লকডাউন কি উঠবে? টেস্টের রিপোর্টই ঠিক করবে ভবিষ্যৎ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সর্নিকা দত্ত
বর্তমানে যে পরিমাণে করোনা পরীক্ষা প্রতিদিন হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় বারংবার একথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। টেস্টের সংখ্যায় যতই রাজ্যকে দোষারোপ করা হোক, কমবেশি একই অবস্থা যে গোটা দেশের। তথ্য এবং পরিসংখ্যান অন্তত সে কথাই বলছে।
এই অবস্থায় সোমবারই বিশেষজ্ঞ তথা ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক টেস্টের পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। সোমবারই এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও কেন্দ্রের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক জেলায় নিয়ম করে দিনে ৮০০ টেস্ট করতে হবে।
১৮ মে থেকে নতুন পর্যায়ের লকডাউন চালু হবে জানালেন প্রধানমন্ত্রী
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
- তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মহামারী বা অতিমারী তখনই নিয়ন্ত্রণে বলা যায় যখন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে আক্রান্ত থাকেন দুজনের কম।
- তবে এই মুহূর্তে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা দেখা যাচ্ছে ৩.৯ থেকে ৪.১-এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে।
- অতএব করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও সক্রিয়তার প্রয়োজন রয়েছে।
- এছাড়া বিষয়টিকে অন্যভাবেও পর্যবেক্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।
- অতিমারীর ক্ষেত্রে ৫০ টা টেস্ট করে যদি একজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যায় তাহলে বলা হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসছে।
- কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে ২২ জন রোগীকে পরীক্ষা করলে একজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
- ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে নিজেকে করোনা মুক্ত দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
- সেখানে ৯৮০ টেস্ট করলে একজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
- অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ১৬৬ জন রোগীকে পরীক্ষা করলে একজন পজেটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
- অস্ট্রেলিয়ায় ১২৫ জনের মধ্যে একজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এটা হলো যাদের অবস্থা ভালোর দিকে তাদের কথা।
- আবার যেখানে করোনা এই মুহূর্তে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সেখানে পরিসংখ্যান অন্যরকম।
- ব্রিটেনে এখন সাড়ে চার জন রোগী পরীক্ষা করলে একজন পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
- আমেরিকার ক্ষেত্রে ছয়জনকে টেস্ট করলে মিলছে একজন পজেটিভ।
- ইতালির ক্ষেত্রে আবার প্রতি ১০ জনে একজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
- এই দিক থেকে বিচার করলে ভারত এই মুহূর্তে যেমন খুব খারাপ অবস্থায় নেই। তেমনি খুব একটা ভাল অবস্থায় রয়েছে তাও বলা যাচ্ছে না। বরং বলাই চলে ভারত রয়েছে মাঝামাঝি অবস্থায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই, সাফ জানাল কেন্দ্র
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
- এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা দেখে উত্তেজিত হলে চলবে না। বরং এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কতগুলো টেস্ট করে কতজন পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে সেটাকেই আরও বেশি করে ফোকাস করতে হবে।
- ভারতে এই মুহূর্তে করোনা টেস্ট হচ্ছে প্রতি দিন ৮৫ হাজার জনের।
- রবিবার পর্যন্ত আমাদের দেশে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬ লক্ষ্য ৭৩ হাজার ৬৬৮ জনের।
- ৪৭৬ টি সরকারি-বেসরকারি ল্যাবে এই পরীক্ষা হচ্ছে।
- এপ্রিলের শুরুতে প্রতি ১০ লাখে করণা পরীক্ষা হতো ১৪৯ জনের। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৯৮৪।
- ১৩৮ কোটি মানুষের দেশ ভারত।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন এত বিপুল জনসংখ্যার দেশে কি এই সংখ্যাটা যথেষ্ট?
- এই মুহূর্তে অনেকেই চাইছে লকডাউন তুলে দেওয়া হোক। ইতিমধ্যেই রেল চালানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
- কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ মানুষের পরীক্ষার পরেই লকডাউনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা সম্ভব।
- এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে গেলে আমাদের ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষের পরীক্ষা করতে হবে।
- রবিবার পর্যন্ত মাত্র ১৬ লক্ষ মানুষের এখনো পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এখনও ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষের পরীক্ষা আমাদের করতে হবে। তিন মাস কুড়ি দিনে এই পরীক্ষা করা হয়েছে।
- দেশের মোট জনসংখ্যার ০.১১ শতাংশকেই এই সময় পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে গেলে আরো ব্যাপক হারে টেস্ট করতে হবে।
- এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯.৬ শতাংশ পরীক্ষা করা গিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে গেলে এখনো ৯০ শতাংশ পরীক্ষা আমাদের করতে হবে।
- এখন প্রতিদিন টেস্ট হচ্ছে গড়ে ৮৫০০০ করে। এই টেস্ট করা হয় তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ছ’মাস।
- ১ লাখ করে রোজ টেস্ট করলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে পাঁচ মাসে।
- দু লাখ করে রোজ টেস্ট করলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে আড়াই মাসে।
- ৫ লাখ করে টেস্ট করলে আমরা মাত্র এক মাসেই লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছে যেতে পারব।
- অর্থাৎ বর্তমানে যে পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে তাকে ২.৬ গুণ করা গেলেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব।
রেড জোনকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ মুখ্যমন্ত্রীর
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সোমবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের সব জেলায় যে ব্যাপক টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছে তা মূলত এই লক্ষ্যেই। একইসঙ্গে বাছাই করা জেলায় স্বাস্থ্য সমীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে প্রত্যেক জেলায় নজরদারির জন্য দশটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকতে হবে। এদিনের নির্দেশিকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর্মী এবং বয়স্কদের বেশি করে পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।
লালা রস ছড়া এখানে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টেস্টের কথা বলা হয়েছে। এখন দেখার এই নির্দেশিকার পর কিভাবে এগোয় কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি।
বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন ব্যাপক টেস্ট ছাড়া কোনোভাবেই এই করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় সম্ভব নয়।