ব্রাত্য রবি ! কোচ রাজার গড়ে বেসামাল শাসকদল

শুভজিত চক্রবর্তী

যত সময় যাচ্ছে তত বাংলার রাজনীতির চালচিত্রের পরিবর্তন ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে। ভোটের পূর্ব নির্ধারিত সমীক্ষা আর ভোটের পরিসংখ্যান সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে।

ভারতের মত গণতান্ত্রিক দেশে এই ঘটনা সুখকর হলেও, তোর্সা পাড়ের ঘাসফুল শিবিরের জন্য এটা কিন্তু বেশ চিন্তার কারণ। এই মুহুর্তে ২১ এর ভোট সমীক্ষা করা ঠিক হবে না। তবুও ১৯ এর মেগা ইভেন্টের পর ভোট অঙ্ক মিলিয়ে দেখা যেতেই পারে।

স্বভাবতই উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতি এক নয়। তাই এখানের ভোটের হিসেবটাও আলাদা। তার ওপর কোচবিহার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ৭০ দশক অথবা তার আগেও পুর্ববঙ্গ ছেড়ে আসা মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশী।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোচবিহারে শতকরা ৩০ শতাংশ রাজবংশীর বসবাস। এছাড়া রয়েছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষ। বাকি ৫০ থেকে ৫২ শতাংশ জেনারেল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস এ জেলায়।

জেলায় বিজেপির ক্ষমতায়নের কারণ পুর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ অর্থাৎ যারা ভাটিয়া নামে পরিচিত তাঁদের ভোট ব্যাঙ্কে হাত বসিয়েছে বিজেপি। সেইসঙ্গে রাজবংশী ভোট যায় বিজেপির ঝুলিতে। যার ফলেই সংসদে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পান নিশীথ প্রামাণিকের মত নেতা।

রাজনৈতিকে বিশ্লেষকদের মতে কোচবিহারে তৃণমূলের সামনের সারিতে কোনও মুসলিম নেতা নেই ঠিকই। কিন্তু একেবারে তৃণমূল স্তরে মুসলিম নেতাদের ছত্রছায়ায় আসতে চায়নি রাজবংশীরা। তাই গেরুয়া শিবিরকে বেছে নিতে বাধ্য হয় তাঁরা।

পাশাপাশি নির্বাচনী ইস্তেহারে সিটিজেনশিপ  অ্যামেডমেন্টের মত বিষয়কে সামনে এনে ভাটিয়া ভোটকেও টার্গেট করে গেরুয়া শিবির।

এক বছরে সময় বদলেছে। ঠাকুর মদনমোহনের জেলায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে সরিয়ে পার্থ প্রতিম রায়কে জেলার দায়িত্ব দেয় তৃণমূল। কিন্তু বিজেপির আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে ছিল পোড় খাওয়া রবীন্দ্রনাথের নাম।

রাজ্যের সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রাজনৈতিক পুনর্বাসন নাকি বনবাস?

বিজেপির একাংশের দাবী কোচবিহারে বিজেপিকে পর্যদুস্ত করতে পারার ক্ষমতা দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুরাতন সাথী রবি ঘোষের রয়েছে। কিন্তু হালিতে দলের নতুন সিদ্ধান্তে ফের যেন সমস্ত কিছু ওলটপালট হয়ে গেল।

পুরাতন এবং নতুনের সংমিশ্রণে দলকে চাঙ্গা করতে গিয়ে পার্থপ্রতিম রায়ের মত নেতাকে সামনের সারিতে আনায় ঢোঁক গিলতে শুরু করেছেন গ্রাউন্ড লেভেলের নেতারা। একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মত হেভিওয়েট নেতাকে রাজ্য সহ সভাপতি পদে নিযুক্ত করে তাঁকে এককোণে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।

এতে করে তোর্সা পাড়ে পদ্মফুলের চাষ খানিকটা বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।  কিন্তু এতো সহজে কোনও জেলার রাজনৈতিক পরিবর্তন কি সম্ভব?

কোচবিহারের ৯ টি আসনের মধ্যে ৫ টি আসন এসসি এবং চারটি জেনারেল। এই পাঁচটির মধ্যে তিনটি  অর্থাত কোচবিহার উত্তর, মাথাভাঙা এবং মেখলিগঞ্জ বিধানসভায় রাজবংশীদের ভোট সবথেকে বেশী। এখান থেকেই কোচবিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই জেলায় রাজবংশী ভোটকে না ঘাঁটিয়ে বরং তাকেই হাতিয়ার করতে পারলে আখেরে লাভ তৃণমূলের। কারণ লোকসভা নির্বাচনের পর রাজবংশীদের দাবী বা মেটায় সেই ভোটের অনেকটাই তৃণমূলে ঘুরতে চলেছে। সেটাকে হাতছাড়া করলে কোচবিহারে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে টান পড়তে পারে৷

তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলায় পিকে শিবিরের রিসার্চে গাফিলতি রয়েছে। এখানকার নেতারা কোনও তথ্যের ওপর নয়, বরং একেবারে গ্রাউন্ড লেভেলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ট পার্থ প্রতিম রায়কে দলের দায়িত্ব দেওয়ায় অনেকের মধ্যে গাছাড়া মনোভাব এসে গিয়েছে।

দীর্ঘ সময়ের বদলে স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কারণে দলকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। এমনও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে কোচ রাজার গড়ে। তাই বিধানসভার আগে রাজবংশীদের দলে না ফেরাতে পারলে কোচবিহার তৃণমূলের জন্য মাথার ওপর কালো মেঘ আসতে চলেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট