উত্তরের বিবাদ সামলাতে ময়দানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, গৌতম দেবকে ফোনে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভোটের আগে তৃণমূলের অন্দরে যেভাবে মান-অভিমানের পালা চলছে তা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কখনো কুনাল ঘোষ কখনো আবার সৌগত রায়। কখনো সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো কখন আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সামলানোর চেষ্টা করছেন সকলকেই।
একদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে প্রসূন ব্যানার্জি । আবার শতাব্দী রায় থেকে শুরু করে সুদূর উত্তরের গৌতম দেব। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই ঝড় বইতে শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে যখন শতাব্দী রায় বেসুরো হতে শুরু করেন, তারপর থেকেই তাল কাটতে শুরু করেছিল শাসক শিবিরে। তা সামলাতেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।
তিনি বলেছিলেন একশটি চিঠি দেওয়ার পরেও তার বিধানসভা এলাকায় রাস্তা মেরামত হয়নি। উত্তরবঙ্গের ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধায়ক অভিযোগ করে বলেন, বহুবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। কোন সদুত্তর মেলেনি। একপ্রকার বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি।
এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। তার বিধানসভা এলাকায় একটি জনসভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এই দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তেমন কোনো কাজ হয়নি। অথচ এই দপ্তর যখন আমার হাতে ছিল তখন এখানে অনেক কাজ হয়েছে। কাজেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের চূড়ান্ত অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
তাতে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে গৌতম দেবের সুর কোন দিকে তা বুঝতে। গৌতম দেবের ক্ষোভ বাড়তে না দিয়েই সেই ক্ষোভের আগুনে জল ঢালতে ময়দানে নামলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার সকালেই পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবকে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানতে চান তিনি। গোটা ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার রাজনীতি এই মুহূর্তে কোন পথে বইছে তাও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন গৌতম দেব ।
এরপরেই গৌতম দেব জানান, দলের প্রতি তার কোন ক্ষোভ নেই। প্রথম দিন থেকে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দল করছেন । যতদিন রাজনীতিতে থাকবেন ততদিন একই প্লাটফর্মে থেকে কাজ করার চেষ্টা করবেন। অহেতুক জল্পনা তৈরি করেছে সংবাদমাধ্যম। এর কোন ভিত্তি নেই।
“আমি ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছি, আমার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটেনি”- কীসের ইঙ্গিত দিলেন রাজীব?
মুখ্যমন্ত্রী ময়দানে নামার আগেই অবশ্য গৌতম দেবকে ফোন করে গোটা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। বকলমে যিনি আবার কোচবিহারের পর্যবেক্ষকও বটে। দীর্ঘক্ষন কথা হয় গৌতম দেবের সঙ্গে । তিনি পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর কথা বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
রাজ্যের শাসক দল যখন ক্রমশ কোমর কষে নির্বাচনী ময়দানে নামতে প্রস্তুত হচ্ছে তখন একের পর এক নেতাকর্মী-বিধায়কদের বেসুরো চাল চলন অস্বস্তি তৈরি করছে রাজনৈতিক মহলে। প্রকাশ্য জনসভায় একের পর এক নেতৃত্বের মুখ খোলায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের কাজকর্ম এবং আমজনতার প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য নিয়েও।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে গৌতম দেবের বিবাদ সকলেই জানেন। প্রকাশ্য জনসভা থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরকে টার্গেট করে পর্যটন মন্ত্রীর বক্তব্যে প্রশ্ন আসলে তিনি কাকে নিশানা করতে চাইলেন? তিনি প্রকাশ না করলেও তা বেশ ভালই বুঝতে পারছেন আমজনতা।
রাজনৈতিক মহলের মতে গৌতম দেবের এই বক্তব্যের পর দপ্তর হস্তান্তরের বিষয়টি সামনে চলে আসছে। মনে করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর গৌতম দেবের হাত থেকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে দেওয়া প্রথম দিন থেকেই ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি তিনি ।
একের পর এক নেতৃত্বরা যখন প্রকাশ্য সভা থেকে দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, তিনি হয়তো একই পথে হাঁটলেন। তবে আপাতভাবে মুখ্যমন্ত্রী সমস্যার সমাধান করতে পারলেও আগামী দিনে ছাইচাপা আগুন প্রকাশ্যে চলে আসবে না তো? প্রশ্ন দলেরই নেতাকর্মীদের।