপর আমাদের সকলের আস্থা রাখা দরকার।
সেটা রেখেই আদালতের দ্বারস্থ হতে চান নির্যাতিতা পরিবার। তাঁদের বিশ্বাস যারা দোষী তাঁদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।
একইভাবে এই কঠিন বলয় ভেদ করতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অমৃতা ধাওয়ান, প্রতিমা মন্ডল এবং মমতাবালা ঠাকুরদের যে হেনস্থার শিকার হতে হল, সে ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে? আর নির্যাতিতার পরিবারকে যে অত্যাচার সহ্য করতে হল? তার পরিনাম কী হবে? নাকি ঠাকুর সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তির লাল চোখ তাঁদের বাসস্থান পাল্টে দেবে?