কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন? উত্তরেই কি লুকিয়ে আছে রাজস্থানের ভবিষ্যৎ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। দলের বাকি নেতারা তাঁকে বহু সাধ্য সাধনা করেও আর সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি করাতে পারেননি। ফলে তিন বছর হয়ে গেল পূর্ণ সময়ের সভাপতি নেই দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলটির। এ সত্যি বিরল ঘটনা।
সনিয়া গান্ধি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু আর কতদিন? পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল, অর্থাৎ ২১ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। কিন্তু কে হবেন নতুন সভাপতি?
ছেলে রাহুল বা মেয়ে প্রিয়াঙ্কার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখনও কংগ্রেসে সোনিয়া গান্ধির প্রভাব এবং গুরুত্ব অপরিসীম। গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, মনীষ তিওয়ারির মতো বিদ্রোহী শিবিরের নেতারাও একবাক্যে সনিয়ার গুরুত্ব স্বীকার করে নেন। আর তা হবে নাই বা কেন। রাজীব গান্ধির মৃত্যু এবং নরসিমা রাও জামানার পর বিভাজন ও নেতৃত্বাধীনতায় যখন ভুগছিল শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি, তখন সনিয়া অন্দরমহল ছেড়ে বেরিয়ে এসে দলের হাল ধরেন।
তাঁর জন্যই আবার ক্ষমতার অলিন্দে ফিরেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৯ এ রাহুল গান্ধি কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে সনিয়ার পারফরমেন্সও খুব একটা ভালো নয়। শারীরিকভাবে তিনি বেশ অসুস্থ।
মাঝে মধ্যেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। আগের মতো প্রকাশ্যেও অতটা আসেন না। এই অবস্থায় তিনি পূর্ণ সময়ের কংগ্রেস সভাপতি হবেন এই সম্ভাবনা বেশ কম। তবে কংগ্রেসের একটি অংশের মতে, একান্তই সমাধান সূত্র না বেরোলে সনিয়াকেই শেষপর্যন্ত দলের হাল ধরতে হতে পারে।
বাজার শুধু বাজার, এ কেবলই বাজার গরমের খেলা…
জি-২৩ বলে পরিচিত কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের মূল অভিযোগই ছিল, পূর্ণ সময়ের সভাপতি চাই। রাহুল গান্ধি দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তাঁকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে হবে, পিছন থেকে কলকাঠি নাড়লে চলবে না। তবে গুলাম নবি আজাদরা রাহুল-প্রিয়াঙ্কার উপর খুব একটা যে প্রসন্ন নন তাও স্পষ্ট।
এদিকে রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, দীপেন্দর হুডা, অজয় মাকেন, কেসি বেণুগোপালরা চান রাহুল আবার সভাপতি হন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি পদে ফেরার বিষয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি রাহুল গান্ধি নিজে। বরং তিনি সভাপতি পদে ফিরলে বিজেপি আবার পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজে সভাপতির না হয় ঘনিষ্ঠ কাউকে ওই পদে বসাতে পারেন গান্ধিরা।
মাসখানেক আগে সনিয়া-রাহুলদের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রশান্ত কিশোর নাকি শচীন পাইলটকে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে রাজস্থানের গুজ্জর সম্প্রদায়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই তরুণ নেতা সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নন।
বরং তিনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি চান। সূত্রের খবর সনিয়া বা রাহুল কেউ সভাপতি পদে ফিরতে না চাইলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে ওই পদে নিয়ে আসার সম্ভাবনাও কম। সেক্ষেত্রে গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে সভাপতি পদে বসিয়ে পিছন থেকে গোটা বিষয়টা রাহুল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আর গান্ধি পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হলে দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন রাজস্থানের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। বর্তমানে তিনি গান্ধি পরিবারের সবচেয়ে আস্থাভাজনদের অন্যতম। গান্ধিদের আস্থাভাজন হিসেবে গেহলট একা আছেন ব্যাপারটা এমন নয়।
কিন্তু যাঁর সর্বভারতীয় রাজনীতির সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা আছে, সংগঠন চালানোর ক্ষমতা আছে এমন নেতাদের মধ্যে গেহলট সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেন কংগ্রেসের একটা বড় অংশ। রাহুল সভাপতি থাকাকালীন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছিলেন এই অশোক গেহলট। সেই সময় মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস।
তাছাড়া অশোক গেহলটকে সর্বভারতীয় সভাপতি করতে পারলে আরেক দুশ্চিন্তা কমবে কংগ্রেসের। এই মুহূর্তে রাজস্থানে রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস ভালো জায়গায় থাকলেও তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। শচীন পাইলট শিবিরের সঙ্গে অশোক গেহলটের কিছুতেই বনিবনা হচ্ছে না।
আগামী বছরের শেষ দিকে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে সবেধন নীলমণি উত্তর ভারতের এই রাজ্যটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে তাদের। এই পরিস্থিতিতে অশোক গেহলট কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারবেন শচীন পাইলট। ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো দুটো জটিল সমস্যার সমাধান একসঙ্গে হবে।
তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ বহু আগে ঘোষণা হয়ে গেলে এখন আর এই নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। যা নিয়ে দলের বিক্ষুব্ধ অংশ বেশ বিরক্ত।