ভোটের আগে ক্লাবগুলিকে অনুদানের ঘোষণায় কেন এত সমালোচনা? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রতিবারের মতো এইবারও রাজ্যের ক্লাবগুলোকে অনুদান দিল রাজ্য সরকার। তবে এইবার আর নতুন কোনও ক্লাব নয়, পুরনো ৮ হাজার ২৮৯ টি ক্লাবকেই দেওয়া হবে অনুদান। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে ‘খেলাশ্রী’ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর সঙ্গে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ১০০০ টাকা করে পেনশন দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনেই মঞ্চ থেকেই তিনি কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গন উদ্বোধন করেন।

বাংলার বুকে মমতাই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি ক্লাবকে টেনে এনেছেন সরকারের ছত্রছায়ায়। তাঁর এই প্রচেষ্টা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে যতই সমালোচনা হোক না কেন, এই কাজ করতে কেউ এখনও পর্যন্ত তাঁকে আটকে দিতে পারেনি। আর এদিন তো সেই অনুদান প্রশ্নেই বিরোধী থেকে সমালোচকদের একহাত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই সঙ্গে দিয়ে দিলেন ব্যাখা কেন তিনি বাংলার হাজার হাজার ক্লাবকে প্রতিবছর আর্থিক অনুদান দিয়ে চলেছেন। একই সঙ্গে দিলেন রাজ্যে শিল্পগত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যত চিত্র। দাবি করলেন আগামী দিনে বাংলাই হতে চলেছে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় দরজা।

এদিন নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বসেছিল ‘খেলাশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের কৃতি ক্রীড়াবিদদের সম্মাননা জ্ঞাপন ও রাজ্যের খেলাধূলা তথা ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদানের অনুষ্ঠান।

টার্গেট একুশ: অনুব্রতের গড়ে আসতে চলেছেন নাড্ডা-রাজনাথ-স্মৃতি-যোগী

২০১১-১২ আর্থিক বছর থেকে চালু হওয়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের খেলাধূলার সার্বিক মানোন্নয়ন এবং ক্লাবগুলির কিছু স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি যেমন ক্রীড়া সরঞ্জামের কেনাকাটা, সেই সব সরঞ্জাম রাখার জন্য ঘর নির্মাণ প্রভৃতির জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে।

এদিন সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর ছেত্রীকে জীবনকৃতী সম্মাণে ভূষিত করেন। পাশাপাশি ৭জন ক্রীড়াব্যক্তিত্বকে ‘ক্রীড়াগুরু’, ১৬জনকে ‘খেলসম্মান’, ১৪জন ‘বাংলার গৌরব’ ও ১২জনকে ‘খেলরত্ন প্রদান করেন। সেই অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবগুলিকে নিয়ে সওয়াল করেন।

বলেন, ‘ক্লাবকে সাহায্য করলে অনেকের রাগ হয় কেন? ক্লাবগুলিই তো মানুষের পাশে থাকে। আপদে বিপদে এই ক্লাবগুলোই তো মানুষের পাশে দাঁড়ায়। রক্তদান শিবিরের আয়োজন থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এই ক্লাবগুলোই তো করে থাকে। গত ৩ বছরে আমরা ১ লক্ষ টাকা করে ২৬ হাজার ক্লাবকে সাহায্য করেছি। দুর্গাপুজোর সময়েও আমরা ওদের অনুদান দিয়েছি। ৩৪টি ক্রীড়া সংস্থাকে ৫ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিয়েছি।’

একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী একহাত নিয়েছেন রাজ্যের সেই সব সমালোচকদের যারা শিল্প হচ্ছে না বলে চিত্‍কার জুড়ে দিয়েছেন।

তাঁদের লক্ষ্য করেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যতই করো চিত্‍কার বাংলাকে কেউ টেনে নামাতে পারবে না। আগামী দিনে কালচারাল ডেস্টিনেশন হতে চলেছে বাংলা। বাংলা আজ সারা পৃথিবীর গন্তব্য। এদিন ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টের উদ্বোধন করা হল। সেখানে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় দরজা হল বাংলা। আগামী পাঁচ বছরে আরও দেড় কোটি সংস্থান হবে।’

রাজ্যসভায় গুলাম নবী আজাদের বিদায়ী ভাষণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী

এদিনের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও খেলাধুলার সঙ্গে জুড়ে দেন। বলেন, ‘আমি মনে করি চাকরিতে খেলাধূলার জন্য সংরক্ষন থাকা উচিত। কারন খেলা ধর্মের পরিচয় চায় না। আগামী দিনে রাজ্যজুড়ে ১০০ জনকে বাছা হবে। তাঁরা যখনই বাইরে কোনও ইভেন্টে যাবেন, তাঁদের সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের আমরা আবার থেকে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে পেনশনও দেব। কেন্দ্র তো বাংলাকে কিছুই দেয়নি। আমরা কিন্তু মানুষকে দেখবো। আজ আমরা ৮,২৮৯টি ক্লাবকে ৮২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছি। তবে ক্লাবগুলোকে সাহায্য করার জন্য অনেক বাবুদের আবার রাগ হয়। কিন্তু এই ক্লাবগুলোই মানুষের পাশে থাকে। নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে।’

কার্যত রাজ্যের ক্লাবগুলির পাশে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন এর আগে রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে সেভাবে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট