করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে ভূমিকায় সরব বাম-কং-বিজেপি, ড্যামেজ কন্ট্রোলে আসরে রাজীব

বিজেপির অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে রাজ্যের হয়ে ব্যাটন ধরেছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সহেলী চক্রবর্তী

লকডাউন পর্ব ৩ শেষ হতে বাকী মাত্র ১০ দিন। এরপর লকাডাউন আরও বাড়বে কি না তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে গ্রিন জোন গুলিতে লকডাউনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শিথিলতা দেওয়া হয়েছে।

তবে বেশ কয়েকটি জেলায় লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দোকান-বাজার থেকে শুরু করে যত্রতত্র ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে আমজনতাকে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে নিয়ে ফের বুধবার রাজ্যকে রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা।

চিঠিতে তিনি জানান,পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুহার ১৩.০২ শতাংশ। যা দেশের যে কোন রাজ্যের তুলনায় বেশি। এর থেকে স্পষ্ট রাজ্যে পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষা হচ্ছেনা।

এরপরই ফের করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সরাসরি তিনি অভিযোগ করে জানান, রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ তৃণমূল সরকার। এমনকি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও গোপন করছে সরকার।

তিনি জানান, করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কাজকর্মের উপর ভিত্তি করে রাজ্যবাসীর অনলাইন মতামতের ভিত্তিতে সমীক্ষা চালাবে বিজেপি।

আরও পড়ুন- করোনার কবলে এবার পুলিশকর্মী ও ব্যাঙ্ককর্মী, একনজরে ৭ জেলার করোনা আপডেট

তাঁর আরও অভিযোগ, এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে রাজ্য সরকার আদতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে তা যথাযথ না। বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে। তাই রাজ্যের মানুষ এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন তা জানতেই এই অনলাইন সমীক্ষা করা হবে।

তিনি আরও জানান সমীক্ষার ফলাফল সরাসরি কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি তুলে ধরা হবে সংবাদমাধ্যমের সামনেও।

বিজেপির অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে রাজ্যের হয়ে ব্যাটন ধরেছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

পাশাপাশি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি দলের তরফে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলেও রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন।

৬ জন বিএসএফ জওয়ানের করোনা সংক্রমিত হওয়ার প্রসঙ্গে রাজীব বাবু বলেন কেন্দ্রীয় দলকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করা উচিত ছিল। বলাই বাহুল্য এই একই দাবি করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও।

অন্যদিকে, বিজেপির সুরে সুর মিলিয়েছে সিপিএমও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, রাজ্য সরকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথার্থ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ যথার্থ কিট থাকা সত্ত্বেও দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এ রাজ্যে।

শাসকদলের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের নজরদারিও ঠিকমত হচ্ছে না। শুধু তাই নয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও রাজ্য সরকার গঠিত অডিট কমিটি বেশ কিছু মৃত্যুর কারণ কোমর্বিডিটি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এখানেই সরকারের কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কলকাতায় কনটেন্টমেন্ট অঞ্চলের সংখ্যা কমেছে ১৫টি, বেড়েছে উত্তর ২৪ পরগণা ও হাওড়ায়

এখানেই শেষ নয় রেশনে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী  ঘোষণা অনুযায়ী যথাযথ যোগান অব্যাহত রাখার জন্য তিনি রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানান এদিন।

তাঁর আরও দাবি অবিলম্বে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক ও রাজ্যবাসীদের ফেরানোর ব্যবস্থাও করতে হবে সরকারকে। উল্লেখ্য, লকডাউনের জেরে ভিন রাজ্যে গিয়ে আটকে থাকা বাংলার বাকি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে বারংবার রাজ্যের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তিনি প্রতিনিয়ত এই বিষয় নিয়ে যোগাযোগ রাখছেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের সঙ্গেও। তবে বৃহস্পতিবার কার্যত অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভিন রাজ্যে গিয়ে আটকে থাকা বাংলার বাকি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সরকার আর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তাঁর অভিযোগ  রাজস্থান ও কেরল থেকে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে ফিরিয়ে আনা হলেও অন্য রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের বিষয়ে রাজ্য সরকার উদাসীন। এমনকি রাজ্যের তরফে নতুন কোন ট্রেন চেয়ে রেল মন্ত্রকের কাছে এখনও আবেদন জমা করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৭ জনের মৃত্যু, মৃত বেড়ে ৭২

প্রসঙ্গত, এই মহামারী পরিস্থিত মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও রেশন বন্টন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে, প্রচেষ্টা প্রকল্প সব কিছুতেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

অন্যদিকে রাজ্যে ক্রমশই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা। প্রতিদিনই রাজ্যে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আগামী দিনে কোন দিকে যাবে রাজ্য ও দেশের পরিস্থিতি আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে আমজনতা।

সম্পর্কিত পোস্ট