উপনির্বাচনে পদ্ম সংকট
The Quiry News Desk: রাজ্যজুড়ে একাধিক পৈশাচিক ঘটনা বারবার প্রশ্ন তুলছে শাসক দলের দিকেই। প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে শহরে। এমত অবস্থাতেও ভিত শক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি৷ সাধারণ মানুষের ক্ষোভে রাজনৈতিক ময়দানে পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে বারবার সাংগঠনিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। যদি এই অবস্থা নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালের নির্বাচনের সময় ২০০ পারের গল্প শুনিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি৷ কিন্তু বিজেপির জয়ের রথ ৭৭ এ আটকে যায়। পরে বিধায়কদের ক্রমাগত দলবদলে সংখ্যাটা ৭০ এ গিয়ে ঠেকে৷ ২৪ এর নির্বাচনেও অনেকটা ফায়দা তোলার চেষ্টা করলেও আসন সংখ্যা এক ডজল৷
কারণ, একটাই সাংগঠনিক দূর্বলতা৷ বিধানসভা নির্বাচনের পর বহু বিজেপি কর্মী উঁচু তলার কর্মীদের না পেয়ে তৃণমূলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আবার বহু পুরাতন কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি থেকে নিজেদের অব্যহতি দেবেন৷ কারণ, একটাই ভোটের পর দলের কোনও নেতাকেই দেখতে পাওয়া যায় না। তাতেই ক্ষোভ। আসন্ন ৬ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও একই ছবি ধরা পড়তে চলেছে?
আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। মেদিনীপুর, হাড়োয়া, তালড্যাংরা, নৈহাটি, সিতাই এবং মাদারিহাট আসনে উপনির্বাচন হবে। ২৩ নভেম্বর ফল ঘোষণা। এর মধ্যে মেদিনীপুর আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ, ২০২১ সালে বিজেপির হাত থেকে এই আসনটি ছিনিয়ে এনেছিলেন জুন মালিয়া। শোনা যায়, দিলীপ ও শুভেন্দু জুটির অঙ্কে এই আসনের হাল একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আসনটি ছিনিয়ে এনেছেন জুন৷ পরে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রেও জয়ী। তাই মেদিনীপুরের পুনরুদ্ধারে নামতে চায় বিজেপি। হাড়োয়া ও তালড্যাংরা দুটি আসনই তৃণমূলের ছিল। দুটি আসন থেকে সদ্য হাজি নুরুল ইসলাম ও অরূপ চক্রবর্তী জয়লাভ করে সাংসদ পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ওই দুটি আসনই পজিটিভ ধরছে তৃণমূল৷ নৈহাটি ও সিতাই কেন্দ্র দুটিও পূর্বতন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়ার। এই দুটি আসনও তৃণমূলের জায়গা পোক্ত। তবে দেখার রয়েছে মাদারিহাট।
চাবাগান অধ্যুষিত এলাকা মাদারিহাট। কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় ধরে বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। বিধানসভায় শুভেন্দুর ডেপুটি হলেও কেন্দ্রের নেতাদের কাছে প্রিয় তিনি। সেই মনোজ টিগ্গা আলিপুরের সাংসদ টিকিটে এখন সংসদের সদস্য। তার আসনটি বিজেপি ধরে রাখতে পারবে কী? এই পরীক্ষা শুধুমাত্র প্রার্থী রাহুল লোহারের দায়িত্ব নয়। দায়িত্ব মনোজেরও। কারণ, গোর্খাদের সমর্থনে একজন নির্দল প্রার্থী হওয়ার কারণে ভোট কাটার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই মাদারিহাটে মনোজের মতো স্বচ্ছ ইমেজকে আরও একবার নির্বাচনের ময়দানে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি।
এই উপনির্বাচনে বঙ্গ বিজেপি প্রথমসারির নেতাদের প্রচারে নামাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী, সুভাষ সরকার, সৌমেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিংদের নামানো হবে। যদিও এই উপনির্বাচনে একটি আসনেও কোনও হেভিওয়াটকে প্রার্থী করা হয়নি। বরং স্থানীয় নেতাদেরকেই গুরুত্ব দিয়েছে দল। আবার দলের পুরনো কর্মীরাও এখনও নামেনি। সর্বত্রই রয়েছে আদি–নব্যের দ্বন্দ্ব। এই অবস্থা থেকে নিজেদের মাটি কতটা ফিরে পায় বিজেপি? এখন সেটাই দেখার৷