Sudip Roy Barman : সুদীপ রায়বর্মনের ঘরওয়াপসিতে উজ্জীবিত কংগ্রেস, হাত মেলাতে পারে তিপ্রা মথার সঙ্গে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ হাতে ঠিক এক বছর তারপরই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের বিধানসভা ভোট নানান কারণে এবার অন্যমাত্রা পেয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলার রাজনীতির সঙ্গে ত্রিপুরাকে জড়িয়ে এক অন্য বিতর্ক শুরু হয়েছে সে রাজ্যে।
এরইমধ্যে প্রতিমুহূর্তে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ দেখা যাচ্ছে সেখানে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, একেবারে তলানিতে চলে যাওয়া কংগ্রেসের হঠাৎই উজ্জীবিত হয়ে ওঠা।
২০১৭ সালে ২৫ বছরের বাম জামানাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল সুদীপ রায়বর্মনের। তিনি অতীতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
সেইসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সমীর রঞ্জন রায়বর্মনের ছেলের পরিচয় বহন করে চলেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের বাম শাসনের অবসান ঘটাতে মনে করেছিলেন বিজেপির ছাতার তলায় আসাটা জরুরি।
সেইমতো বিপ্লব দেবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাম জামানার অবসান ঘটান সুদীপ রায়বর্মন। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই বিজেপি নিয়ে তাঁর মোহভঙ্গ হয়। বুঝতে পারেন যে বামফ্রন্টকে ঠেকাতে বিজেপিকে এনেছেন তারা আরও ভয়ঙ্কর। বিজেপি তাদের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে হাতিয়ার করে ত্রিপুরায় বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করে ফেলে।
গোয়ায় তৃণমূলের অ্যাসিড টেস্ট, উত্তরপ্রদেশে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে যোগী
সেইসঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে তাদের কোনও ভাবনা চিন্তা দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের মোহ ছেড়ে বিপ্লব দেব সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন সুদীপ রায়বর্মন। মন্ত্রিসভার বাইরে থেকে চেষ্টা করেছিলেন বিজেপিকে শোধরানোর। কিন্তু লাভ হয়নি। শেষে কংগ্রেসের ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুদীপ তাঁর হাত ধরেই আবার কংগ্রেসে ফেরেন। বড়সড় ধাক্কা খায় বিজেপি। শোনা যাচ্ছে ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পড়ে যেতে পারে বিপ্লব দেব সরকার। কারণ প্রায় জনা দশেক বিজেপি বিধায়ক কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য নাকি মানসিকভাবে প্রস্তুত।
এদিকে বছর দুই আগে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে তিপ্রা মথা নামে আদিবাসী কেন্দ্রিক একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করেন ত্রিপুরার রাজবংশের প্রভাবশালী সদস্য প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য। নতুন দল তৈরির এক বছরের মধ্যেই তিনি বড় সাফল্য পান।
আদিবাসী অধ্যুষিত এডিসি’র নির্বাচনে প্রথমবার লড়াই করেই ক্ষমতা দখল করে তিপ্রা মথা। সেই তিনি আবার কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন। সুদীপ রায়বর্মন কংগ্রেসে ফিরে আসায় জল্পনা শুরু হয়েছে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথা ও কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াই করবে।
সুদীপ রায়বর্মন বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় গত বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় কংগ্রেস শূন্য হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি এডিসি ও সে রাজ্যের পুরভোটে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছয়। কিন্তু সুদীপ রায়বর্মনের ‘ঘর ওয়াপসি’র পর উজ্জীবিত হয়েছে ত্রিপুরার কংগ্রেস সমর্থকরা।
তারা আবার দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেছে। গোটা ঘটনাক্রম থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, আগামী বছর ত্রিপুরার নির্বাচনে বাঙালি সুদীপ রায়বর্মন ও জনজাতি মুখ প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য যদি হাতে হাত মেলান তবে অনেক সমীকরণ বদলে যেতে পারে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী এক বছর ত্রিপুরায় অজস্র সমীকরণ ভাঙা-গড়ার খেলা চলবে। আর সেখানে অন্যতম মূল কারিগর হয়ে দেখা দিতে পারেন কংগ্রেসে ফিরে আসা সুদীপ রায়বর্মন।