রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মর্যাদা দেয়নি দল, ক্ষোভ প্রকাশ কর্মীদের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার পদ থে.কে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের তরুণ মন্ত্রী এবং ডোমজুড়ে বিধায়ক ও দক্ষ সংগঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, হয়তো বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন তিনি। তবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ আগামী রাজনৈতিক কর্মপন্থা কি হবে রাজীবের তা স্পষ্ট করে তিনি নিজেই এখনো জানাননি।
ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই রাজীবকে নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে রাজীবের এই পদত্যাগ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না রাজ্যের শাসক শিবির। সৌগত রায় থেকে কুনাল ঘোষ সকলেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রাজীবের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়। হাওড়া সদরের চেয়ারম্যান অরুপ রায়, যার সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়েবের বিবাদ সর্বজনবিদিত। তিনি পর্যন্ত রাজীবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এখনো পর্যন্ত এই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজীব। তবে রাজীবের এই পদত্যাগকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং ম্যানেজমেন্ট পাস করা ক্লিনফেস রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের দলে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং জয়প্রকাশ মজুমদার এবং শমীক ভট্টাচার্য সকলেই আহ্বান জানাচ্ছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দিলীপ ঘোষের মন্তব্য রাজীবের ইস্তফা দিয়ে তৃণমূল সাম্রাজ্যের শেষের শুরু হল।
রাজীব ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, আগামীকাল পাকুরিয়া তৃণমূল পাটি অফিসে বসার কথা রয়েছে তাঁর। আগামীদিনে রাজীবের পথই তাদের পথ হবে বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। জানিয়ে রাখা প্রয়োজন বন মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেও দল থেকে বা বিধায়ক পদ থেকে থেকে এমনকি হাওড়ার কো-অর্ডিনেটর পদ থেকে ইস্তফা দেয়নি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়
শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের গুঞ্জন সামনে আসতেই তাকে ধরে রাখতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে ছিল রাজ্যের শাসক শিবির। তবে সেই সব প্রয়াসে জল ঢেলে দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজীবের ক্ষেত্রে শাসক শিবিরের সেই প্রয়াস সেই অর্থে দেখা যায়নি। তার কারণ শাসক শিবির ধরেই নিয়েছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝানো ব্যর্থ। তার কারণ তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।
বারবার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজীব। গতবছর অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় সম্প্রতি একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান থেকে রাজীব বলেছিলেন যখনই কোনো ভালো কাজ তিনি করতে গিয়েছেন তাকে রুখে দেওয়া হয়েছে। এর কারণ তার জানা নেই।
তিনি আরও বলেছিলেন ভালো কাজ করার পরেও তাকে পেছনের সারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই রাজিব ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ভাল কাজ করা কি অন্যায়? নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত নয় ?
সেচমন্ত্রী থাকাকালীন বালি পাচারকারীদের রুখেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে আচমকা সেচমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া তিনি মেনে নিতে পারেননি। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দলের একাধিক বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি বলেই জানিয়েছেন রাজীব ঘনিষ্ঠ কর্মীরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে একের পর এক মন্ত্রী এবং দক্ষ সাংগঠকের ইস্তফা সাংগঠনিক দিক থেকে অনেকটাই হালকা করে শাসক শিবিরের রাস। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২০২১ এর নির্বাচন ক্লাইম্যাক্সে ভরপুর। কে বলতে পারে ১০ বছর পর ফের পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটতে চলেছে এই বাংলায়। আর বর্তমানে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে এগুলি হয়তো তারই ইঙ্গিত।