নিম্ন আয়ের ১০ শতাংশ সংরক্ষণে সব সমস্যা মিটবে কি ?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আইন করে বলেছিল, এবার থেকে সাধারণ শ্রেণি অর্থাৎ জেনারেল কাস্টের নিম্ন আয়ভুক্তদের জন্য চাকরি ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে। ১০৩ তম সংবিধান সংশোধনী এনে সংসদে এই আইন পাস করানো হয়েছিল।

এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ওবিসি, এসসি, এসটিদের নানান সংগঠন। তারা সামাজিক ন্যায়ের যুক্তি তুলে ধরে জেনারেল কাস্টের এই সংরক্ষণের তীব্র বিরোধিতা করে। তবে সোমবার সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চে ৩-২ ভোটে কেন্দ্রের আইন মান্যতা পেয়েছে।

এই খবর সোমবারের সবচেয়ে বড় খবরগুলোর অন্যতম ছিল। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে অসন্তুষ্ট সংরক্ষিত শ্রেণিগুলির অধিকার নিয়ে লড়াই করা বিভিন্ন সংগঠন। তারা এই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। এই বিষয়ে দুটি পরস্পরবিরোধী জোরালো মতামত উঠে আসছে।

একপক্ষ আয়ের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে দু’হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের বক্তব্যই হল, জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণের থেকে আয়ের নিরিখের সংরক্ষণ অনেক বেশি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা। অবশ্য এক্ষেত্রেও দুটি বিভাজন আছে। আরএসএস মূলত সাধারণ শ্রেণির জন্য আয়ের নিরিখে এই সংরক্ষণ চেয়েছিল।

সিএএ চালু করার দিকে এগোচ্ছে বিজেপি, তৎপরতাহীন বিরোধী শিবির

যাকে আইন করে মান্যতা দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে। তবে অপর একটি অংশ শুধু সাধারণ শ্রেণির জন্য নয়, এসসি-ওবিসি-এসটি সবার মধ্যেই আয়ের নিরিখে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। তাদের মতে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর জাতপাতের নিরিখে সংরক্ষণের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। যদিও ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সামাজিক সংরক্ষণ একেবারে তুলে দেওয়ার দিকে এক্ষুনি পা বাড়াবে বলে মনে হয় না।

অপর একটি অংশ অবশ্য জাতপাতের নিরিখের সংরক্ষণের পক্ষে। মূলত ওবিসি-এসসি-এসটি শ্রেণির আওতাধীন এই অংশের মতে, ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জাতপাতের ফলে একটা বড় অংশের মানুষ সামাজিক বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সংবিধান প্রণয়নের সময় এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সংরক্ষণের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছিল।

ফলে কোনভাবে সাধারণ শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হলে তা সেই সামাজিক ন্যায়ের ধারণাকে নস্যাৎ করে দেবে। যদিও এর পাল্টা যুক্তি আছে। কারণ কেন্দ্র তাদের আইনে বলা হয়েছে তেমনই সর্বোচ্চ আদালত পরিস্কার জানিয়েছে, সাধারণ শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত কোন‌ও সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। যে ৫০ শতাংশ অসংরক্ষিত আসন থাকে তারই মধ্যে সাধারণ শ্রেণির নিম্ন আয়ের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

তবে এই ১০ শতাংশ সংরক্ষণে মাপকাঠি নিয়ে, অর্থাৎ আয়ের যে সীমা নির্ধারণ করেছে সরকার তা নিয়ে সাধারণ শ্রেণির মধ্যেই প্রশ্ন আছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী কোন‌ও পরিবার বছরে ৮ লক্ষ টাকার কম উপার্জন করলে তারা এ নিম্ন আয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে।

অর্থাৎ মাসে ৬৬,৬৬৭ টাকার কম আয় করলেই এই সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে। এদিকে একাংশের দাবি ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী মাসে ৬০০০০ টাকার উপার্জনটাই অনেক বেশি। ফলে প্রকৃত নিম্ন আয় শ্রেণির মানুষজন আদতে এই সংরক্ষণের সুবিধা পাবে না বলেই তাদের আশঙ্কা।

সম্পর্কিত পোস্ট