৩৪ ঘন্টায় ৩৪ চমক!
কিন্তু এবার ট্রাম্পের আসার উদ্দেশ্য কি ? শুধুমাত্র আমদানি এবং রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা? নাকি তলানিতে যাওয়া মোদির জনপ্রিয়তায় ধেই দিতে আসছেন? যদিও এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী।।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের ভারত সফর।
২১ বন্দুকের সেলামি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানালেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।
এটা ঠিক সেই সময় যখন সারা বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই চলছে।
ঠিক তখনই আইজেনহাওয়ারের ৪ দিনের ভারত সফর গোটা দুনিয়াকে নড়িয়ে দিয়েছিল। দুই রাষ্ট্রনায়ককে একসঙ্গে দেখার জন্য রাস্তার ধারে অগুনতি মানুষ ভিড় জমালো।
সেই একই আয়োজনের ব্যবস্থাও করেছেন মোদি জি। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম অবধি প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করবেন।
ফোনে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন তিনি। ৫৫ লক্ষের শহরে ৭০ লক্ষ ভিড়ের আয়োজন করা হয়তো মোদিজীর জন্য মামুলি ব্যাপার।
এরপর ১৯৬৯ সালে এলেন রিচার্ড নিক্সন। ভারতীয়দের তিনি আবার পছন্দ করতেন না।
একমাত্র ইন্দিরা গান্ধী ছাড়া ভারতীয়দের মধ্যে কাউকেই তাঁর যুৎসই বলে মনে হয়নি। এমনটাই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামক একটি বইতে লিখে বসলেন গ্যারি বেস।
একইভাবে ট্রাম্প বলে বসলেন আমেরিকার সঙ্গে ভারত ঠিকমতো ব্যবহার করেনি। কিন্তু বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ওনার যুতসই বলে মনে হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ Namaste Trump : মেগা ইভেন্টের দায়িত্ব অপরিচিত সংস্থাকে কেন, প্রশ্ন কংগ্রেসের
এরপর ১৯৭৮ সালে ভারতে এলেন জিমি কার্টার। প্রায় ৫০০ জন সাংবাদিককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন কার্টার।
প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সঙ্গে দেখা করলেন। সংসদে জয়েন্ট সেশনে বক্তব্য রাখলেন তাজমহল দেখলেন।
নিজের মায়ের স্মৃতিচারণের জন্য কার্তার চলে গেলেন দিল্লির একটি গ্রামে। তখন থেকেই তার নাম হয়ে গেল কার্তেরপুরি বা কার্তারপুরি।
এরই মধ্যে ভারতে তখন নিউক্লিয়ার শক্তিতে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। ১৯৭৪ সালের নিউক্লিয়ার টেস্ট তখন সফল।
সেই সময় এনপিএফ চুক্তিতে ভারতকে সই করাতে চেয়েছিল আমেরিকা। পারেনি। নিজেদের জায়গায় অটুট থেকেছে ভারত।
এরপর দুই দশক প্রায় দুই দশক পর ভারতে এলেন প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন।
রোনাল্ড রেগন, জর্জ বুশ সিনিয়রের পর ২০০০ সালে বিল ক্লিন্টনের ভারত সফর গেম চেঞ্জার মনে করা হল। তখন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী।
শুধুমাত্র তাজমহল নয়, ৫ দিনের সফরে হায়দ্রাবাদ সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক জায়গা ঘুরলেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপা হল “Clinton fever-a delighted India has all the symptomps”.
পালা বদল। প্রধানমন্ত্রী পদে মনমোহন সিং। ২০০৬ সালে জর্জ ডব্লু বুশের ভারত সফর যেন দুই দেশের বন্ধুত্বের সরবতে আরও মিষ্টি বাড়িয়ে দিল।
আমেরিকার সঙ্গে নিউক্লিয়ার ডিল নিয়ে টানাপোড়েন দীর্ঘস্থায়ী হলেও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় ছিল অনেকে মনে করতেন চোখ বন্ধ করে মনমোহন জির পোর্টেট বুশ অনায়াসে এঁকে ফেলবেন।
এরপর একবার নয়, দু-দুবার ভারত সফরে এলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর, ভারতের পাশে আমেরিকা যে সব সময় রয়েছে সেটা জানান দিতেই ২০১০ সালে ভারতে প্রথমবার এলেন ওবামা। সেবার রীতিমতো চমকে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব।
আরও পড়ুনঃ আরএসএসকে ওয়াকওভার নয়, দেবস্থান পরিচালন কমিটিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিনিধি নিশ্চিত করবে সিপিএম
দ্বিতীয়বার যখন ওবামা জ্বরে গোটা বিশ্ব কাবু হয়ে রয়েছে। তখনই আরও একবার ভারতে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আমন্ত্রণ পাঠালেন নরেন্দ্র মোদি।
প্রথমবার মোদি সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ২০১৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে উপস্থিত হলেন ওবামা।
গুনগুন জল্পনা শুরুর আগেই মোদির সিক্সারে কুপোকাত হয়েছিল কূটনৈতিক মহল।
কিন্তু এবার ট্রাম্পের আসার উদ্দেশ্য কি ? শুধুমাত্র আমদানি এবং রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা?
নাকি তলানিতে যাওয়া মোদির জনপ্রিয়তায় ধেই দিতে আসছেন? যদিও এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে।
কারণ নিজের নির্বাচনের প্রচারও সেরে নেবেন ট্রাম্প। তাতে আদতে পাঁচিলের লাভ কি?
দুর্গন্ধ ঢাকতে পাঁচিল নয়, যমুনা যদি সাফ হত তাহলে হয়তো দিল্লির মানুষ অনেকটা রেহাই পেত।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে ৭০ লক্ষ নয়, পাঁচিলের ওপারে থাকা ৭০০ মানুষের দিক ট্রাম্প যদি ভেবে দেখেন তাহলে লাভ হয়তো কিছু মানুষেরই হবে।
পুনশ্চঃ “অতিথি দেব ভবঃ”। ৩৪ ঘন্টায় ৩৪ চমক। আনন্দ উপভোগ করুন।