নারী তুমি অনন্যাঃ কলমে সৃজিতা মুখার্জী
সমাজ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে নারী দিবসের সংজ্ঞাও। আজও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী হেনস্থার শিকার। কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাড়িতেও সুরক্ষিত নন তাঁরা। শুধুমাত্র বিভিন্ন রকম উদ্যোগ ও সেলিব্রেশনের মধ্যে দিয়েই বছরের পর বছর পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারীদিবস।
আমরা কথা বলেছিলাম সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে। কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন তাঁরা আন্তর্জাতিক নারীদিবস দিনটি। আমাদের বিশেষ সেগমেন্ট ‘নারী তুমি অনন্যা’ র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল সেই সব দৃষ্টিভঙ্গি। আজ তৃতীয় পর্ব।
সৃজিতা মুখার্জী, অভিনেত্রী
বর্তমান সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস দিনটি আলাদা করে পালন করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না।
বছরের নির্দিষ্ট একটা দিনে নারীদের সম্মান জানাতে সেলিব্রেট করব,তা কখনই হতে পারে না। প্রত্যেক দিন তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত।
এক্ষেত্রে যেটা বলার, আমার পরিবারে বরাবরই নারীরা যথাযথ সম্মান পেয়েছে। আমি খুব লাকী যে আমাকে কোনোদিন আমার পরিবারের তরফে বলা হয়নি, তুমি মেয়ে তাই তুমি এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না। সেই কারণে আমার কোনোদিন আলাদা করে মনে হয়নি নির্দিষ্ট একটা দিনেই নারীদের সম্মান জানানো টা বাধ্যতামূলক।
রোজ খবরের কাগজে, নিউজে যা দেখি, খুব খারাপ লাগে। মেয়েদের সঙ্গে এমন যে হতে পারে সেটা আমি ভাবতেই পারি না।কারণ আমার চোখে দেখা এখনো পর্যন্ত যেসব পুরুষরা রয়েছেন, তারা খুব অন্যরকম। তাই তাদের দেখে দেখে আমি অভ্যস্ত। ভাবনা তেই আসেনা যে পুরুষ জাতি এর বাইরেও অন্যরকম হতে পারে।
তাই একটা দিন সম্মান জানানোর থেকে, পুরুষদের এটা বোঝা উচিত নারীরা তাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এখন যা দিনকাল পড়েছে তাতে মহিলাদেরই বেশী করে মহিলাদের সম্মান জানানো প্রয়োজন। এটা প্রচন্ডভাবে প্রয়োজন। তবেই একটা মেয়ে যতটা এগিয়েছে, আরও এগোতে সম্ভবপর হবে।
উদাহরণ স্বরুপ আমি নিজে। আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। তাঁরা অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন। তবে এমন না যে কোনো কিছুই করতে দেবে না। আমি এমন শিক্ষা পেয়েছি, যে তুমি তোমার মত করে এগিয়ে চলো। আমরা তোমার পাশে আছি। তোমাকে নিজেকে শিখতে হবে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল।
আমার পরিবার থেকে আমি প্রথম যে, অভিনয় জগতে পা রেখেছি। আমার পরিবারের সকলে আমাকে খুব সাপোর্ট করেছে। বিশেষ করব আমি বলব আমার মায়ের কথা। আমার বাবা প্রথম দিকে রাজি না থাকলেও এখন সবথেকে বেশী সাপোর্ট করে। নারীশত্রুতা কখনই উচিত না। শুধু নারী বলেই না, সম্পূর্ণ মনুষ্য জাতির এই সমস্যাটা রয়েছে। কারোর উন্নতি দেখলেই তাকে টেনে নীচে নামিয়ে আনো।তাই আমার মনে হয় মানসিকতা বদল টা সবার আগে প্রয়োজন।
দেশ জুড়ে এখন অনেক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিলারা। নিঃসন্দেহে এটা ভাল দিক একটা। তবে দেশ জুড়ে এই যে হিংসাত্মক একটা পরিস্থিতি, আমার মনে হয় সেটা বদল করা প্রয়োজন।
তবে নেতিবাচক দিক হল অনেকক্ষেত্রে দেখেছি প্রতিবাদের ধরণ টা মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছুটা দৃষ্টিকটু। আমার মনে হয় সেটা না করাই উচিত।
সবশেষে বলব Women’s are now doing fantastic.. এভাবেই সমাজের প্রত্যেক নারীকে এগিয়ে যেতে হবে। আরও দৃঢ় এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে মেয়েদের। তবেই সমাজে আরও মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে তারা সক্ষম হবে।