ফিনিক্সের খোঁজে বাম দুর্গ…
শুভজিৎ চক্রবর্তী
লোকসভায় শূন্য, বিধানসভায় শূন্য। রাজ্যে সিপি(আই)এমের পতন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ক্রমাগত ভোট শতাংশ হ্রাসের পিছনে কারা দায়ী? বিধানসভায় বামফ্রন্টের ভরাডুবির জন্য কারা দায়ী? এই প্রশ্ন নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে আলিমুদ্দিনে। জোটে একে অপরের ওপর ভরসা খুইয়ে ফেলা? নাকি জোট নিয়ে জট মানুষকে ভরসা দিতে পারেনি?
২০১৬ সালে সিপি(আই)এমের নেতৃত্বে জোটের কথা চলছিল। কিন্তু শেষ অবধি তা টিকতে পারেনি। ২০১৯ এও একই ঘটনা ঘটে। ২০২১ এও একই ঘটনা শুরু হয়। পরে অবশ্য পুরো বিষয়টিকে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই বলে ঘোষণা করা হয়। প্রথমে জোট নিয়ে তালঘোল পাকানো, এরপর আসন নিয়ে সমঝোতার অভাব, শেষে দুই সঙ্গী আইএসএফ এবং কংগ্রেসের কাদা ছোঁড়াছুড়ি জয়ের পথ আটকে দেয় বামেদের।
বাম নেতাদের কথাতেই তাঁরা যে বিজেপি বিরোধী শক্তি, সেটাই তাঁরা প্রচারে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। প্রচারের বিষয়টি যেমন নজরে রাখা দরকার ছিল, সেইসঙ্গে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বামেরা। লোকসভার পর বিধানসভা, দলের ভরাডুবী নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন একাধিক নেতারা।
ভোট গণনার শুরুতেই টেবিল ছেড়ে চলে আসেন দীর্ঘ সময়ের সাংসদ এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এরপর গণনার শেষেই সংবাদমাধ্যমে বসেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন তন্ময় ভট্টাচার্য। আবার প্রচারের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেন প্রবীন নেতা এবং রাজ্যের আরও এক প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীপদে একাধিক নতুন মুখ তুলে ধরেছিল বামেরা। ঐশী, দিপ্সীতা, সৃজন, মীনাক্ষী, পৃথা, সায়নদীপ, প্রতীকুর সহ একাধিক ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বহু তরতাজা মুখ নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নামে সিপি(আই)এম।
মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল তৃণমূল
কিন্তু বিজেপি বিরোধিতায় তাঁদের ওপর ভরসা করতে পারেনি সাধারণ মানুষ। লড়াইয়ের অঙ্ক মেলাতে গিয়ে ভুল করে বসেছেন মহম্মদ সেলিম, সুশান্ত ঘোষ, ফুয়াদ হালিম, সুজন চক্রবর্তীরা। মানুষের তরফে প্রত্যাশা ছিল নতুন মুখের সঙ্গে বেশ কিছু প্রবীন নেতা বিধানসভাতে থাকলেই প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠবে সরকারের। কিন্তু হয়নি।
যার প্রধান কারণ হিসাবে উঠে আসছে আইএসএফের সঙ্গে জোট। বামেদের সঙ্গে আইএসএফের জোট দলের নীচু তলার অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের ভোট এবারে ঘুরেছে তৃণমূল এবং বিজেপিতে। আবার অনেকে জোটের সমর্থনে রায় দিলেও সেই সংখ্যা খুবই কম।
সম্প্রতি কলকাতা শহর সহ সারা রাজ্যে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ক্যাম্পেন চলে। সেই অভিযানে বাম দল সিপিআই(এমএল)কে দেখা গেলেও। সিপি(আই)এম, সিপিআই দলকে সেভাবে দেখা যায়নি। অনেকে বলেছিলেন বিজেপিকে নয় তো কাকে? উত্তর প্রথম সারীতে অবশ্যই উঠে এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
ফের একদিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ পার করল
একইসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে সিএএ এর বিরোধিতায় প্রচারের আলোকে থেকেছেন মমতাই। তাই বিপুল সংখ্যক আসন পকেটে পুড়ে বিধানসভায় জয়ী হয়েছেন তিনি। এখানেই দলের ম্যানেজমেন্টে গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন পুরানো বাম কর্মীরা।
৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আলিমুদ্দিনের বয়স যত বাড়ছে তাঁর ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এখন আর পুরাতন ঐতিহ্যের সঙ্গে না থেকে নতুন করে দলকে উজ্জীবিত করতে চাইছেন দলীয় কর্মীরা। ভোট মেটার আগে থেকেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন তাঁরা। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দল ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এখন ফিনিক্সের খোঁজ করছে মুজাফর আহমেদ ভবন।