রণক্ষেত্র উত্তর ত্রিপুরায় মৃত দুই, আহত ২৩
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের রিয়াং শরণার্থীদের শুধুমাত্র কাঞ্চনপুর মহকুমায় পুনর্বাসন দেওয়া যাবে না। এই দাবীতে সরব হয়ে আন্দোলন শুরু করে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি। সেই আন্দোলন রণক্ষেত্র আকার ধারন করে শনিবার।
আন্দোলনকারী এবং টিআরএস জওয়ানের সংঘর্ষে মৃত দুই এবং আহত ২৩ জন। নিহতদের মধ্যে একজন দমকল কর্মী এবং অপরজন দাশদার বাসিন্দা।
পাশাপাশি আহতদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গিয়েছে। তাদেরকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র উত্তর ত্রিপুরা। গত সোমবার থেকে পানিসাগর, চামথিলা এবং পেচারথলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ১২ থেকে ১৫ হাজার আন্দোলনকারীরা।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার উপজাতি রিফিউজিদের একটি দল ২৬ টি দল অ-উপজাতি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পেট্রোল পাম্প। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বাঁচেন ১১০ জন মানুষ। তারপর থেকেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা হাতের বাইরে চলে যায়।
শনিবার অবরোধস্থলে এসে পুলিশ ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় নিহত হয়েছেন দাশদার বাসিন্দা শ্রীকান্ত দাস। ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বুকে গুলি লাগে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
পুলিশের দাবী, অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছিলেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন ১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হন বিশ্বজিৎ দেববর্মা নামের একজন দমকল কর্মী। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুরো ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকারের তরফে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
নিহত বিশ্বজিৎ দেববর্মার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন দ্য ইন্ডিজেনিয়াস প্রোগেসিভ রিজিওনাল অ্যালায়েন্সের প্রধান প্রদ্যুত মাণিক্য দেববর্মা।
এবিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেভাবে এই ঘটনা ঘটালো হল তার তদন্ত করা হোক। আর দমকল কর্মীকে খুনের পিছনের কারা রয়েছে তাঁদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। কে এবং কারা এরকম সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটাচ্ছে তা দেখেই পূর্ণ তদন্তের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
TIPRA DEMANDS criminal action and arrest against people and organisation who despite repeated requests broke the law.TIPRA has also decided to give Rs 50,000 in support of the family of Biswajit Debbarma as a sign of solidarity in their moment of grief pic.twitter.com/MVMeZCVCYy
— Pradyot_Tripura (@PradyotManikya) November 22, 2020
গোটা ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে দাবী করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর। দ্য কোয়ারিকে তিনি জানিয়েছেন, এই সমস্যা অনেকদিন আগের। এর আগেও কেন্দ্র সরকার সুরাহা বের করেনি। আর এখনও তা হয়নি। এর মাঝে এক বছর আগে গণ মুক্তি পরিষদ এবং সিপি(আই)এম সংগঠনগুলিকে বাদ দিয়ে গোপন চুক্তি করে। রিয়াং শরণার্থীদেরকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা ছিল মিজো সরকারের। কিন্তু তাঁরা করেনি। এখন ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন কিভাবে দেওয়া হবে? প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ বাম নেতা।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তাও একটা পরামর্শ দিয়েছি যে সমস্ত বনাঞ্চলগুলি বাসযোগ্য সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে কোনও একটা রফাসূত্র বের করা যায় কিনা।
তিনি আরও বলেন, গোটা ঘটনায় একটা গোটা মহুকুমা অচল হয়ে রয়েছে। প্রশাশনিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাই প্রধান বিরোধী দল হিসাবে দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকে গোটা ঘটনার নিষ্পত্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টির জন্য কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন ত্রিপুরা পশ্চিমের সিপি(আই)এম সম্পাদক। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ‘অপদার্থ’ সরকার যেভাবে পুলিশ ব্যবহার করে আন্দোলন রুখতে চেয়েছিল তাতে লাভ হবে না। বরং স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।