অমলকান্তি ভাগ্যিস রোদ্দুর হয়নি!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ
“অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারত”
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কবিতার বিখ্যাত লাইন। তবে ভাগ্যিস সে রোদ্দুর হয়নি! কারণ রোদ্দুর রায়দের তো শেষ পর্যন্ত জেলেই যেতে হয়। তবে
“বোকা ছেলে পুচু পুচু কোকাকোলা খায়/
বোকাচোদা বাপ তার পয়সা জোগায়”
লিখলেও আমাকে জেলে যেতে হবে না। কারণ এ আমার লেখা কোনও লাইনই নয়। এ হল প্রখ্যাত সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যের ফ্যাতাড়ু কাব্যগ্রন্থের বিখ্যাত লাইন। শুধু তাই নয় ফ্যাতাড়ু লেখার জন্য রাষ্ট্রই পুরস্কৃত করেছিল নবারুণকে।
কিন্তু এই ‘মহান’ গণতান্ত্রিক দেশে নবারুণ যে শব্দ লেখার জন্য বাহবা পান সেই একই কথা প্রকাশ্যে বলার জন্য জেলে যেতে হয় কোনও এক রোদ্দুর রায় থুড়ি অনির্বাণ রায়কে। কী তাঁর অপরাধ?
মোক্সা দর্শনে বিশ্বাসী রোদ্দুর সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান ভিডিও করে যেমন এই সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চোখা চোখা বাক্য ব্যবহার করেন, তেমনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কথা বলেছেন। সরকার ও তথা কথিত সুশীল সমাজ বলছে রোদ্দুর নাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের শাসক দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘খিস্তি’ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কোনটা ‘খিস্তি’ আর কোনটা নয় তা নির্ধারণ করবে কে?
অন্য ভাষার কথা জানি না, কিন্তু এই আমাদের সাধের মাতৃভাষা বাংলায় তথাকথিত ‘গালিগালাজ’ যা ভদ্র সমাজ ‘খিস্তি’ বলে চিহ্নিত করে সেটা বহুল প্রচলিত, একেবারে প্যারালাল সাহিত্য ধারা আরকি। এইসব শব্দ বইয়ে লিখলে ক্ষতি নেই, আর সরকারের নির্লজ্জ নগ্নতাকে প্রকাশ্যে তুলে ধরতে ব্যবহার করলে অপরাধ?
প্রশ্নবিদ্ধ পার্থ-পরেশ ফের স্বমহিমায়, তবে কী SSC কেলেঙ্কারির কোনও মূল্য নেই সরকারের কাছে?
সরকারের ক্ষমতার অপব্যাবহার, নির্লজ্জ চাটুকারিতাকে কে কোন ভাষায় আক্রমণ করবে, সমালোচনা করবে তা সরকার বাহাদুর ঠিক করে দেবে? এর মানে তো প্রতিবাদের ভাষা নির্দিষ্ট একটি ছকে বেঁধে ফেলতে চাইছে রাষ্ট্রযন্ত্র। মানে আমি যা ইচ্ছে করে যাব, কিন্তু তুমি তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে গিয়ে কিছু বলতে পারবে না!
বাহ রে বাহঃ, এ সরকার নাকি সার্কাস!
আচ্ছা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের ক্যামেরার সামনে হাত পেতে ঘুষ নিতে দেখাটা খুব শ্লীল আচরণ, তাই তো? আপনাদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন। এর থেকে পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে? নেতা মন্ত্রীদের পুলিশকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলা, কলেজের অধ্যাপককে জগ ছুঁড়ে মারা, শাসক দলের নেতার পুলিশকে বোমা ছুঁড়ে মারতে বলা এবং তাকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর এগিয়ে এসে বলা, ‘ওর মাথায় অক্সিজেন কম যায়’ এগুলো খুব শালীন আচরণ? ভালো কথা?
এই সমস্ত কেলোর কীর্তির জন্য ধীরে ধীরে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গাজোয়ারিকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অনৈতিক আচরণকে টিকে থাকার সঠিক পথ হিসেবে ধরে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে হুহু করে।
একটু প্রতিটা পাড়ায়, গ্রামে কান পাতুন, তুলনায় অল্পবয়সীদের মুখে শুনতে পাবেন ‘এখন টিকে থাকতে হলে একটু চমকাতে হবে’! পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে অমুক টিচারকে একটু ‘সাইজ’ করে দিতে হবে! হরবখত এইসব কথা শুনতে পাবেন। এগুলো কাদের জন্য হচ্ছে? খুব ঠিক হচ্ছে? এর জন্য কী শাস্তি হয়েছে?
রোদ্দুর রায় এই বিষয়গুলোকেই তো আক্রমণ করছিলেন। এমন তো নয় যে তিনি কোন হিব্রু বা চৈনিক ভাষায় কথা বলছিলেন। বাংলা সাহিত্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কতগুলো শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে। সেই ভাষাকে বাঙালির বাবু সমাজ পছন্দ করে না। কিন্তু বাবু সমাজের ভাষাটাই বাংলা ভাষা সেটা কে ঠিক করে দিল?
আচ্ছা বেশ ধরা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে ওইসব কথা বলে ঠিক করেননি রোদ্দুর। এখানেই প্রশ্ন, রোদ্দুরকে কেন আরও আগে গ্রেফতার করা হল না? তিনি যখন রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে এই একই ধরণের শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন তখন তো কই কিছু হয়নি। অথচ মুখ্যমন্ত্রীকে বলতেই তিনি গ্রেফতার হয়ে গেলেন! তবে কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপরে ভাবছেন! চমৎকার।
এসবের উত্তর কই? অবশ্য জানা কথা এর উত্তর পাওয়া যাবে না। আসলে যে যখন ক্ষমতায় থাকে সেই বাবু-বিবি, রাজা-মহারাজাদের গাজোয়ারি চলতেই থাকে সর্বত্র। এই বাংলা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ধসে পড়া, কর্কট রোগে আক্রান্ত সিস্টেমটাকে আক্রমণ করার জন্য, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রেফতার হতে হয় রোদ্দুর রায়কে। আসলে হাল্লা রাজার দেশে সবই সম্ভব!