নেই সরকারী সহযোগীতা, মহুল বিক্রি করে দিন গুজরান কয়েকশো পরিবারের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম বনজ সম্পদ মহুল বা মোল। স্থানীয়রা অবশ্য মোল বলেই জানে।

মোল সংগ্রহ করে এই জেলার বিষ্ণুপুর, জয়পুর, রায়পুর, সারেঙ্গা সহ সোনামুখীর কয়েকশো পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জীবনযাপন করেন।

সাতসকালে সোনামুখীর জঙ্গলঘেড়া মাচডোবা, মৌরাশলি, শিবেরবান্দ এলাকায় দেখা পাওয়া গেলো লক্ষ্মণ রায় ও গীতা সেনাপতির সঙ্গে। একটা ঝুড়ি নিয়ে মহুল গাছের তলায় একমনে মহুল সংগ্রহে ব্যাস্থ।

জঙ্গলমহলে চাষাবাদ কম হয়। একশ দিনের কাজও সেভাবে হচ্ছে না। তাই সংসার চালানোর জন্য এইসময় দেড়মাস মহুল সংগ্রহ করে অর্থ উপার্জন করেন। এই মহুল তারা বাইরে থেকে আসা পাইকারিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। বাড়িতে খাবার হিসাবেও ব্যবহার করে মহুল।

ইদানিং বাড়ছে চোড়া শিকারী তাই কমতে শুরু করেছে মহুল গাছের সংখ্যা। সাধারণত এই গাছ কুড়ি মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। হলুদ রঙের এই ফলে প্রচুর পরিমানে শর্করা, খনিজদ্রব্য, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। গ্রামবাংলার মানুষ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার রান্না করার পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করে থাকেন তারা।

আরও  পড়ুনঃ জ্বলছে শুশুনিয়া পাহাড়ের বিস্তৃত জঙ্গল, সঙ্কটের মুখে জীব বৈচিত্র

মহুয়া তেল থেকে চামড়ার বিভিন্ন রোগের ঔষধও তৈরী হয়। বাঁকুড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে সাম্প্রতিক কালে বাঘের আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। বেড়েছে হাতির দৌরাত্ম্য। কিন্তু তা সত্যেও পেটের তাগিদে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে মহুল সংগ্রহ করতে হয় গীতা সেনাপতি, লক্ষ্মণ রায়ের মত দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোকে।

মহুল সংগ্রহ করতে না পারলে টান পড়বে দৈনন্দিন সংসার চালানোর খরচে। এত কষ্ট করে মহুল জোগাড় করলেও তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে এই মহুলের চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

জঙ্গলমহলের এই মানুষগুলোর দাবি সরকার কেন্দুপাতা সহ অন্যান্য বনজ সম্পদের নির্ধারিত মূল্য যেমন ঠিক করছেন,  সেইভাবে মহুলের ক্ষেত্রেও যদি এই প্রথা গ্রহন করা হয় তাহলে তারা আশার আলো দেখতে পাবেন।

কিন্তু এবছর লকডাউনের জেরে আরো বেশি করে সমস্যায় পড়তে হয়েছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের। এই মুহূর্তে বাইরে থেকে পাইকারি আসছে না। ফলে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে আরো বেশি।

গীতা সেনাপতি, লক্ষ্মণ রায়রা বলেন, লকডাউনের জেরে বাইরে থেকে পাইকারিরা না আসায় মহুয়া ফল বিক্রি করতে পারছি না ফলে, আর্থিকভাবে সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে।

সারাবছর এই দেড় দুমাস মহুয়া ফল বিক্রি করে দুটো বাড়তি পয়সা রোজগার হয় কিন্তু এবছর তা আর হচ্ছে না। তাদের এইরকম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সরকারি সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

সম্পর্কিত পোস্ট