করোনায় ত্রস্ত গোটা বিশ্বঃ দুর্ভিক্ষের মুখে আফ্রিকার ৫ কোটি মানুষ, উদ্বেগে রাষ্ট্রসঙ্ঘ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্ব জুড়ে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। যার ফলে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ।
বেহাল অর্থনীতির কুপ্রভাব ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করেছে আফ্রিকা সহ বিশ্বের বেশ কিছু স্বল্পোন্নত দেশে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারাত্মক রকমের দুর্ভিক্ষে পড়তে পারেন। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক বা এএফডিবি।
এএফডিবির তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম আয়ের মধ্যে রয়েছ। আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
কনটেনমেন্ট জোনে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান দেবে চলমান বাজার
সংবাদ সংস্থা এএফপির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ওশেনিয়া অঞ্চলের পরেই আফ্রিকা মহাদেশ হচ্ছে করোনা ভাইরাসের মহামারিতে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। এই মহাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচ ৫ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। আর এতেই আফ্রিকা মহাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং মানুষের কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
করোনার মাঝেই ফসলের ওপর পঙ্গপালের আক্রমণ তীব্র সমস্যা তৈরী করেছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই এসব দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ ব্যাপকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকির মধ্যে ছিল।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরিচালক ডমিনিক বারজিওন বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা জনিত দিক থেকে কিছু জায়গা দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভাবের মাত্রাটা এমনিতেই অনেক বেশি। এই সময়ে আরেকটি আঘাত তারা সহ্য করতে পারবে না।এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ঠ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যখন আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ। আর এতে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে হিংসা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।
এবার যাতে সেই অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডমিনিক।
তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিকতারই প্রশ্ন নয়। এটি বিশ্বের নিরাপত্তারও প্রশ্ন। বিশ্বের কিছু দেশের পরিস্থিতি যেন খাদ্যাভাবে হিংসাত্মক অবস্থা তৈরি না করে তা নিশ্চিত করতে হবে ।’
ডমিনিক বারজিওনের এই আশঙ্কাকে সমর্থন জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সিনিয়র অপারেশনস ডিরেক্টর আমির দাউদি।
আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১০ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সংস্থাটি।
ডমিনিকের মতো আমির দাউদিও মনে করেন, ২০০৭-০৮ সালের মতো পরিস্থিতি ফের দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্বকে একত্রিত হতে হবে। বিশ্বে অসহায় দেশগুলোকে সমর্থন দিতে পারলে খাদ্য সংকট ঠেকানো সম্ভব হবে।
দাউদি আরও বলেন, ‘সংকটকে কেন্দ্র করে এখনও খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। আন্তর্জাতিক সমন্বয়ই পারে খাদ্যের দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে। যেসব এলাকায় খাদ্যাভাব আছে সেখানে খাবার পৌঁছে দিতে। সে লক্ষ্য পূরণে দেশগুলোকেই সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।’