“মুকুল রায় কেনো জেলে যাবে না?” সেই মুকুলই আজ তৃণমূলে, পাশে মমতা- কুণাল কোথায়?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দলবদলের ঘটনা বাঙালি দেখে দেখে অভ্যস্ত। এই ছবি ভারতবর্ষের রাজনীতিতে কোন নতুন কিছু নয়। আসলে রাজনীতি হলো একটা সম্ভাবনাময় শিল্প। যে শিল্পের জমিতে চাষ করতে চায় সবাই। প্রসঙ্গ যখন মুকুল রায় তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই কিছু কাটাছেঁড়া কথাবার্তার অবতারণা ঘটবেই।
খুব বেশিদিনের কথা নয়। নারদ মামলায় চারজনকে যেভাবে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিল তখন তৃণমূলের মুখপাত্র ও বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ প্রশ্ন করেছিলেন মুকুল রায় জেলের বাইরে কেন? তাকে ইমিডিয়েট গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
অথচ সেই মুকুল তৃণমূল ভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে উত্তরীয় পরে পুরনো ঘরে ফিরলেন। এটা ধরে নিতেই হবে রাজনীতিতে সব সম্ভব। কুণাল ঘোষের মন্তব্য বাংলার মানুষ কখনো ভুলতে পারেনি। তাহলে সেদিনের কুণাল ঘোষের বক্তব্য মুকুল রায়কে গ্রেফতার করা হোক কিসের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল?
তার উত্তর হয়তো আজ পাওয়া যাবে না। তাই তিনি নিস্তব্ধ। আসলে বাংলার রাজনীতিতে যা চলছে তাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি আশঙ্কার মেঘ তৈরি হচ্ছে। ৯০-র দশকের পর বাম থেকে ডান ও গেরুয়া দলে নতুন কোনো নেতৃত্ব উঠে আসতে পারছে না কেনো?
পরিবারতন্ত্রের বিরোধীতায় দলছাড়া মুকুলকে ঘরে ফেরার কাণ্ডারী অভিষেক
যদি এর বিশ্লেষণ করা হয় তার জন্য দায়ী থাকবেন যে সমস্ত নেতা এবং নেত্রীরা রাজনৈতিক ময়দানে একে অপরের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করছেন। আজকের প্রজন্মকে রাজনীতি থেকে সত্যিই বিমুখ করাচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় নতুনের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রকাঠামো এবং রাজনৈতিক পটভূমি। তাহলে কুণাল ঘোষের আলটপকা মন্তব্য বা টিভির পর্দায় যেসব কথা আকছাড় তিনি বলেন, মুকুল বাবু সম্পর্কে এটা কোন শিল্পের কারুকার্যের জবাব? তৃণমূলের একটা অংশ জানতে চাইছে। কুণাল ঘোষের মন্তব্য কী ভালো এফেক্ট দেবে? প্রশ্ন উঠে আসছে দলের অন্দরে।
তৃণমূল ভবনে যখন মুকুল রায়কে স্বাগত ও অভিনন্দন জানানোর পালা চলছে তখন কুনাল ঘোষ ভেতরে ভেতরে নিশ্চয়ই আফসোস করছেন “আমি কি বলেছিলাম!” হয়তো মিডিয়াতে বসে তার সাফাইও দেবেন। তখন একটাই উক্তি বা একটাই লাইন হতে পারে যে রাজনীতিতে সবই সম্ভব। তাহলে ভবিষ্যতে এধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত কুনাল বাবুর মতো নেতৃত্বদের।
এই বাংলায় ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় থেকে জ্যোতি বসু, অজয় মুখোপাধ্যায় থেকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ সংসদীয় রাজনীতির আবির্ভাব হয়েছে। বহু নেতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেছেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণপন্থী দল তৃণমূল কংগ্রেসে যেভাবে আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে, তা সত্যি দৃষ্টিকটু।
অবশ্য, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাজনীতিতে যত সংখ্যা বাড়বে, অঙ্ক যত বাড়বে তাতে বীজগণিত সহজ হয়। সেই বীজগণিতের ফর্মুলা অনুযায়ী কুণাল বাবু কেনো বলেছিলেন নাকি তাকে দিয়ে করানো হয়েছিল?
বাংলা ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। ২০২৪ সালে দিদিকে চাই প্রধানমন্ত্রী স্লোগান উঠছে। তার মাঝে মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তন বাংলার মানুষ যেমন মনে রাখবে তেমনি মনে রাখবে কুণাল ঘোষের বক্তব্য। এখন যত সময় গড়াবে গেরুয়া দল কার্যত ভাঙবে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে। অতএব আলটপকা মন্তব্য যারা করেন তাদের বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু নেতা।
পুরোনো ঘরে নতুন ইনিংসের জন্য মুূকুল রায়কে শুভেচ্ছাঃ জয়প্রকাশ মজুমদার
কুনাল ঘোষের কথা সেই উক্তিগুলি নিচুতলার কর্মীরা আজ বিকেলের পর থেকেই আলোচনা করছেন। মুকুল আসার সিদ্ধান্ত আজকের নয়। নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই পাকাপাকিভাবে সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়। তাহলে সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ কী কারণে বা কার ইশারায় এই ধরনের আক্রমণ করেছিলেন।
যদিও আম ও দুধে এক হবে সেটা কুণাল ঘোষ ও মুকুল রায় উভয়ই জানতেন। তাই আলটপকা কথা ভুলে গিয়ে কুণাল বাবু এখন মুকুল বাবুর সঙ্গে আলিঙ্গন করতেও পিছপা হবেন না। এটা রাজনৈতিক সৌজন্যে নাকি অন্য কিছু? বরং বলা ভালো বাংলাj নতুন প্রজন্ম তার এই শব্দ ও ফ্রেম এবং আচার-আচরণ ব্যবহার দেখে রাজনীতিটা করবে কিনা তা ভাবতে শুরু করবে।