জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়েও বাঙালীর হৃদয়ে আপনি ‘অপরাজিত’…..
শুভজিৎ চক্রবর্তী
তখন ক্লাস ওয়ান অথবা টু হবে। তখন নন্দনে ছোটদের চলচ্চিত্র উৎসব চলছিল৷ আমি নাছোড়বান্দা।যাবোই। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গোটা রাস্তা মাটিতে শুয়ে কেঁদে ফিরেছি। কিন্তু বাড়িতে কেউই রাজি হচ্ছেনা।
মনের মধ্যে প্রশ্ন একটাই ছিল সবাই ফেলুদাকে দেখবে আর আমি দেখবো না? পরে স্কুল মাস্টারমশাই বাবার সঙ্গে কথা বললে তবেই ছুটি মঞ্জুর হয়। সেইবার প্রথম একটা আস্ত হাঁ করা পর্দায় দেখেছিলাম ফেলুদাকে।
সোনার কেল্লায় মুকুলকে খুঁজতে বেরিয়ে পরতে পরতে ধারালো বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও অসাধ্য সাধন করছেন। তারপর ফেলুদাকে দেখলাম হীরক রাজার দেশেতে।
সেই প্রথমবার দাদু আমার ভুল ভেঙে দিয়ে বলেছিল সিনেমার অভিনেতা হয়। তাঁদের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। পরে জয়বাবা ফেলুনাথ এর সময় দেখে ভেবেছিলাম এই তো ফেলুদা। কিন্তু দাদুকে প্রশ্ন করাটা বোকামির পরিচয় দেওয়া হবে না তো? এই ভেবে আর প্রশ্ন করিনি।
পরে ফেলুদার অনেক ছবি দেখেছিলাম। বাবা দু’জনের নাম বলেছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর সব্যসাচী চক্রবর্তী। ছোটবেলা থেকে চেনা প্রদোশ মিত্তিরের আলাদা নাম রয়েছে! পরে ওনাকে দেখেছিলাম এক সময়ের ব্লক ব্লাস্টার ছবি মিনিস্টার ফাটাকেষ্টতে।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-chief-minister-expressed-his-condolences-on-the-demise-of-the-legend-saumitra-chatterjee-death/
এরপর যখন বড়ো হয়েছি নতুন ছবিতে ওনাকে দেখেছি। ‘বেলশেষে’ ছবিতে ওনাকে দেখার আগে সৌমিত্রবাবুর ছবি নিয়ে প্রচুর সো কল্ড রিসার্চ করেছি। ‘অপুর সংসার’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘দেবী’, ‘চারুলতা’, ‘পরিনীতা’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘দেবদাস’ ছবিগুলো নিয়ে নাড়াঘাঁটা করেছি। যদিও প্রত্যেকটি ছবি সিনিয়রদের রেকোমেন্ড করা।
তবে বেলাশেষের পর থেকে মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল ৷ এরপর ‘পোস্ত’, ‘সমান্তরাল’ দেখেছি। এখনকার দিনে এর থেকে ভালো ছবি দেখা যাবে না। আর অভিনয়ের মাধ্যমে যিনি জোর করে হলের সিটে বসিয়ে রেখেছেন তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷
‘ময়ুরাক্ষী’ দেখে আমার বাবার কথা মনে পড়েছিল৷ যেভাবে দুই চট্টোপাধ্যায় গোটা ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে গিয়েছেন, সেটা বলার মতো নয়। আর ‘সাঁঝাবাতি’ তে আমার হারিয়ে যাওয়া দাদু।
এখন বুঝতে পেরেছি সিনেমায় কোনও চরিত্র হয় না। অভিনেতারা অভিনয় করেন। কিন্তু এতগুলো ছবিতে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ অবধি কতগুলি ছবি করেছেন সেটা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব৷
আমি জীবনে একবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখেছিলাম। একটা এড শ্যুটের সময় আমার এক সিনিয়রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেছিলাম। কিন্তু কিছু বলতে পারিনি।
যদি সব ছাড়িয়ে, দুটি হাত বাড়িয়ে। হারাবার খুশিতে যাই শুধু হারিয়ে। এই লাইনগুলোই আমার কানের সামনে বেজে চলছিল অনবরত।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/soumitra-chatterjee-passws-away-today/
গত কয়েকদিন ধরেই শুনছিলাম সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তবে কি বয়সের কারণে খারাপ। দিনকতেক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ভাইরাল ভিডিও দেখছি। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের সময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেখা করছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷
মাইকের শব্দ শুনে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। জানিনা কোন আদর্শ। তবে বারবার তাঁর নিজের সঙ্গে লড়াই করার খবর সামনে আসতে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। উত্তম কুমারের পর উনিই তো ছিলেন বাঙালির ক্রাশ। আজ তিনি না ফেরার দেশে।
তাঁর রেখে যাওয়া অসামান্য কাজগুলি আগামী দিনে আমাদের পাথেয়। পড়ন্ত বেলায় নিভে গেল প্রদীপ। যেখানেই থাকবেন ভাল থাকবেন ফেলদুা।