বঙ্গ রাজনীতিতে লুপ্তপ্রায় কংগ্রেস, আদৌ কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?

|| নয়ন রায় ||

২০২১-এর পরাজয়ের পর কংগ্রেসের বোধোদয়। চলতি বছর নির্বাচনে কংগ্রেসের মতো সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের এই দুর্দশা বাংলার রাজনীতিতে আগে কেউ দেখেনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হারের পর সিদ্বান্ত নিয়েছেন ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার।এটাকে রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেসের পরাজয় বললে কম বলা হয়।

গ্রাম বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা নেতৃত্বের এই বেহাল দশা দেখে আশাহত। ২০২১ সালের পরাজয়ের পর কংগ্রেস কর্মীরা, যারা পতাকা বয়ে বেড়াতেন তারা ভাবছেন কোন পথে হাঁটবেন। আর কর্মীদের করুণ দশার জন্য রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব দায়ী। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

বর্তমানে কংগ্রেস কর্মীদের অবস্থা, ‘না ঘরকা না ঘাটকা’। না পারছে কংগ্রেস ছাড়তে আবার না পাচ্ছে অন্য কোন দলে নাম লেখাতে। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস কর্মীরা বর্তমানে আত্মহত্যার চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে।

কর্মীদের কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি এনে দাঁড় করানোর জন্য হাইকমান্ড দায়ী। তার থেকে বেশি দায়ী রাজ্য নেতৃত্ব। মানে প্রদেশ কংগ্রেসের একশ্রেণীর নেতারা। যারা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রথম সারিতে থাকেন। শাসক দলের সঙ্গে তাদের চোরাগোপ্তা সমঝোতা আছে। এরকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।

আব্দুল মান্নানের বিস্ফোরক পত্র সর্বভারতীয় সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে দেওয়ার অর্থ মানে বঙ্গ কংগ্রেসের নেতৃত্বের বড় ফাটল প্রকাশ্যে। এই নির্বাচনে বাম ও আইএসএফ সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।

এই কংগ্রেস কি আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? নির্বাচন বলতে ২০২৬। তার আগে রাজ্যজুড়ে পুরনির্বাচনে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা যাবে, কিনা তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এছাড়াও এই প্রশ্নে অনেকরকম কঠিন তত্ত্বের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলার কংগ্রেস।

পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বের যোগ্যতা ও রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। তাহলে বাংলায় কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ওষুধ কী? কোনো ওষুধ কংগ্রেসকে আদৌ চাঙ্গা করতে পারবে বলে মনে হয় না। ২০২১ সালে এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য।

একক ক্ষমতায় ফিরে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ কী চাইবেন এরাজ্যে বাম ও কংগ্রেস শক্তিশালী হয়ে উঠুক। কারণ মমতা জানেন বিজেপির থেকে বাম ও কংগ্রেস কখনই ক্ষতিকারক নয়।

মিটিয়ে দেওয়া হোক রাজ্যের বকেয়া ৪৯১১ কোটি টাকা, নির্মলা সীতারামনকে চিঠি অমিত মিত্রের

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাম ও কংগ্রেসকে মমতা ‘ফিনিশ ফর্মুলা’ ২০১১ সাল থেকে চালিয়ে গেছে। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। প্রায় ১০ বছর কংগ্রেস এই রাজ্যে বামেদের মত লুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে।

অতএব কংগ্রেসের বাঁচবার রাস্তা ক্রমশ ক্ষীণতর হয়ে উঠছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস তার ঘর কিভাবে সামলাবে? সেটাই এখন প্রশ্ন।

সম্পর্কিত পোস্ট