পুলওয়ামা শহিদদের স্মরণে রাজনীতি নয়, দাবি উঠুক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশেরও
দিলীপ রায়
পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪০ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি এখনও অব্যাহত। শুক্রবার সেই জঙ্গি হানার একবছর। গত বছর এদিনেই কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণে ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়। শহিদ জওয়ানদের চোখের জলে শ্রদ্ধা জানায় দেশ। শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা এবং মন্ত্রীরা।
কিন্তু কড়া নিরাপত্তায় মোড়া কাশ্মীরে জওয়ানদের কনভয়ে এমন হামলা কেন কিভাবে হল, তানিয়ে প্রশ্নও ওঠে। দাবি ওঠে তদন্তের।তখন ভোটের দামামা বেজে উঠেছে।
পুলওয়ামার পাল্টা পাকিস্তানে এয়ারস্ট্রাইক করে জবাব দেয় ভারত। দাবি করে, সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গূড়িয়ে দিয়েছে বায়ুসেনা। এই দাবিও প্রশ্নের মুখে পড়ে। কারণ, বিদেশী সংবাদমাধ্যম ভারত সরকারের এই দাবিকে মান্যতা দেয়নি। ফলে দেশের মধ্যেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কুর্সি ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি এবং তার কান্ডারি নরেন্দ্র মোদি শহিদ জওয়ানদের আঁকড়ে ধরে ঝাপিয়ে পড়েন নির্বাচনী প্রচারে।
পুলওয়ামা বা বালাকোট নিয়ে প্রশ্ন তুললেই বা তদন্তের দাবি করলেই ‘দেশ বিরোধী’ বলা শুরু করেন মোদি, অমিত শাহরা। ২০১৯-এ ওই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে শাসকদল বিজেপি এবং বিরোধীদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ আমরা দেখেছি।
আরও পড়ুনঃ বীর যোদ্ধাদের জানাই সেলাম, জয়হিন্দ….
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস, সাধারণ নির্বাচনের গোটা পর্বে মোদি, অমিত শাহরা শহিদদের নিয়ে চোখের জল ফেলেছেন, আর বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সাফল্যকে নিয়েই প্রচারে ঝড় তুলেছেন। কেন এতবড় ঘটনা ঘটল, তার তদন্তের দাবি তুললেই ‘পাকিস্তানের সুরে কথা বলছে’ বা জওয়ানদের অশ্রদ্ধা করছে বলে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপি। নিজেদের ‘দেশপ্রেমিক’ হিসাবে তুলে ধরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে।
এদিন পুলওয়ামা হামলার একবছর। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সহ শাসকদলের একাধিক নেতা মন্ত্রীরা এবং বিরোধীরা।
সরকার পক্ষ কিন্তু একবছর পার হয়ে গেলেও নিরাপত্তার কোন ফাঁকফোকর দিয়ে এই জঙ্গি হামলা হল, সেক্ষেত্রে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে বা এর সঙ্গে যুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা, সেসব কোনও বিষয় সংসদে বা সংসদের বাইরে জানায়নি।উল্টে বিরোধীরা কেউ কোনও প্রশ্ন তুললেই তাঁকে ‘পাকিস্তানের লোক’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে।
এদিন শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন বলে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বজরং দলের কর্নাটক শাখা। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলগুলোকে হুমকি দিয়ে বজরং দল বলেছে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে কোনও ইভেন্ট করা হলে তাতে তাঁরা বাধা দেবে।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীরিদের আতিথেয়তায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইউরোপিয়ান প্রতিনিধিরা
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি টুইটারে পুলওয়ামা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই হামলায় সবথেকে বেশি লাভবান কে হয়েছে, এই হামলার তদন্তে কি উঠে এসেছে এবং নিরাপত্তার গাফিলতির ফলে এই হামলায় দায়বদ্ধ বিজেপির কোন ব্যক্তি?
Today as we remember our 40 CRPF martyrs in the #PulwamaAttack , let us ask:
1. Who benefitted the most from the attack?
2. What is the outcome of the inquiry into the attack?
3. Who in the BJP Govt has yet been held accountable for the security lapses that allowed the attack? pic.twitter.com/KZLbdOkLK5
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) February 14, 2020
এরপরই টুইটারে রাহুল গান্ধিকে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপি মুখপাত্র জিভিএল নরসীমা রাও। তিনি লিখেছেন, সারা দেশ যখন পুলও্য়ামা শহিদদের স্মরণ করছে, তখন জৈশ ই মহম্মদ ও লস্কর ই তৈবা-র সমদরদী বলে পরিচিত রাহুল গান্ধি কেবলমাত্র সরকারকেই টার্গেট করেননি, একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীকেও টার্গেট করেছেন। প্রকৃত দোষি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু বলবে না রাহুল গান্ধি।
When nation is paying homage to martyrs of dastardly Pulwama attack, @RahulGandhi, a known sympathizer of LeT & Jaish-e-Mohammad, chooses to target not just the government but security forces as well. Rahul will never question real culprit Pakistan.
Shame on you Rahul! @INCIndia https://t.co/5M7dcWcxXU— GVL Narasimha Rao (@GVLNRAO) February 14, 2020
শাসক ও বিরোধী কংগ্রেসের বাকযুদ্ধ চলতেই থাকে। জাতীয় নিরাপত্তায় বিজেপির সাফল্যের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়বীর শেরগিল বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। জাতীয় স্বার্থে একবছর এনিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি।
আরও পড়ুনঃ The Hall of Pulwama Fallout
এর পাল্টা বিজেপি নেতা শাহনাওয়াজ হুসেন কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, দেশের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছে সেই শহিদদের অসম্মান করেছেন রাহুল। অতীতেও কংগ্রেস এমনটা করেছে, এরজন্য মানুষ তাদের শিক্ষা দেবে। রাহুলের এধরনের মন্তব্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সাহায্য করবে।
শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধার পাশাপাশি দিনভর রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই পুলওয়ামা হামলার একবছর পর এর তদন্তে কি উঠে এল তা জানতে চাওয়া অপরাধ নয় বলে দাবি করেছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। তাঁদের মতে, শহিদদের নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের রাজনীতি নয়, দাবি উঠুক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের।